রংপুর বিভাগে গত কয়েকদিন ধরেই বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) নেয়া প্রয়োজন এমন রোগী।
তবে বিভাগের করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে কোনো আইসিইউ শয্যা খালি নেই। স্বজনরা আইসিইউ শয্যার জন্য ছোটাছুটি করেও না পেয়ে মৃত্যুর বিষয়টি ছেড়ে দিচ্ছে নিয়তির উপর।
এর মধ্যে শুক্রবার সকালে রংপুর করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের সামনে ঝুঁলিয়ে দেয়া হয় সাইনবোর্ড। তাতে লেখা হয়, ‘আইসিইউতে কোনো বেড ফাঁকা নাই’।
বর্তমানে ১০০ শয্যার এই হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা রয়েছে ১০টি। তবে ভেন্টিলেটর সুবিধা আছে আটটিতে। এখানে ভর্তি ৮৩ রোগীর মধ্যে আরও ২০ জনের আইসিইউ নেয়া প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
অন্যদিকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা রয়েছে মাত্র ২০টি। সবমিলিয়ে জেলায় আইসিইউ শয্যা রয়েছে ৩০টি।
এ ছাড়া দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একটি অংশে ৮টি আইসিইউ শয্যা নিয়ে করোনা চিকিৎসা শুরু হয়। পরে আরও ৩০টি শয্যা বাড়ানোর কথা থাকলে। তবে তা আর হয়নি; সব মিলে এই হাসপাতালে আইসিইউ শয্যায় আছে ১৮টি।
রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী, বিভাগে সব থেকে বেশি সংক্রমণ হচ্ছে দিনাজপুরে। দ্বিতীয় অবস্থানে রংপুর আর তৃতীয় ঠাকুরগাঁও।
কিন্তু বিভাগের আট জেলায় আইসিইউ সুবিধা আছে শুধু এই দুই হাসপাতালে। এতে প্রতিনিয়ত এখানে বাড়ছে চাপ।
রংপুরে করোনা চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, রংপুরে করোনা চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতালে গত বছরের এপ্রিলে ৫০টি আইসিইউ শয্যা স্থাপনের বরাদ্দ দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে এক বছর পেরিয়ে গেলেও শুরুর ১০টি শয্যায় রয়ে গেছে। মাঝে আরও ১০টি শয্যা বাড়ানোর কথা থাকলেও আর বাড়েনি।
দিনাজপুরের সিভিল সার্জন আব্দুল কুদ্দুস নিউজবাংলাকে জানান, করোনা চিকিৎসায় দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একটি অংশ ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ১০০ শয্যার হাসপাতালটিতে রয়েছে ৮টি আইসিইউ শয্যা। পুরো হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা আছে ১৮টি।
পুরো বিভাগে করোনা চিকিৎসায় মাত্র ১৮টি আইসিইউ শয্যা থাকায় গুরুতর রোগীদের নিয়ে মারাত্মক সংকটে পড়েছেন স্বজনরা। মুমূর্ষু রোগী নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতাল দৌঁড়ালেও মিলছে না আইসিইউ। নিরুপায় হয়ে তাদের চিকিৎসা নিতে হচ্ছে সাধারণ শয্যায়।
রংপুর মহানগরীর বাসিন্দা সাফিউল ইসলাম বলেন, ‘আমার ভাই সুমন করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। তখন তার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। তাকে দেখেই করোনার চিকিৎসা ও অক্সিজেন দেয়া হয়।
‘পরবর্তী চিকিৎসকরা আইসিইউতে নিতে বলেন। পরে অনেক অনুরোধ করে দুই দিন পর একটি বেড পেয়েছিলাম। ওই বেড না পেলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারত।’
লালমনিরহাটের মিশন মোড়ের শাজাহান সাজু বলেন, ‘আমার বড় ভাই হারুন অর রশীদ করোনায় আক্রান্ত হয়ে রংপুর করোনা ডেডিকেটেট হাসপাতালে ভর্তি হন। পরবর্তীতে অবস্থা খারাপ হলে তাকে জরুরি ভিত্তিতে আইসিইউতে নেয়ার প্রয়োজন পরে। কিন্তু কোনোভাবেই তা পাওয়া যাচ্ছিল না।
‘পরে সেখানে চিকিৎসাধীন এক রোগীর মৃত্যু হলে সেখানে আমার ভাইকে স্থানান্তর করেন চিকিৎসকরা। ফলে দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাই আমরা।’
একজনের মৃত্যুর পর আইসিইউ শয্যা পাওয়া দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রংপুর স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলার কোনো হাসপাতালে এখন পর্যন্ত আইসিইউ শয্যা নেই। স্থাপনের কোনো পরিকল্পনাও হয়নি। এই জেলাগুলোর মুমূর্ষু রোগীদের ভরসা এখন রংপুর আর দিনাজপুরের হাসপাতাল।
রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালকের কার্যালয় থেকে জানা গেছে, রংপুর বিভাগে করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। সংক্রমণের হার ৪০ শতাংশের উপরে।
শুক্রবার পর্যন্ত এ বিভাগে ৫৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনাক্তের সংখ্যা ২৭ হাজার ১৬০। এই অবস্থায় প্রতিদিনই নতুন নতুন রোগীকে আইসিইউতে নেয়ার প্রয়োজন দেখা দিচ্ছে।
রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আবু মোহাম্মদ জাকিরুল ইসলাম বলেন, ‘করোনা আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে। অনেক রোগী হাসপাতালগুলোতে আসছেন। আইসিইউ বেডের সংকটের কারণে কোথাও কোথাও চিকিৎসা দিতে সমস্যা হচ্ছে।
‘আমরা আইসিইউ বেড সংখ্যা বাড়ানোসহ করোনা রোগীদের চিকিৎসার সব সুযোগ সুবিধার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’