ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী ধোবাউড়া ও হালুয়াঘাট উপজেলায় বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে অন্তত ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গ্রামগুলোর অর্ধলক্ষাধিক পানিবন্দি মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে।
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ধোবাউড়া উপজেলার গামারিতলা ইউনিয়নের জাঙ্গালিয়াপাড়া এলাকায় নেতাই নদীর বাঁধ ভেঙে গেছে।
এতে কলসিন্দুর, রায়পুর, কামালপুর, ছান্দের নগরসহ বিভিন্ন এলাকার ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। একই অবস্থা ঘোষগাঁও ইউনিয়নের নয়াপাড়া, দিঘলবাগ, কালিকাবাড়ি গ্রামেও। পোড়াকান্দুলিয়া ইউনিয়নের বেতগাছিয়া, বহরভিটা, উদয়পুর, পাতামসহ নিম্নাঞ্চলগুলোতে ঢলের পানি ঢুকে প্লাবিত হচ্ছে। ভালুকাপাড়া ও রায়পুর এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে বহু মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
স্থানীরা জানান, পানিতে কৃষকের সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। বাড়ির চারিদিকে পানি থাকায় খামারিরা গবাদিপশু নিয়ে পড়েছে সবচেয়ে বিপাকে। বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে কয়েকটি পানিবন্দি গ্রামে।
ঘোঁষগাও ইউনিয়নের মাহবুব নামে একজন বলেন, এরইমধ্যে কয়েক হাজার পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে খামারিদের কয়েক কোটি টাকার মাছ। কয়েক হাজার কৃষকের বীজতলা নষ্ট হয়েছে। অসংখ্য ঘরবাড়ির ভেতরে পানি। এছাড়া বিভিন্ন সড়কের প্রায় ১০০টি স্থানে মাটি সরে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা ত্রাণ চাই না! নেতাই নদীর বেড়িবাঁধ চাই।’
ঘোঁষগাও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল হক বলেন, প্লাবিত এলাকার লোকজন ও গবাদিপশু অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। এছাড়া পানিবন্দি মানুষদের ত্রাণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাফিকুজ্জামান জানান, তার উপজেলায় অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এলাকাগুলো পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীর মধ্যে খাদ্য ও ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বেড়িবাঁধ সংস্কারের ব্যাপারে ময়মনসিংহের পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে।
একই চিত্র সীমান্তবর্তী আরেক উপজেলা হালুয়াঘাটের। এ উপজেলার বোরাঘাট নদীর গাজিরভিটা ইউনিয়নের সূর্যপুরসহ দুটি স্থানে বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে পৌর এলাকাসহ উপজেলার গোপীনগর, কাওয়ালীজান, বটগাছিকান্দা, ধুরাইল, ভুবনকুড়া, কৈচাপুরের ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, পৌর শহরের বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ও রাস্তায় হাঁটু ও কোমর পানি জমে আছে। রান্নাবান্না তো দূরের কথা, ঘরের খাটের ওপর থাকাও দুরূহ ব্যাপার কোনো কোনো স্থানে। এতে আতংকিত হয়ে পড়েছেন উপজেলার এসব এলাকার খেটে খাওয়া মানুষ। পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে প্লাবিত গ্রামগুলোর মানুষ। ঘরবাড়ির পাশাপাশি বাজারের দোকানপাটে পানি ঢোকায় ক্ষতির মুখে ব্যবসায়ীরা।
উপজেলা কৃষি ও মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ৩২০ হেক্টর রোপা আমন বীজতলা ও ১১৫ হেক্টর সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। যদি আরও বৃষ্টিপাত হয় তাহলে এসব বীজতলা ও সবজিক্ষেত নষ্ট হয়ে যাবে। এ ছাড়া উপজেলায় এখন পর্যন্ত ৪৫ হেক্টর পুকুরে পানি ঢুকেছে।
হালুয়াঘাটে ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বোরাঘাট নদীর বাঁধ পরিদর্শন করেছেন। আমরা বিস্তারিত তাদেরকে জানিয়েছি। ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ সহায়তার জন্য এরই মধ্যে পাঁচ টন জিআর বরাদ্দ পেয়েছি। দ্রুত পানিবন্দি এলাকার মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হবে।’