গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে রিকশাচালক ছকু মিয়াকে নির্যাতন ও হত্যার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও সালিশকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন এলাকাবাসী।
সাদুল্লাপুর শহীদ মিনারের সামনের পাকা সড়কে রোববার দুপুরে মানববন্ধনের আয়োজন করে সচেতন নাগরিক সমাজ ও ৩ নম্বর দামোদরপুর ইউনিয়নবাসী।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে অংশ নেন নিহতের স্বজন, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। মানববন্ধন শেষে তারা বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ করেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, অভিযুক্ত আলমগীর, মন্টু মিয়াসহ তার ভাইয়েরা পরিকল্পিতভাবে ছকু মিয়াকে রাতভর আটকে রেখে নির্যাতন করেন। সালিশ বৈঠক বসিয়ে ছকুর কাছে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাসহ গ্রাম ছাড়ার সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। এমনকি তার ঘরটিও ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়া হয়। বাকি টাকা সংগ্রহে গাজীপুরের মৌচাক এলাকায় গিয়ে গত ৩ জুন মৃত্যু হয় ছকুর। এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা হলেও পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
একই সঙ্গে মানববন্ধনে নিহতের স্বজন ও বক্তারা প্রহসনের সেই সালিশ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করেন। এ সময় তারা অভিযুক্ত ৩ নম্বর দামোদরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ জেড এম সাজেদুল ইসলাম স্বাধীনসহ জড়িত সালিশকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানান।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন নিহত ছকুর ছেলে মোজাম্মেল হক, ভাতিজা একরামুল হক জিতু, সাদুল্লাপুর নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক আবুল বাশার মো. হান্নান পিন্টু, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পাটির সাদুল্লাপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক কমরেড কামরুল ইসলাম, সাদুল্লাপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের সভাপতি আহসান হাবীব নাহিদ ও জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন সাদুল্লাপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান মিলন।
প্রেমের সম্পর্কের জেরে গত ১৫ মে রিকশাচালক ছকু মিয়ার ছেলে মোজাম্মেল হকের হাত ধরে পালিয়ে যায় পূর্ব দামোদরপুর গ্রামের প্রভাবশালী মন্টু মিয়ার মেয়ে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ছকুকে আটকে রেখে রাতভর নির্যাতন চালান প্রভাবশালী মন্টু, আলমগীরসহ তার ছয় ভাই। পরদিন ৯৯৯ ফোন করলে পুলিশের সহায়তায় ছকুকে উদ্ধার করে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। চার দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে গত ৩১ মে সাদুল্লাপুর থেকে গাজীপুরের মৌচাকে ছেলে মোজাম্মেল হকের কাছে যান ছকু মিয়া। সেখানে গত ৩ জুন মারা যান তিনি।
এ ঘটনায় হত্যার অভিযোগ এনে গত ১৬ জুন ৯ জনকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন ছকুর ছেলে মোজাম্মেল হক। আদালতের নির্দেশে গত ২১ জুন ময়নাতদন্তের জন্য ছকুর মরদেহ কবর থেকে তোলা হয়।