বছর ছয়েক আগে বাজারে ছাড়া আইফোন সিক্স কিনতে গেলেও গুণতে হবে কমসেকম ৩৫ হাজার টাকা। আর নতুন ভার্সনগুলো কিনতে গেলে লাখ টাকার আশেপাশে দাম।
কিন্তু ফেসবুকে একজন ঘোষণা দিলেন, আইফোন ইলাভেন প্রো তিনি ১৫ হাজারে বেচবেন। এই ফোনটির দাম ৮০ থেকে ৮৫ হাজার টাকা। আর এত কমে পাওয়া যাবে ভেবে আগপাছ চিন্তা না করেই ছুটলেন একজন।
কিন্তু পরে তিনি ফোন আর পাননি, টাকা খুইয়েছেন, আর বাড়তি হিসেবে জুটেছে মারধর।
ফেসবুকে ‘সিটিজ সেল বাজার’ নামে একটি গ্রুপে এই বিজ্ঞাপনটি দেয়া হয়। এত কমে আইফোন পাওয়া যাবে দেখে আর দ্বিতীয়বার চিন্তা করেননি চট্টগ্রাম নগরের বাসিন্দা সাইফুল আনোয়ার।
‘বিক্রেতা’র সঙ্গে যোগাযোগ করার পর তিনি দেখা করতে বলেন আগ্রাবাদ জাম্বুরি মাঠে। সেই অনুযায়ী তিনি জাম্বুরি মাঠে যান, দেখা করে তাকে ১৫ হাজার টাকাও দেন।
কিন্তু বিক্রেতা তাকে আইফোন দেননি, তার বদলে দুই-তিনটা চড় থাপ্পড় ও চার-পাঁচটা কিল ঘুষি দিয়ে পাঠিয়ে দেয়।
চলতি বছরের ২১ এপ্রিল সন্ধ্যায় এই ঘটনা ঘটে।
এরপর ভুক্তোভোগী সাইফুল আনোয়ার ডবলমুরিং থানায় অভিযোগ করেন। তারপর ঘটনা তদন্তে নামে পুলিশ।
পরে পুলিশ তার টাকা উদ্ধার করে দিয়েছে। আর এই ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে জানা যায়, ফোনটি ছিল চুরি করা। আর ফোনের প্রকৃত মালিককে সেটি ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।
ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ওই প্রতারক চক্রকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয় পুলিশ। এরপর কৌশলে ওই চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করি। পরবর্তীতে বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপন দেয়া আইফোনটি উদ্ধার করি।’
পরে পুলিশ জানতে পেরেছে, স্বস্তায় আইফোন বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে এভাবে আরও অনেকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই চক্রটি।
একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘ফেসবুকে অস্বাভাবিক কম দামে কিছু বিক্রির বিজ্ঞাপন পেলেই অতি উৎসাহী হওয়া যাবে না। এটা নিশ্চিতভাবেই প্রতারণার ফাঁদ। এটা বোঝা উচিত। কিন্তু অনেকেই যে এই বোধ হারিয়ে ফেলেন, সেটি এই ঘটনার তদন্ত করতে গিয়েই দেখেছি। সাইফুল আনোয়ারের মতো আরও অনেকের কাছ থেকেই এই চক্রটি এভাবে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে স্বীকার করেছে। কিন্তু তারা কেউ অভিযোগ করেননি। আর তাদের নামও জানা যায়নি।’
এই আইফোনটিও চুরি করা
ওসি মহসীন জানান, যে আইফোনটি বিক্রির বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছিল, সেটি চুরি করা।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি দেওয়ানহাট এলাকায় একটি বাসে মাইনুল ইসলাম নামে এক তরুণের কাছ থেকে ফোনটি চুরি হয়ে যায়।
এই ঘটনায় মাইনুল ইসলাম ডবলমুরিং থানায় মামলা করেন। তিনি জানান, সেদিন জিইসি মোড় থেকে ১০ নম্বর বাসে করে দেওয়ানহাট আসার পথে ডবলমুরিং মডেল থানাধীন দেওয়ানহাট মোড়ে দেওয়ান কাবাবের সামনে পৌঁছলে একদল যুবক বাসে জটলা তৈরি করে কৌশলে তার প্যান্টের বাম পকেট থেকে ৮৫ হাজার টাকায় কেনা চুরি হাতিয়ে নেয়।
ওসি মহসীন জানান, আনোয়ারের অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে এই ফোনটি উদ্ধারের পর মাইনুলের মামলায় দেয়া আইএমইআই নম্বর মিলিয়ে ফোনটির প্রকৃত মালিকের খোঁজ মেলে। এরপর মাইনুল ইসলামকে খবর দেয়া হয়। আর এরপর যাবতীয় তথ্য যাচাই শেষে তার কাছে ফোনটি হস্তান্তর করা হয়।
মাইনুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার আইফোন-১১ প্রো ফোনটি জব্দ করে পরে পুলিশ তিন আসামিকে থানায় আসেন। সব তথ্য যাচাই-বাছাই করে পুলিশ ফোনটি আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে।’
এই মামলার তিন আসামি মোহাম্মদ সাকির, জিয়াউর রহমান, মোহাম্মদ আলীকে গত ২৩ এপ্রিল আদালতে পাঠায় পুলিশ। পরে বিচারক তাদের পাঠান কারাগারে।
ডবলমুরিং থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘সাইফুল আনোয়ারের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া টাকা আমরা আসামিদের কাছ থেকে উদ্ধার করেছি। সেই টাকা সাইফুলকে ফিরিয়ে দিয়েছি, এজন্য তিনি আর কোনো মামলা করেনি।’