রাজধানীর সঙ্গে বরগুনার দূরপাল্লার বাস ও লঞ্চ যোগাযোগ বন্ধ। এ সুযোগে দ্বিগুণের বেশি ভাড়ায় বরগুনা থেকে নিয়মিত মাইক্রোবাসের যাত্রী পরিবহন করা হয়।
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বরগুনার বিভিন্ন স্থান থেকে রাজধানীতে যাত্রী পরিবহন করছেন মাইক্রো চালকেরা।
এদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া কথা জানিয়েছে বরগুনার জেলা প্রশাসন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লকডাউন শুরু হওয়ার পরও বরগুনার টাউনহল, বেতাগীর কাউনিয়া, বামনার গাজীরপুল আমতলীর একে স্কুলসড়ক ও পাথরঘাটার মাছেরখাল এলাকা থেকে ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করছেন মাইক্রোবাস চালকেরা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের পোস্ট দিয়ে এবং ঢাকাগামী পরিবহনগুলোর স্থানীয় কাউন্টার ম্যানেজারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মাইক্রো চালকেরা যাত্রী জোগাড় করেন।
কাউন্টারের ম্যানেজাররা নির্দিষ্ট কমিশনের বিনিময়ে মাইক্রোবাসে যাত্রী তুলে দেন। যাত্রী প্রতি দেড় থেকে দুই হাজার টাকা ভাড়া আদায় করা হয়। বরগুনার টাউনহল এলাকার শহীদ মিনারের পেছনে দিনে মাইক্রো রাখা থাকে। সন্ধ্যার পর যাত্রী তুলে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করে।
যাত্রী চেয়ে ফেসবুকে দেয়া পোস্ট।
বরগুনা থেকে ঢাকা প্রতিটি সিটের ভাড়া নেয়া দুই হাজার টাকা। বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যার পর বরগুনার টাউনহল সড়কের বেশ কয়েকটি কাউন্টার দড়জা ভেতর থেকে বন্ধ রেখে কাউন্টার ম্যানেজারদের বসে থাকতে দেখা গেছে। উকিলপট্টি (টাউনহল) এলাকায় সোনার বাংলা নামের একটি বাসের কাউন্টারে এ সময় যাত্রী হয়ে প্রতিবেদক নক করতেই ভেতর থেকে দড়জা খুলে এক ব্যক্তি ‘কোথায় যাবেন জানতে’ চান।
নিজাম নামের ওই ব্যক্তি সোনার বাংলা কাউন্টারের ম্যানেজার। তিনি বলেন, ‘বাস বন্ধ। মাইক্রোতে যেতে হলে দুই হাজার টাকা লাগবে। একইভাবে রাজধানীগামী বেশ কিছু কাউন্টারের এভাবে ম্যানেজাররা বসে থাকেন। যাত্রী এলেই এরা মাইক্রোতে সিটের ব্যবস্থা করে দেন।
নিজামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মানুষ জরুরি দরকারে যেতে চাইলে তারা মাইক্রোবাসের ব্যবস্থা করে দেন। এর বিনিময়ে মাইক্রো চালকরা খুশি হয়ে যা দেন, তাই তারা নিয়ে থাকেন।
এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করে মাইক্রোচালকেরা যাত্রী জোগাড় করেন। বেশ কয়েকজন ব্যক্তিকে বরগুনার বেতাগী উপজেলার কাউনিয়া থেকে ঢাকা ও বামনা থেকে ঢাকা যাতায়তের বিজ্ঞাপন দিতে দেখা যায়।
মশিউর রহমান শান্ত নামের এক ব্যক্তিকে লকডাউন শুরুর পর থেকে নিয়মিত ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে যাত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে দেখা গেছে। সেখানে তার ফোন নম্বর দেয়া আছে।
ঠিক একইভাবে গোলাম সরওয়ার খান নামের বেগাতী উপজেলার কাউনিয়া এলাকার একজন ব্যক্তিও কাউনিয়া টু রাইনখোলা মাইক্রোবাস সার্ভিস দেয়া হয় লিখে পোস্ট দিয়ে যাত্রী জোগাড় করছেন।
শান্তর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমুয়া (বামনা) গাজীর পুল থেকে মাইক্রোতে তারা ঢাকায় যাত্রী পরিবহন করেন। যাত্রী প্রতি ১ হাজার ৫০০ টাকা করে ভাড়া নেন।
তিনি বলেন, শুধু জরুরি দরকারেই কেবল যাত্রীদের নিয়ে থাকেন।
লকডাউনে যাত্রী পরিবহন করা বিধিসম্মত কিনা জানতে চাইলে তিনি ফোন কেটে দেন। সরওয়ার খানের ফোন নম্বরে বেশ কয়েকবার কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
বরগুনা জেলা মাইক্রোবাস চালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্মল চন্দ্র শীল জানান, লকডাউন শুরুর পর থেকে আমাদের কোনো মাইক্রো চলাচল করছে না। যারা যাত্রী পরিবহন করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেয়া হোক।
বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, বিষয়টি তিনি খোঁজ নেবেন। যদি কেউ লকডাউন অমান্য করে মাইক্রোবাসে যাত্রী নিয়ে চলাচল করে তবে তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেয়া হবে।