সিলেটে নগরীতে গির্জার জমি দখল করে বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণের অভিযোগে অবসরপ্রাপ্ত সাব রেজিসট্রারসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)।
দুদক সমন্বিত সিলেট জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ইসমাইল হোসেন মঙ্গলবার মামলাটি করেন।
আসামিরা হলেন সিলেট সদর ভূমি অফিসের সাবেক সাবরেজিস্ট্রার (অবসরপ্রাপ্ত) মজিবুর রহমান পাটোয়ারী, ইম্পালস বিল্ডার্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, মিউনিসিপালিটি সিলেট সদর ভূমি অফিসের সাবেক ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (অবসরপ্রাপ্ত) আসবাহ উদ্দিন ও সদর ভূমি অফিসের সাবেক কানুনগো (বরখাস্তকৃত) মলয় কর।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের সহকারী পরিচালক ও মামলার বাদী ইসমাইল হোসেন।
দুদক সূত্রে জানা যায়, সিলেট নগরের রিকাবীবাজার এলাকায় ৮০ শতক জায়গা দখল করে ২২ তলা আবাসিক ভবন নির্মাণ করছে ‘ইম্পালস বিল্ডার্স’ নামের একটি আবাসন প্রতিষ্ঠান। এরই মধ্যে চার তলা নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
দুদকের অনুসন্ধানে জানা গেছে, গির্জার জায়গা দখল করে জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি করে ওই জায়গা দখল করা হয়েছে।
তদন্তে প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে ভূমি অফিসের ওই তিন কর্মকর্তাসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক।
ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘আমরা প্রাথমিক তদন্তে জালিয়াতির মাধ্যমে জমির জাল দলিল তৈরির প্রমাণ পেয়েছি। এরপর মামলা করা হয়েছে। এখন আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
মামলায় বলা হয়েছে, আসামিরা যোগসাজশে মিউনিসিপালিটি মৌজার জে. এল নং-৯১ এর ৪০০৮ এবং ৪০০৯ দাগে গির্জার ৭৬ লাখ ৬৪ হাজার টাকা মূল্যের ৮০ শতক জায়গা জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আত্মসাৎ করেন। যা দণ্ডবিধি ৪২০/৪০৯/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের (৫)২ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
দুদক কর্মকর্তারা জানান, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার মিউনিসিপালিটি মৌজায় ৪০০৮ এবং ৪০০৯ নম্বর দাগে ১.৩৭০১ একর ভূমি পুলিশ লাইনসে বসবাসরত খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় প্রার্থনা এবং মরদেহ কবর দেয়ার জন্য বরাদ্দ দেয়।
গির্জার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য হেরেঙ্গা লুসাই নামের এক ব্যক্তিকে এই গির্জা সমিতির চেয়ারম্যান করা হয়। হেরেঙ্গা ব্রিটিশ পুলিশ বাহিনীতে চাকরি করতেন। তিনি ছিলেন লুসাই সম্প্রদায়ের খ্রিস্টানধর্মাবলম্বী।
পরবর্তীতে এ গির্জাতেই সমাহিত হন হেরেঙ্গা লুসাই। এরপর নানা হাত ঘুরে এ জায়গার দেখভালের দায়িত্ব ২০০৪ সালে পড়ে হেরেঙ্গার উত্তরসূরি যৌবেল লুসাইয়ের কাঁধে।
তার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে ইম্পালস বিল্ডার্সের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম নানা কৌশলে এখানকার ৮০ শতক জায়গা আত্মসাৎ করার চেষ্টা শুরু করেন। এক পর্যায় তিনি এ ভূমি লিজ নিয়ে একটি আমমোক্তারনামা তৈরি করেন।
এভাবে তিনি এ ভূমিকে কেন্দ্র করে ১৫টি রেজিস্টার্ড লিজনামা, ১টি রেজিস্টার্ড বায়নামা, ১টি সাফকাবাল বেআইনি দলিল, ১টি আনরেজিস্টার্ড লিজনামা সম্পাদিত করে ওই তিন ভূমি কর্মকর্তার যোগসাজশে নিজের নামে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে নেন।
এসব কাগজপত্রের বলে গির্জার ৮০ শতক জায়গা তিনি ভোগদখল শুরু করেন।
তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে ইম্পালস বিল্ডার্সের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, ‘২০০৬ সালে আমি এখানকার কিছু জায়গা কিনেছি। কিছু জায়গা লিজ নিয়েছি। ৮০ শতক জায়গা কিনে আমি ৩২ শতকের ওপর ভবন করছি। এখানে জাল-জালিয়াতির কিছু নেই।
‘দুদক মামলা করেছে বলে শুনেছি। এখন চার্জশিট হবে, তারপর আদালত বিচার করে রায় দিবেন। আমি আইনিভাবে মোকাবিলা করব।’
এসব তাকে হয়রানির জন্য করা হচ্ছে দাবি করে সিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘ এ জায়গার উত্তরাধিকার এখন কেউ নেই। কিছুদিন পর পর কিছু মানুষ তাদের ধরে এনে বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দেয়ায় আমাকে হয়রানি করাতে।’
রিকাবীবাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নির্মাণাধীন ‘ইম্পালস বিল্ডার্স’ নামক এ ভবনের কাজ এখন বন্ধ রয়েছে। তবে চার তলা পর্যন্ত পর্যন্ত ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে।
এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে ভবনটি।