ঢাকা কলেজের অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী খালিদ সাইফুল্লাহ রাজীব। পোস্টার হাতে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। হলুদ রঙের পোস্টার কালো কালিতে লেখা, ‘খাল দাও নতুবা বিষ দাও।’ মূলত এলাকার জলাবদ্ধতার ভোগান্তিকে বিষের সঙ্গে তুলনা করেই খাল দখলমুক্ত করতে তার এই প্রতিবাদ।
সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের হেমায়েতপুর এলাকায় শুক্রবার দুপুরে মানববন্ধনে দুটি হাউজিং কোম্পানির বিরুদ্ধে বামনি খাল দখলের অভিযোগ তোলেন এলাকাবাসী। তাদের সঙ্গে একাত্মতা জানান ঢাকা কলেজের পলিটিক্যাল সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী খালিদ।
মানববন্ধনে এলাকাবাসী ছাড়াও সাভার নদী ও পরিবেশ উন্নয়ন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক, সাভার নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি রফিকুল ইসলাম ঠান্ডু মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন খান নঈম উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষার্থী খালিদ সাইফুল্লাহ রাজীব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের যে বামনি খালটা আছে, সেটা এখন প্রায় মৃতই বলা যায়। দুইটা হাউজিং এখন এটাকে দখল করে রেখেছে। প্লট আকারে ভরাট ও স্থাপনা নির্মাণ করে তারা খালটা ব্লক করে দিয়েছে। এই খাল দিয়ে কেরানীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, ভাকুর্তা, কোন্ডা, বলিয়ারপুরে এই দিক দিয়ে সাভার থেকে ট্রলার-স্টিমারে যাতায়াত করা যেত। এই খালটা একসময় অবমুক্ত ছিল।
‘লাস্ট দুই বছর যমযম বিল্ডার্স ও আলমনগর প্রোপার্টি নামে দুটি হাউজিং এই খালটাকে দখল করে নিয়েছে। এখন অল্প বৃষ্টিতেই আমাদের বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। পাশের যাদুরচর এলাকায় বৃষ্টির পানি রাস্তায় হাঁটু পর্যন্ত জমে গেছে। লাখ লাখ শ্রমিক ওই রাস্তা দিয়ে গার্মেন্টে যায়। বৃষ্টি হলে এলাকার কেউই ওই রাস্তা দিয়ে হাঁটতে পারে না। এই খালটা দখল হয়ে যাওয়ার পরে পানি নামতে না পারায় এই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।
‘এমন দুর্বিষহ ভোগান্তি এখন আমাদের কাছে বিষের মতোই হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা অচিরেই খালটা দখলদারদের কবল থেকে অবমুক্ত হোক সেটা চাই। এ জন্যই আমরা নিরুপায় হয়ে আজ মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছি।’
এলাকাবাসীর পক্ষে সরকার তাসেক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সিএস, আরএস রেকর্ডে এখানে বামনি খাল রয়েছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সেই খালের ওপর সেতু নির্মাণ করেছে সরকার। কিন্তু যমযম ও আলমনগর হাউজিং কোম্পানি জালিয়াতির মাধ্যমে খালটি পুরোপুরি ভরাট করে প্লট করছে বিক্রির জন্য। আমরা বারবার সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে সমস্ত কাগজপত্র পাঠালেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এই অবস্থায় খালটিতে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে সামনের বর্ষা মৌসুমে ভোগান্তি আরও বাড়বে।’
মানববন্ধনে সাভার নদী ও পরিবেশ উন্নয়ন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক বলেন, ‘এক যুগ ধরে নদী দখল, দূষণ ও পরিবেশ যেন সুষ্ঠুভাবে থাকে সেটার জন্য আমরা আন্দোলন করে আসছি। শুধু এই বামনি খাল না, সাভারে শতাধিক খাল আছে যেগুলো দখল হয়ে গেছে এবং দখল হচ্ছে।
‘যেভাবে খাল দখল হচ্ছে তাতে আমার মনে হয় সাভারের মোর দ্যান ফিফটি পার্সেন্ট খাল সন্ত্রাসীদের দখলে আছে। এগুলো পুনরুদ্ধার করতে হবে, খালের নাব্য ফিরিয়ে দিতে হবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ডেলটা প্ল্যানের স্বার্থেই, পরিবেশের স্বার্থেই দখল হয়ে যাওয়া সমস্ত খাল পুনরুদ্ধার করতে হবে।’
আলমনগর হাউজিং প্রোপার্টিজের কাউকে না পাওয়া গেলেও কথা বলা গেছে যমযম নূর বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূর মোহাম্মদের সঙ্গে।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এলাকাবাসীর অভিযোগ মিথ্যা। আমি ব্যক্তিমালিকানা জমি কিনেছি। রেকর্ডে কোথাও বামনি খালের নাম নেই।’