বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

থানায় ক্লাস, শিক্ষার্থী পুলিশ

  •    
  • ২ জুলাই, ২০২১ ১৬:৫৫

‘মাঠপর্যায়ে পুলিশ সম্পর্কে মানুষের নেতিবাচক ধারণা থাকলেও তারা জানে না এই পেশার সীমাবদ্ধতা। এ জন্যই ব্যবহারিক ক্লাস নেয়া। এই ক্লাস করে একজন পুলিশ সদস্য শুধু সাধারণ মানুষ নয়, নিজের পরিবারের সঙ্গেও কীভাবে ভালো আচরণ করবে, সেটিও শিখতে পারবে। আমি মনে করি, এই ব্যবহারিক ক্লাস পুলিশ-জনতার সম্পর্কে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।’

ফটকে মানুষের জটলা। একটু ভেতরে যেতেই দেখা যায়, খোলা মাঠে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষক। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে সেই ক্লাস। মনোযোগসহকারে ক্লাস করছেন শিক্ষার্থীরা। তবে এই ক্লাস কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নয়, চলছে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানায়।

পুলিশের বিরুদ্ধে প্রায়ই পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় দুর্ব্যবহার এবং অপেশাদার আচরণের অভিযোগ ওঠে। পুলিশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরির প্রধান কারণ এটি। সাধারণ মানুষের নেতিবাচক ধারণা পাল্টাতে প্রায়োগিক (প্র্যাকটিকাল) ক্লাসের মাধ্যমে আচরণ ও উন্নত পেশাদারি ব্যবহারের দীক্ষা দিচ্ছেন চট্টগ্রামের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. আনোয়ার হোসেন শামীম।

চলতি বছরের মে থেকে নিজ উদ্যোগে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া মডেল থানা, রাউজান থানা, জেলা স্পেশাল ব্রাঞ্চ এবং ট্রাফিক বিভাগের পুলিশ সদস্যদের দীক্ষা দিচ্ছেন তিনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে যোগ দেয়ার আগে তিন বছর খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজে শিক্ষকতা করেছেন তিনি।

এএসপি আনোয়ার হোসেন জানান, তিনটি পর্যায়ে বিন্যস্ত করা হয়েছে এ ক্লাস কার্যক্রম। এগুলো হলো জ্ঞান অন্বেষা, ব্যবহারিক পাঠ এবং প্রয়োগ অভীক্ষা।

তিনি বলেন, ‘প্রথম স্তর জ্ঞান অন্বেষা অনেকটাই শ্রেণিকক্ষভিত্তিক। বই, কাগজ-কলম, হোয়াইট বোর্ড, মার্কার ইত্যাদি ব্যবহার করে পুলিশ সদস্যদের বাংলাদেশের সংবিধানে উল্লিখিত মৌলিক অধিকার ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিসহ গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদগুলো পড়ানো হয়। পাশাপাশি মানবাধিকার, বিভিন্ন পরিস্থিতিতে জনগণের সঙ্গে পুলিশের আচরণ এবং পুলিশ-জনতা সম্পর্ক বিষয়ে এই স্তরে পাঠদান করা হয়। এ ছাড়া ভালো আচরণের গুরুত্ব এবং এর অনুপস্থিতিতে নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কেও শেখানো হয় পুলিশ সদস্যদের। পাঠদানের ধারাবাহিকতা নিশ্চিতে প্রণয়ন করেছেন সুনির্দিষ্ট সিলেবাসও।

‘দ্বিতীয় স্তরের কার্যক্রমে থানার সব পুলিশ সদস্যকে কয়েকটি গ্রুপে ভাগ করা হয়। কাউকে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য, কাউকে আবার থানায় আসা সাধারণ মানুষ সাজিয়ে দেয়া হয় সু-আচরণের ব্যবহারিক পাঠ। ডামি ডিউটি অফিসার ও নারী-শিশু ডেস্ক, রাস্তার চেকপোস্ট ইত্যাদি বসিয়ে তাদের দৈনন্দিন কাজগুলো জনবান্ধব উপায়ে সম্পন্নের উপায় হাতে-কলমে শেখানো হয় এই ক্লাসে। এ ছাড়া থাকে যানবাহন ও গৃহতল্লাশি, পাসপোর্ট ও চাকরির ভেরিফিকেশন, নৈশ ডিউটি, ট্রাফিক ডিউটি ইত্যাদি ক্ষেত্রে কীভাবে জনসাধারণের সঙ্গে আচরণ করতে হবে তার প্রশিক্ষণ। পাশাপাশি থাকে গ্রুপ স্টাডির ব্যবস্থাও।’

এএসপি আরও জানান, শেষ স্তর অর্জিত জ্ঞানের মাঠপর্যায়ে প্রয়োগ অভীক্ষা। এ ক্ষেত্রে নিয়মিত পুলিশি কার্যক্রম, যেমন যানবাহন তল্লাশি, ট্রাফিক ডিউটি ইত্যাদির মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের আচরণ মূল্যায়ন ও প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সংশোধন করা হয়।

আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন, ‘মাঠপর্যায়ে পুলিশ সম্পর্কে মানুষের নেতিবাচক ধারণা থাকলেও তারা জানে না এই পেশার সীমাবদ্ধতা। এ জন্যই ব্যবহারিক ক্লাস নেয়া। এই ক্লাস করে একজন পুলিশ সদস্য শুধু সাধারণ মানুষ নয়, নিজের পরিবারের সঙ্গেও কীভাবে ভালো আচরণ করবে, সেটিও শিখতে পারবে। আমি মনে করি, এই ব্যবহারিক ক্লাস পুলিশ-জনতার সম্পর্কে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।’

এদিকে শুধু ব্যবহারিক ক্লাস নিয়ে বসে থাকেননি পুলিশের এই কর্মকর্তা। ব্যক্তিগত উদ্যোগে রাঙ্গুনিয়া ও রাউজান থানায় স্থাপন করেছেন মুক্তিযুদ্ধ মিনি পাঠাগার নামের উন্মুক্ত লাইব্রেরি। থানায় আসা সাধারণ মানুষ, পুলিশ সদস্যদের এই লাইব্রেরিতে বসে বই পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুব মিল্কি বলেন, ‘সাধারণ মানুষের সঙ্গে আচরণসহ বিভিন্ন বিষয়ে পুলিশের জ্ঞানের স্বল্পতা থাকতেই পারে। এই ক্লাস করে সেই জ্ঞান লাভের পাশাপাশি সংবিধান, মানবাধিকার ইত্যাদি সম্পর্কেও জানা যাচ্ছে। এই শিক্ষা মাঠপর্যায়ে কর্মরত সদস্যদের সহযোগিতা করবে।’

এ বিভাগের আরো খবর