বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি। দুপুরে হঠাৎ প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হয় বিলকিস আক্তার সাথীর। তাকে বাঁচাতে পাগলপ্রায় স্বামী। তিনি পরিচিতজনদের জানাতেই পেয়ে যান অক্সিজেন সেবার একটি হটলাইন নম্বর।
ফোন করতেই ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যেই বাসার ছয় তলায় দুটি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে হাজির দুই কিশোর। পরে হাসপাতালে পৌঁছে দিতেও সাহায্য করে তারা।
সাভারের ব্যাংকটাউন এলাকার ‘কোভিড এক্সপ্রেস হেল্প ইউনিট’ নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দুই কিশোর জুনায়েদ ইসলাম ও ইয়াসিন আরাফাত সিয়াম।
বৃহস্পতিবার দুপুরে হটলাইনের কল পেয়ে বৃষ্টির মধ্যেই তারা ছুটে যায় অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে। ব্যাংকটাউনের ১ নম্বর সড়কে রিয়ান মাহমুদের ছয় তলার ফ্ল্যাটে দুটি সিলিন্ডার অনেক কষ্টে টেনে তোলে তারা।
করোনাভাইরাস মহামারিতে মানুষকে সেবা দিতে নিজেরাই নিজেদের প্রস্তুত করেছে কিশোররা। করোনায় নিজেদের স্বজন হারানো কিংবা শ্বাসকষ্টে ভোগা রোগীদের দেখেই এই মহান কাজ শুরু করেছে তারা। মাত্র কয়েক মাসের যাত্রায় বেশ কয়েকজনের প্রাণ বাঁচাতে সাহায্য করেছে।
কোভিড এক্সপ্রেস হেল্প ইউনিটের স্বেচ্ছাসেবী দশম শ্রেণির ছাত্র জুনায়েদ আহমেদ নিউজবাংলাকে বলে, ‘দুপুরে আমাদের সংগঠনের সেক্রেটারি বিদ্যুৎ ভাইয়ের হটলাইন নম্বরে কল আসে। তিনি আমাদের জানালে দ্রুত দুটি সিলিন্ডার নিয়ে বৃষ্টির মধ্যেই ছুটে যাই ওই বাসায়। ছয় তলার ফ্ল্যাটে সিঁড়ি বেয়ে উঠতেই দেখি রোগীটি শ্বাসকষ্টে ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছেন।
‘এ সময় রোগীর হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিল। তখন দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেয়ার জন্য ছয় তলা থেকে ধরে নিয়ে নিচে আনি। পরে উনাদের ব্যক্তিগত গাড়িতে করে এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি। তখন ডাক্তার আমাদের জানায়, দেরি হলে হয়তো দুর্ঘটনা ঘটতে পারত।’
কীভাবে এসব আয়ত্ত করেছে, এমন প্রশ্নের জবাবে জুনায়েদ বলে, ‘আমাদের সংগঠনের সেক্রেটারি বিদ্যুৎ ভাই এসব শিখিয়েছেন। ১৫ দিন কোন সিচুয়েশনে কী করতে হয় এসব ট্রেনিং করিয়েছেন।
‘আমার কাজ করতে খুব ভালো লাগে। খুব প্রাউড ফিল হয় যখন আমার কারণে কোনো প্রাণ বাঁচে। কারও মুখে হাসি ফোটে।’
শ্বাসকষ্টে ভোগা বিলকিস আক্তার সাথীর স্বামী রিয়ান মাহমুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার স্ত্রী এখন ভালো আছেন। তাদের ধন্যবাদ দেয়ার ভাষা আমার নাই।
‘আর ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতেও চাই না। উনাদের অক্সিজেনের কারণে আজ আমার স্ত্রী প্রাণে বেঁচে ফিরেছে।’
কোভিড এক্সপ্রেস হেল্প ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান বিদ্যুৎ বলেন, ‘করোনায় এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের স্বজন ও এলাকার লোকদের জন্য কিছু করা প্রয়োজন ভেবে রুবেল ভাই উদ্যোগটা নিলেন। তখন উনার অর্থায়নে আমরা দুই-তিনটা সিলিন্ডার কিনি।
‘পরে উনার ব্যবসায়িক পার্টনারও অর্থায়ন করলে আরও ১০টা সিলিন্ডার কিনি। আমাদের ব্যাংকটাউন এলাকা ও আশপাশ থেকে প্রায় ১৬ জন ভলান্টিয়ার যুক্ত করি। তাদের প্রশিক্ষণও দিই।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত কয়েক মাসে ব্যাংকটাউনের বেশ কয়েকজন মুমূর্ষু রোগীকে আমরা অক্সিজেন সেবা দিয়েছি। তবে এসবের পেছনে আমাদের সার্বিক সহযোগিতা করেছেন সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব ভাই।’