‘আমাগো এহানে পতিবারই বাঁধ ভাইঙা পানি ডুহে। আর আমাগো ফসল ঘরবাড়ি ক্ষতি অয়। আমরা এডারে শক্ত কইরা বাইন্দা চাই। ভোট নেওয়ার সোম বেডারা ভোট নেয়। এহন কাম করে না।’
এভাবেই ক্ষোভ জানালেন নালিতাবাড়ীর শিমুলতলীর আহাম্মদ আলী।
টানা তিন দিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে।
এতে দুই উপজেলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
ঢলের পানিতে ভোগাই, চেল্লাখালী, মহারসী, মালিঝিসহ সব নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গিয়েছে। পানির তোড়ে নালিতাবাড়ী পৌরসভার শিমুলতলা, নিজপাড়া ও ঝিনাইগাতী উপজেলার দিঘিরপাড় অংশসহ কয়েকটি স্থানে শহররক্ষা বাঁধ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫০টি গ্রামের হাজারও মানুষ।
তারা স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণের দাবি জানালেও তাদের কথা শোনার যেন কেউ নেই। তাই প্রতিবছর এভাবে বাঁধ ভেঙে বন্যার পানিতে ফসল, ঘরবাড়ি ক্ষতির সম্মুখীন হন তারা।
শহররক্ষা বাঁধ ভেঙে বুধবার সকাল থেকে নালিতাবাড়ী পৌরসভার শিমুলতলা, নিজপাড়া এলাকায় বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। অনেক জায়গায় বাঁধ উপচে পানি নাকুগাঁও স্থলবন্দর সড়কের শিমুলতলা, চারআলী, নিজপাড়া, আড়াইআনি সড়কের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
মহারসী নদীর বাঁধ ভেঙে ঝিনাইগাতী উপজেলা সদরে পানি প্রবেশ শুরু করেছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারও মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এ ছাড়া শতাধিক পুকুর ও আমন বীজতলা পানির নিচে তলিয়ে গেছে।স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা এসব এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করছেন।
ঝিনাইগাতী বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী শুক্রর আলী জানান, তার দোকানে ঢলের পানি ঢোকায় প্রায় ৩০ হাজার টাকার মালমালের ক্ষতি হয়েছে।
ঝিনাইগাতী বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ বলেন, ‘মহারসী নদীতে স্থায়ী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ না থাকায় ঢলের পানি এসে শহরে ঢুকে প্রত্যেক বর্ষাকালেই একাধিকবার ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়।’
তাই দ্রুত সময়ের মধ্যেই শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান ব্যবসায়ী সংগঠনের এই নেতা।
মহারসী নদীপারের বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘নদীর বাঁধ ভেঙে আমাদের বাড়িঘরে পানি ঢুকে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। গরু-ছাগলগুলোও রাখতে পারছি না। আর রান্নাও করতে পারছি না।’
রামনগর গ্রামের আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ঢলের পানিতে আমার ৭ একর জমির পুকুর তলিয়ে গেছে। এতে আমার ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার মাছ পানিতে ভেসে গেছে।’
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ঢলের পানিতে বেশ কিছু এলাকার পুকুর প্লাবিত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিরূপণের কাজ চলছে।’উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘পাহাড়ি ঢলের পানি বিভিন্ন এলাকাতে প্রবেশ করেছে। এতে প্রায় ২৫ হেক্টর জমির বীজতলা পানিতে নিমজ্জিত আছে। আশা করছি, পানি দ্রুত নেমে যাবে, এতে ফসলের কোনো ক্ষতি হবে না।’
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক আল মাসুদ বলেন, ‘অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে মহারসী নদীর বাঁধের কিছু অংশ ভেঙে ঝিনাইগাতী উপজেলা শহরসহ কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ঢলের পানিতে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিরূপণের কাজ চলছে। প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী জিয়াছমিন খাতুন জানান, পানি কমে গেলে বাঁধ নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।