চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে দুজনকে আটক করেছে ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
আটক ব্যক্তিরা হলেন জহির উদ্দিন বাবুল ও সহযোগী গুলশান আরা খানম লাভলী।
পুলিশ জানিয়েছে, রাজধানীর ফকিরাপুলের হোটেল সেল্টারে তিন বছর ধরে অবস্থান করে প্রতারণা করে যাচ্ছিলেন জহির। নিজেকে এমপি পরিচয় দিয়ে প্রতারণা ও পুলিশের কাছে তদবির করতেন তিনি।
সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া) আসনের এমপি ও প্রধানমন্ত্রীর প্রয়াত রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের ছেলে তানভীর ইমাম পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাকে নানা তদবির করতেন জহির।
মোবাইল ফোনে বলতেন, ‘আমি তানভীর ইমাম। সিরাজগঞ্জ-৪ উল্লাপাড়ার এমপি। আমি এইচ টি ইমামের ছেলে। গুলশান আরা খানম আমার বোন হয়। আপনারা ওনার কাজটা করে দিলে খুব খুশি হব। আর তাতে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা হতেন বিভ্রান্ত।’
এ ছাড়া গুলশান আরা চাকরির প্রলোভনে টাকা হাতিয়ে নেয়া ও খালি চেক নেয়ার পর তাতে টাকার অঙ্ক বসিয়ে টাকা উদ্ধারের জন্য অভিযোগ নিয়ে যেতেন বিভিন্ন দপ্তরে।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ কামাল আকন্দ বুধবার সন্ধ্যায় এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে সকালে রাজধানীর ফকিরাপুল থেকে জহিরকে ও ময়মনসিংহের সেনবাড়ি এলাকা থেকে গুলশান আরাকে আটক করা হয়।
তিনি বলেন, প্রতারক গুলশান মাঠপর্যায়ে সহজ-সরল নারীদের ফাঁদে ফেলে তাদের আত্মীয়স্বজন ও ছেলেমেয়েদের চাকরি দেয়ার কথা বলে ওই কথিত এমপির সঙ্গে কথা বলিয়ে দিতেন। এতে সাধারণ মানুষ চাকরির আশায় গুলশানকে টাকার অঙ্ক ছাড়াই চেক দিতেন। পরে গুলশান আরা চেকে ইচ্ছেমতো টাকার অঙ্ক বসিয়ে উত্তোলনের জন্য সরকারি বিভিন্ন অফিসে অভিযোগ করেন। আর জহির এমপি পরিচয়ে ফোন দিয়ে তদবির করতেন।
ওসি আরও বলেন, তাদের কাছ থেকে আটটি চেক উদ্ধার করা হয়। খালি চেক নেয়া হলেও তাতে মোট টাকা ৪৪ লাখ ৩৩ হাজার টাকা উল্লেখ রয়েছে। তারা প্রতারণা করে ছয়জনের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন সাড়ে ৯ লাখ টাকা।
প্রতারণার শিকার নজরুল ইসলাম বলেন, তার ভাইয়ের ছেলে ও মেয়েকে সেনাবাহিনীর সিভিলে চাকরি দেয়ার কথা বলে গত জানুয়ারিতে ১৭ লাখ টাকায় চুক্তি করে জহির ও গুলশান। এরপর ৬ লাখ টাকা নগদ এবং ৫টি চেক নেয়। কিন্তু চাকরি ও টাকা ফেরত না দিয়ে ব্ল্যাঙ্ক চেকে ২০ লাখ টাকা বসিয়ে উকিল নোটিশ পাঠায়। পুলিশের কাছে অভিযোগ করলে সেটি তদন্ত করতে গিয়ে চক্রটি ধরা পড়ে।
ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহা. আহমার উজ্জামান বলেন, প্রতারক চক্রটি মূলত নারীদের টার্গেট করে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে চেক নিত। পরে সেটি তাদের পাওনা টাকা বলে দাবি করে এবং না দিলে পুলিশের সহযোগিতা চাইত।
তিনি বলেন, ‘এমপি পরিচয়ে প্রতারক জহির আমাদের কাছে ফোন দিয়ে তদবির করায় সন্দেহ হয়। পরে অনুসন্ধান করে তিনি ভুয়া নিশ্চিত হলে আটক করা হয়।’