শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে কুড়িগ্রামের উলিপুরে মাহবুবার রহমান নামে একজন প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
রংপুর বিভাগীয় উপপরিচালক মো. মুজাহিদুল ইসলামের স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে বুধবার ওই শিক্ষকের সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানানো হয়। নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, মাদারটারী পূর্বপাড়া সরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবার রহমানের বিরুদ্ধে ওই স্কুলের ১৭ শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির ৩১ হাজার ৮৫০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৩ (খ), (ঘ) ধারায় তাকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ভুয়া অভিভাবক সেজে উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের অভিযোটি আমরা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করি। প্রাথমিকভাবে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে ওই প্রধান শিক্ষক লিখিতভাবে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
‘শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা তিনি আত্মসাৎ করতে পারেন না। তাই বিধি মোতাবেক তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
এর আগে, উলিপুর উপজেলার ওই স্কুলের এক ছাত্রের অভিভাবক মোসলেম উদ্দিন প্রধান শিক্ষক মাহবুবার রহমানের বিরুদ্ধে উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ ও বিস্কুট বিতরণে অনিয়ম করা নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিলে বিষয়টি জানাজানি হয়।
অভিযোগে বলা হয়, ১৯৮৬ সাল থেকে মাদারটারী পূর্বপাড়া সরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আছেন মাহবুবার। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে প্রধান শিক্ষক ওই বিদ্যালয়ে নিজের লোকজন দিয়ে পকেট কমিটি তৈরি করেন।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে সরকার ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তির টাকা বরাদ্দ দেয়। কিন্তু সেই টাকা পায়নি প্রকৃত ছাত্র-ছাত্রীরা।
শিক্ষার্থীদের তালিকা ঘেঁটে দেখা যায়, ওই প্রধান শিক্ষক নিজে তালিকার ৫৯ নম্বর শিক্ষার্থীর চাচা এবং ৯১, ১২৮, ১২৯, ১৬৯, ১৭৪, ২১৫ নম্বর শিক্ষার্থীর বাবা সেজেছেন। এ ছাড়া নিজের স্ত্রী সাবিনা বেগমকে ১০৪, ১৬৮, ২১২ নম্বর শিক্ষার্থীর মা বানিয়েছেন। তার নিজের ছেলে সাদেকুলকে ১৩০ ও ১৩২ নম্বর শিক্ষার্থীর ভাই বানিয়েছেন। এভাবে নানা অনিয়মের মাধ্যমে তিনি ১৭ জন শিক্ষার্থীর ৩১ হাজার ৮৫০ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
অভিভাবক মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে গত ২৭ জুন উপজেলা শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তদন্তের মাধ্যমে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।'
অভিযোগ ও বরখাস্তের বিষয়ে জানতে প্রধান শিক্ষক মাহবুবার রহমানকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি।