চাকরিটা মাত্র শুরু করেছিলেন। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন বুনছিলেন মো. রাসেল। এর মধ্যেই সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল। রাজধানীর মগবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণে আহত হওয়ার পর কয়েক দিন হাসপাতালে লড়াই করে বৃহস্পতিবার মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। কিন্তু বাবা-মা জানেন, এখনও বেঁচে আছেন তাদের রাসেল।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া দুইটার দিকে মৃত্যু হয় ২১ বছর বয়সী রাসেলের। তার শরীরের ৯০ শতাংশই পুড়ে গিয়েছিল।
রাসেল ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার গেদুড়া ইউনিয়নের পশ্চিম বনগাঁওয়ের বরুয়াল গ্রামের জসিমউদ্দিনের ছেলে।
রাসেলের চাচা বজলুর রহমানের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার। তিনি জানান, রাসেলের বাবা-মাকে মৃত্যুর খবরটি এখনও বলেননি। এই শোক সইতে পারবেন না তারা।
‘ছেলের সঙ্গে কথা বলার জন্য জিদও ধরেছেন তিনি (জসিমউদ্দিন)। ভাইকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য বলেছি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবে রাসেল। তখন যত ইচ্ছা কথা বলবেন’-বলেন বজলুর।
ছেলের সঙ্গে কথা বলতে মুখিয়ে থাকা জসিমউদ্দিন জানান, তার দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে রাসেল বড়। ২০১৭ সালে রাসেল রানীশংকৈল ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজে ইতিহাস বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হয়। প্রথম বর্ষ শেষে দ্বিতীয় বর্ষের শুরুতেই করোনায় থেমে যায় তার লেখাপড়া।
তিনি বলেন, ‘বাড়িতে বসে থেকে ক্লান্ত রাসেল মাস ছয়েক আগে কম্পিউটার বিষয়ে কোর্স করার জন্য ঢাকা চলে যায়। সেখানে থেকে নিজে উপার্জনের আশায় মগবাজারের বেঙ্গল মিটে কাজ নেয়। সেই কাজে যোগ দেয়ার ছয় দিনের মাথায় বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ হয় আমার ছেলে।’
মগবাজার বিস্ফোরণে একটি তিনতলা ভবনের নিচতলা গুঁড়িয়ে যায়। ছবি: নিউজবাংলারাসেলের মা রিনা আক্তারও জানেন রাসেল এখনও জীবিত। তিনি বলেন, ‘বজলু ভাই বলেছে রাসেল ভালো আছে। লকডাউন শেষ হলেই আমরা দেখতে যাব।’
রাসেলের আহত হওয়ার খবর পেয়ে ঢাকা যান রাসেলের চাচা মেদেনীসাগর উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক বজলুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ফোনের কললিস্টে থাকা আমার নম্বরে ফোন দিয়ে তার আহত হওয়ার কথাটি জানানো হয়। আমি ঢাকায় ছুটে আসি। তার মধ্যে বাঁচার আকুতি দেখেছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হেরে গেল। হাসপাতালে প্রক্রিয়া শেষে আজ রাতের মধ্যেই লাশ নিয়ে হরিপুর ফিরব।’
রাসেল এলাকার খুব পরিচিত মুখ ছিলেন বলে জানালেন হরিপুর উপজেলার গেদুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হামিদ।
তিনি বলেন, ‘রাসেলের জন্য কষ্ট হচ্ছে। ওর মধ্যে নিজেই কিছু করে বড় হওয়ার চেষ্টা ছিল। তাই করোনায় লেখাপড়া বন্ধ থাকার সময়টাতে কম্পিউটার বিষয়ে লেখাপড়া করতে ঢাকা চলে গিয়েছিল। সেখানে গিয়ে একটি বেকারিতে কাজও শুরু করেছিল। সেখানে এভাবে মারা যাবে, কেউ ভাবতে পারেনি।’
মগবাজার ওয়্যারলেস এলাকায় আড়ংয়ের শোরুম ও রাশমনো হাসপাতালের উল্টা দিকের মূল সড়ক লাগোয়া ভবনে গত রোববার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বিকট বিস্ফোরণ হয়।
এ ঘটনায় রাসেলকে নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১১। এ ছাড়া আহত অনেকের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে।