টাঙ্গাইলের বাসাইলে এজেন্ট ব্যাংকিং বুথের কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ থাকা ছাত্রলীগ নেতা সারোয়ার হোসেন সবুজকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
শুক্রবার রাতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শনিবার নিউজবাংলাকে এ তথ্য জানিয়েছেন বাসাইল উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মো. কামরান খান বিপুল।
ছাত্রলীগ নেতা সারোয়ার হোসেন সবুজের বাড়ি বাসাইল উপজেলার আইসড়া গ্রামে। তিনি ফুলকি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি। তার বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।
কামরান খান বিপুল জানান, শুক্রবার রাতে উপজেলা ছাত্রলীগের এক জরুরি সভায় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতির পদ থেকে সবুজকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
তিনি বলেন, ‘জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করেই আমরা এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। সবুজকে স্থায়ী বহিষ্কারের বিষয়ে আমরা জেলা কমিটিকে জানিয়েছি।’
শনিবার প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উপজেলা ছাত্রলীগ জানায়, সবুজ এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি নষ্ট করার কারণে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সবুজের চাচাতো ভাই আরিফ সরকার বলেন, ‘১৫ দিন ধরে সবুজ পলাতক। তার কোনো খোঁজ আমরা পাচ্ছি না। যাদের টাকা নিয়ে ও (সবুজ) পালিয়েছে, আমাদের পারিবার তাদের টাকা পরিশোধের ব্যবস্থা করছে।’
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে টাকা ফেরতের দাবিতে গ্রাহকরা আইসড়া বাজারের ডাচ্-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকিং বুথ ঘেরাও করে মিছিল সমাবেশ করেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, তিন বছর আগে আইসড়া বাজারে এজেন্ট ব্যাংকিং বুথ চালু হয়। সবুজ সেই বুথের এজেন্ট। ব্যাংকিং নীতিমালা না মেনে তিনি উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে এলাকাবাসীকে ব্যাংকে টাকা জমা রাখতে প্রলুব্ধ করেন।
কেউ কেউ টাকা তুলতে গিয়ে দেখেন, তাদের জমানো টাকা ব্যাংক হিসাবে নেই। এ বিষয়ে সবুজের কাছে জানতে চাইলে তিনি টাকা দেয়ার আশ্বাস দিয়ে গ্রাহকদের ঘোরাতে থাকেন। একপর্যায়ে গ্রাহকরা সালিস বৈঠক বসান।
সালিসে সবুজ টাকা ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও সাত দিন আগে হঠাৎ ব্যাংক বন্ধ করে পালিয়ে যান।
মো. রাজু নামের এক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, তিনি পাঁচ লাখ টাকা জমা দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন। তার ধারণা, এর সঙ্গে ডাচ্-বাংলার এজেন্ট ব্যাংক টাঙ্গাইল অফিসের কিছু কর্মকর্তাও জড়িত।
ইতি খান নামের আরেক গ্রাহক বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করে ব্যাংকে টাকা রেখেছি। সে এমন প্রতারণা করবে বুঝতে পারিনি। প্রথম যখন টাকা জমা রাখি, তখন মোবাইলে এসএমএস আসত। পরে আর টাকা জমা দেয়ার পর এসএমএস আসত না। এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে বলত, সার্ভার নষ্ট হয়েছে।’
প্রবাসী আফজাল হোসেন জানান, বিদেশ থেকে তিনি মা ও স্ত্রীকে টাকা পাঠাতেন। সবুজ তাদের উচ্চ হারে মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে টাকা জমা রাখতে বাধ্য করেন। দেশে এসে টাকা তুলতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন তারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
ফুলকি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বাবুল জানান, সবুজ টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পর আইসড়া বাজারের সব গ্রাহক, ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বাজার কমিটির নেতা ও তার বাবাকে নিয়ে সালিস বৈঠক করা হয়। সবুজের বাবা তার সম্পত্তি বিক্রি করে গ্রাহকের টাকা পরিশোধ করতে রাজি হন।