সংসদ সদস্যের বাড়িতে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ করেন খাদ্য কর্মকর্তা। এর এক দিন পর তিনি তার অবস্থান পাল্টিয়েছেন। এখন তিনি বলছেন, ভুল-বোঝাবুঝি থেকে তিনি থানায় ওই অভিযোগ করেছিলেন।
এর কয়েক ঘণ্টা আগে ওই খাদ্য কর্মকর্তার বাড়ির পাশ থেকে ২০০ বস্তা গম উদ্ধার করা হয়। এর পরপরই তার বিরুদ্ধে দাপ্তরিক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন ইউএনও। এখন প্রশ্ন উঠেছে, চাপে পড়ে ওই খাদ্য কর্মকর্তা তার অবস্থান পাল্টিয়েছেন কিনা।
ঘটনাটি নাটোরের লালপুরের।
লালপুরের গোপালপুর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম গত বৃহস্পতিবার রাতে বাগাতিপাড়া থানায় একটি অভিযোগ করেন।
এতে বলা হয়, সেদিন দুপুর ১২টার দিকে নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুলের বাড়িতে তিনি সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে যান। সাক্ষাতের পর বকুল চলে গেলে তাকে সেখানে আটকে রাখেন বকুলের অনুসারী রোকন, রাসেল ও কালাম। অস্ত্রের মুখে তার কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা পাওনা উল্লেখ করা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
এরপর শুক্রবার দুপুরে রফিকুলের বাসার পাশে একটি পরিত্যক্ত ঘর থেকে ২০০ বস্তা সরকারি গম জব্দ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত ইউএনও) শাম্মী আক্তার।
রফিকুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়, তিনি সরকারি গম গুদামে না রেখে নিজ জিম্মায় সংরক্ষণ করছিলেন। সেগুলো তিনি বিক্রির উদ্দেশ্যে সেখানে রেখেছিলেন।
ইউএনও শাম্মী নিউজবাংলাকে বলেন, শুক্রবার দুপুরে স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই ঘরে অভিযান চালিয়ে ২০০ বস্তা গম জব্দ করা হয়। গমগুলোর নমুনা সংগ্রহ করে গুদামজাত করা হয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পুরো বিষয়টি অবহিত করে তার বিরুদ্ধে দাপ্তরিক ব্যবস্থা নিতে জেলা খাদ্য কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়।
গম জব্দের পর রফিকুল জানান, জেলা খাদ্য কর্মকর্তার অনুমতি নিয়েই তিনি গমগুলো নিজ জিম্মায় রেখেছিলেন। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন জেলা খাদ্য কর্মকর্তা রবীন্দ্র লাল চাকমা।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘গুদামের বাইরে গম রাখতে হলে নিয়ম অনুযায়ী খাদ্য বিভাগকে অবহিত করে অনুমতিপত্র নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে আমাকে অবহিত করা বা কোনো অনুমতি নেয়া হয়নি। বিষয়টি খাদ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এ ঘটনার পর সাংসদের অনুসারীদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রফিকুল বলেন, তাদের সঙ্গে ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছিল। কেউ তাকে মারধর করেনি। তিনি অভিযোগ তুলে নেবেন।
তবে কেন অভিযোগ দিলেন, সে বিষয়টি তিনি পরিষ্কার করেননি।
এ বিষয়ে নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল বলেন, ‘খাদ্য কর্মকর্তার অভিযোগ সাজানো। তাকে কেউ আটকে রেখে মারধর করেনি। তার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ। অভিযোগ ধামাচাপা দিতেই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের ইন্ধনে তিনি মিথ্যা নাটক সাজিয়েছেন। তিনি কৌশলে ২০০ বস্তা গম আত্মসাতের উদ্দেশ্যে সরিয়ে ফেলেছিলেন। তা-ও উপজেলা প্রশাসন উদ্ধার করেছে।’
তদন্ত সাপেক্ষে মূল ঘটনা উন্মোচন করার জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
নাটোরের পুলিশ সুপার (এসপি) লিটন কুমার সাহা বলেন, পুরো বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।