বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দুদকে এমপি রেজাউলের সম্পদের হিসাব জমা

  •    
  • ২৩ জুন, ২০২১ ১৮:৩০

সবশেষ নির্বাচনের হলফনামায় মাসিক আয় ৪১৭ টাকা দেখানোর বিষয়টি তুলে ধরা হলে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমি মনে করতে পারছি না। নথি না দেখে বলতে পারব না। নির্বাচিত হওয়ার দুই মাসের মধ্যে গাড়ি কেনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার সম্পদ বেড়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যম এটা নিয়ে মনগড়া প্রতিবেদন ছেপেছে।‘

নির্ধারিত সময়ের প্রায় তিন মাস পরে বগুড়া-৭ (শাজাহানপুর-গাবতলী) আসনে আলোচিত সাংসদ রেজাউল করিম বাবলু দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) হাজির হয়ে তার সম্পদের প্রাথমিক নথিপত্র জমা দিয়েছেন।

দুদক বগুড়া সমন্বিত আঞ্চলিক কার্যালয়ে বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সংসদ সদস্য এসব তথ্য দুদকে জমা দেন।

নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদক সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক আমিনুল ইসলাম।

গত সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় মাসিক আয় ৪১৭ টাকা দেখান রেজাউল করিম বাবলু। নির্বাচনে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হিসেবে জয়ী হওয়ার দুই মাসের মধ্যে গাড়ি (নোয়াহ হাইব্রিড) কিনে আলোচনায় আসেন তিনি।

গত মার্চ মাসের শুরুতে তার সম্পদের প্রাথমিক তথ্য চেয়ে নোটিশ পাঠায় দুদকের বগুড়া আঞ্চলিক কার্যালয়। চিঠিতে ১৪ মার্চের মধ্যে হাজির হয়ে সম্পদের প্রাথমিক হিসাব দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়।

নোটিশের পরে ১৪ মার্চ তিনি বগুড়ার দুদক কার্যালয়ে যান। তবে সেদিন কোনো তথ্য জমা দেননি। রেকর্ডপত্র গোছানো না থাকার অজুহাত দেখিয়ে সম্পদের হিসাব জমা দিতে দুদকের কাছে সময় চান তিনি।

রেজাউল করিম সেদিন বলেন,‘আমি কাগজপত্র প্রমাণসহ আগামী তারিখে লিখিত জবাব দাখিল করব। দুদক কর্মকর্তারা আপাতত মৌখিকভাবে সময় দিয়েছেন।’

পরে দুদক তাকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত সময় দেয় সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দেয়ার জন্য। কিন্তু এরপর তিনি আর তা দুদকে জমা দেননি। এর মধ্যে কেটে গেছে আড়াই মাসের বেশি সময়। তবে বিভিন্ন অজুহাতে অনুপস্থিত থাকার পর বুধবার তিনি দুদকে যান সম্পদের প্রাথমিক নথি জমা দিতে।

দুদকের সহকারি পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য রেজাউল করিম হলফনামায় যে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেছেন, তার চেয়ে অনেক বেশিসম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বগুড়া নির্মাণাধীন বাড়ি, ঢাকায় ফ্ল্যাট, ব্যক্তিগত তিনটি গাড়ি কেনার তথ্য আছে। এরমধ্যে বিপুল টাকায় শুল্কমুক্ত একটি বিলাসবহুল পাজেরোও আছে তার।

নামে বেনামে অবৈধ অর্থ বিত্ত অর্জনের অভিযোগ পেয়ে তাকে সশরীরে দুদকে হাজির হয়ে যাবতীয় সম্পদের নথি জমা দিতে নোটিশ পাঠানো হয়। এরমধ্যে তার নিজের, স্ত্রীর, সন্তান এবং পোষ্যদের নামে স্থাবর অস্থাবর সম্পদের দালিলিক নথি আনতে বলা হয়। সেই সঙ্গে আনতে বলা হয় নিজ ও স্ত্রীর নামে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সত্যায়িত কপি ও পাসপোর্টের কপিও। কিন্তু তিনি গত মার্চে আংশিক নথি দাখিল করেন। বুধবার সশরীরে দুদকে এসে অবশিষ্ট নথি দাখিল করেছেন। তার দেয়া তথ্য যাচাই বাছাই করে কোনো রকম গড়মিল পাওয়া গেলে তার সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ পাঠানো হবে।

সময় নেয়ার বিষয়ে রেজাউল করিম বুধবার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি দুদকে যথা সময়ে হাজির হয়ে সময় নিয়েছিলাম। তারা আমাকে সময় দিয়েছিল। এরই মধ্যে করোনা পজিটিভ হওয়ার কারণে দুই মাসের মতো আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলাম। তারপর আবার লকডাউন হলো। এসবের কারণে দেরি হয়েছে। জমা দেয়ার কাগজে দেরি হওয়ার কারণ উল্লেখ করা হয়েছে।

সবশেষ নির্বাচনের হলফনামায় মাসিক আয় ৪১৭ টাকা দেখানোর বিষয়টি তুলে ধরা হলে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমি মনে করতে পারছি না। নথি না দেখে বলতে পারব না।’

নির্বাচিত হওয়ার দুই মাসের মধ্যে গাড়ি কেনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার সম্পদ বেড়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যম এটা নিয়ে মনগড়া প্রতিবেদন ছেপেছে।‘

‘কপাল গুণে এমপি’

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান গাবতলী ও পাশের উপজেলা শাজাহানপুর নিয়ে গঠিত বগুড়া-৭। আসনটি ‘জিয়া পরিবারের আসন’ হিসেবেই পরিচিত।

১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সব জাতীয় নির্বাচনেই এ আসনে বিপুল ভোটে জয়ী হন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সাজাপ্রাপ্ত আসামি হওয়ায় গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি তিনি।

আসনে বিএনপির মনোনয়ন পান গাবতলীর বিএনপি নেতা ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোরশেদ মিলটন। কিন্তু তার পদত্যাগপত্র গৃহীত না হওয়ায় মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। আসনটিতে নির্বাচন হয় বিএনপির প্রার্থী ছাড়া।

এ অবস্থায় ভোটের এক দিন আগে স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিমকে সমর্থন দেয় গাবতলী ও শাজাহানপুর বিএনপি। ট্রাক প্রতীক নিয়ে তিনি জয়ী হন। এ জন্য স্থানীয়রা বলে থাকেন, রেজাউল করিম সংসদ সদস্য হয়েছেন কপাল গুণে।

‘যেন আঙুল ফুলে কলাগাছ’

নির্বাচনে জয়ের দুই মাসের মাথায় বদলে যেতে থাকে তার আর্থিক অবস্থা। কেনেন ৩৪ লাখ টাকা দামের গাড়ি।

অথচ নির্বাচনী হলফনামায় তিনি বলেন, তার বার্ষিক আয় পাঁচ হাজার টাকা। ভোটে দাঁড়ানোর আগে জমা টাকা ছিল ৩০ হাজার। চলাফেরা করতেন একটি পুরোনো মোটরসাইকেলে।

সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামায় তার পেশা লেখা ছিল ব্যবসা ও সাংবাদিকতা। তার ও তার ওপর নির্ভরশীলদের বার্ষিক আয় পাঁচ হাজার টাকা। অর্থাৎ এমপি হওয়ার আগ পর্যন্ত তার মাসিক আয় ছিল ৪১৭ টাকা।

অস্ত্র হাতে ভাইরাল

রেজাউল করিমের একটি ছবি গত বছরের অক্টোবরে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ছবিতে দেখা যায়, হাতে অস্ত্র নিয়ে হাসিমুখে একটি চেয়ারে বসে আছেন তিনি। পাশের টেবিলে আছে গুলির ম্যাগাজিন। ছবিটি ভাইরাল হওয়ার পর নতুন করে আলোচনায় আসেন বগুড়ার এই স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য।

এ বিভাগের আরো খবর