ঈদুল আজহা আসতে আর বেশি দিন বাকি নেই। তবে ঈদকে ঘিরে দিনাজপুরের কামার পাড়াগুলোতে নেই কোনো ধরনের কর্মব্যস্ততা। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের দেয়া কঠোর লকডাউনের মধ্যে ক্রেতা পাওয়া নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন কামাররা।
লকডাউনে আয় কমে গেলেও সরকারি সহায়তা বদলে নিজেদের তৈরি জিনিস বিক্রির জন্য দোকান খোলার অনুমতি চাইছেন তারা।
দিনাজপুরে কামারদের হাতিয়ার বানানোর আয়োজন শুরু হতো ঈদের একমাস আগে থেকে। কেনাবেচা চলত ঈদের চাঁদ রাতের দিন পর্যন্ত। এ সময় কামারশালার পাশ দিয়ে গেলেই শোনা যেত ঠুকঠাক আর লোহা গরম করা ভাতির ভোঁ ভোঁ শব্দ।
১ জুলাই থেকে কঠোর লকডাউন ঘোষণার পর এবারের চিত্রটা একটু ভিন্ন।
দিনাজপুর শহরের বালুবাড়ী মহারাজার মোড়ে অবস্থিত জেলার সবচেয়ে বড় কামারপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, কামারশালার সামনে একসময় যেখানে বোঝাই করে পসরা সাজানো থাকতো ছুরি, দা, বটি, চাপাতিসহ নানা হাতিয়ার, সেখানে হাতেগোনা কয়েকটি দা-বটি।
কামার লিটন ইসলাম বলেন, ‘কোরবানিকে ঘিরে আমাদের ব্যবসা শুরু হয় এক মাস আগেই। এসময় প্রতিদিনই বিক্রি হয় দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। পরে আস্তে আস্তে বিক্রি বাড়ে। দিনে সর্বোচ্চ পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়, যা চলে চাঁদ রাত পর্যন্ত।
‘এবছর ঈদের আর ২৪ থেকে ২৫ দিন বাকি। এখনও কাজ শুরু করার সাহস পাচ্ছি না। চিন্তায় আছি, মানুষ কোরবানি দিবে কি না। মোড়ে মোড়ে বাঁশ লাগানো, কাস্টমার আসতে পারে না। বেচাকেনা করব কার কাছে?'
লিটন বলেন, ‘এছাড়া সাহস না পাওয়ার আরেকটি কারণ জিনিসপত্রের দাম বেশি। তবে আল্লাহর ওপর ভরসা, ২০ দিন সময় পেলেও ব্যবসাটা গুছিয়ে নিতে পারব।‘
সরকারি কোনো সহায়তার বদলে দোকান খোলা রাখতে পারাটাই বেশি জরুরি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দোকান খোলার ও মালামাল বিক্রির অনুমতির জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করছি।‘
কামার আব্দুস সালাম বলেন, ‘ঈদের আর বেশি সময় নেই। এ বছরও ব্যবসার সময়টাতেই লকডাউন। এ বছর আতঙ্কে এখনও একটা জবাই করার চাকু পর্যন্ত বানাইনি।
‘শুনতেছি এখনকার ভাইরাস আরও বেশি শক্তিশালী। কী করে হবে ব্যবসা বলেন? শহরের দোকানপাট সবই বন্ধ। যেখান থেকে লোহা কিনব ওই দোকনটাও বন্ধ। মানুষের মাঝে ভাইরাস নিয়ে যে ভয়ভীতি কাজ করছে আমাদের দোকানে আসবে কিনা সেটাও সন্দেহ।‘
তিনি বলেন, ‘গত বছর লকডাউন ছিল তবুও একমাসে ব্যবসা করছি প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার। এ বছর সেটা হবে বলে মনে হয় না।‘
কামারপাড়ায় হাতিয়ারের বাজার যাচাই করতে এসেছেন তাকিবুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘আমি বাজারে দাম শুনতে এসেছি। যদিও এবছর ভাইদের সাথে পরামর্শ হয়নি কুরবানি আদৌও দেব কি না। তবুও ভাবলাম হাতিয়ারের বাজারটা একটু জেনে নিই। এসে দেখছি হাতিয়ারের দাম অনেক বেশি। দাম বেশি থাকলে কী হবে, বাজারে বিক্রি তো নেই বললেই চলে।‘
হায়দার আলী নামের আরেক ক্রেতা বলেন, ‘কোরবানির আগে এই দোকানগুলোতে যে ভিড় থাকে, সেই তুলনায় এবার ভিড় নেই বললেই চলে। এছাড়া প্রতিটা জিনিসের দামও খুব চড়া। কাজের তেমন একটা তৎপরতা নেই। দাম বেশি আর তারা যেহেতু হাতিয়ার সেভাবে বানাচ্ছে না, তাই একটা লোহা কিনে এনে অর্ডার দিয়ে বানায় নিলাম। বাজারে তো লোহার দামও বেশি।‘
বেচাকেনা বন্ধ থাকার সময়ে কামারদের সরকারি সহায়তা দেয়ার বিষয়ে দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকী বলেন, ‘আমাদের প্রশাসনের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণ রয়েছে। যদি কেউ চায় তাহলে তাকে তাৎক্ষণিক ত্রাণ দেয়া হবে।‘