বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলার একটি সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের সবগুলো নতুন ঘর পানিতে ভাসছে। ফলে কয়েকদিন ধরে সেখানে থাকা নয়টি পরিবার চরম দুর্ভোগে আছে।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে এমন নিচু জায়গাতে ঘর করা নিয়ে স্থানীয় লোকজন শুরু থেকেই আপত্তি তুলেছিল। তাদের অভিযোগ ছিল, ঘর তৈরিতে মাটির নিচে ইট ব্যবহার করা হয়নি। এ ছাড়া নিম্নমানের ইট, বালি-রড, কাঠ ও অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহারে করা হয়েছে। এ জন্য তারা দায়ী করেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা পারভীনকে।
তবে কোনো কিছু আমলে না নিয়ে তৎকালীন ইউএনও সেখানে ঘর নির্মাণ করেন। আড়িয়া ইউনিয়নে পলিপাড়ায় পাশে খাসজমিতে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কাবিটা প্রকল্পের আওতায় ১৫ লাখ ৩৯ হাজার টাকা ব্যয়ে নয়টি পরিবারের জন্য দুই কক্ষবিশিষ্ট এসব ঘর তৈরি করা হয়।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা হজুর আলী বলেন, অল্প বৃষ্টিতে পানি ঘরে ঢুকে গেছে। রান্নাঘর, যাতায়াত রাস্তা, টিউবওয়েল, বাথরুম পানিতে ডুবে আছে।
এই জলমগ্ন দশা নিরসনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসকের সহযোগিতা চান এই বীর মুক্তিযোদ্ধা ।
আয়শা বেগম বলেন, ‘আমাদের ঘরবাড়ি নেই। তাই প্রধানমন্ত্রী আমাগো ঘর দিছে। তিন দিন ধরে আমাদের ঘরে মধ্যে পানি ঢুকে গেছে। পাঁচজন বিধবা মানুষ আমারা এখানে থাকি। পানিবন্দি হয়ে প্রায় অনাহারে আছি। সাপ বা বিভিন্ন পোকামাকড় আক্রমণ করছে।’
নজরুল ইসলাম বলেন, ‘গৃহহীনদের জন্যে দুর্যোগ সহনীয় ঘরগুলো দুর্যোগ আসার আগেই বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাবে। খুব নিচু জায়গায় ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে।’
ফেসবুকে ভোগান্তির বিষয়টি জানার পরপরই বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন বগুড়ার শাজাহানপুর থানার ইউএনও আসিফি আহমেদ। ঘটনাস্থলে গিয়ে ইউএনও বলেন, প্রাথমিকভাবে তাদের একটি বিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হচ্ছে। পানি নেমে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এরপর এলাকায় মাটি কেটে জায়গাটা উঁচু করা হবে।
‘প্রতিবাদ হয়েছিল তখন-ই’ আমলে নেয়নি কেউ
শাজাহানপুর উপজেলায় প্রথম ধাপে মোট ১৩ গৃহহীন পরিবারের কাছে ২৩ জানুয়ারি বাড়ি হস্তান্তর করা হয়। এর মধ্যে মাঝিরা ইউনিয়নের দোমনপুকুর ঘর পায় চারটি পরিবার।
অভিযোগ রয়েছে, প্রতিটি ঘর তৈরিতে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। ঘরে নিম্ন মানের ইট ব্যবহার করার কারণে দ্রুত প্লাস্টার করা হয়েছে।
এ নিয়ে প্রতিবাদ হলেও ইউএনও তার ক্ষমতাবলে তুলনামূলক নিচু জায়গাতেই ঘর নির্মাণ করে যান। তখন ইউএনও কারও ফোন ধরতেন না।
তবে এবার গণমাধ্যমকর্মীর ফোন ধরেন মাহমুদা পারভীন। বলেন, ‘ঘর পানিতে ভাসছে এমন বিষয় তো আমাকে এখনো কেউ জানায়নি। সুতরাং এ বিষয়ে আমি এখন কোনো মন্তব্য করতে পারব না।’
২৩ জানুয়ারি জেলা প্রশসাক জিয়াউল হক বলেছিলেন, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া নেয়া হবে।
তবে ঘরগুলো পানিতে ভাসমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক বলেন, ‘ঘর নির্মাণ করার জন্য এমন নিচু জায়গা সিলেকশন করা ঠিক হয়নি। যেহেতু ঘর হয়ে গেছে এখন তো বিকল্প উপায় বের করতে হবে। পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা করা যায় কিনা সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’