রংপুরে কলেজছাত্রীকে দাফনের ১৫ দিন পর আদালতের নির্দেশে তার মরদেহ তোলা হয়েছে।
ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে। মামলায় তিন আসামিকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
নগরীর মুন্সিপাড়ার কবরস্থান থেকে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মরদেহ তোলার পর ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
রংপুর মেট্রোপলিটন আমলি আদালতে (পরশুরাম) ১৬ জুন মামলার আবেদন করেন ওই কলেজছাত্রীর মা। বিচারক তা আমলে নিয়ে পরশুরাম থানাকে তদন্ত করার নির্দেশ দেন।
মামলায় বলা হয়, নগরীর ওই কলেজছাত্রীকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন প্রতিবেশী এক যুবক। এতে রাজি না হওয়ায় ওই যুবক প্রতিশোধ নেয়ার পরিকল্পনা করেন। ৭ জুন সকালে এক বান্ধবীর সঙ্গে বাড়ি থেকে বের হন মেয়েটি। রাতে বাড়িতে না ফেরায় তাকে খোঁজাখুঁজি শুরু করে পরিবার। ওই বান্ধবীর বাড়িতে গিয়েও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। বান্ধবীর পরিবার থেকে জানানো হয়, সন্ধ্যার দিকে মেয়েটি বাড়িতে চলে গেছে।
পরদিন (৮ জুন) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে স্থানীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন লোকমান হোসেন পুকুরে মরদেহ ভাসতে দেখেন। পরে নিখোঁজ মেয়েটির স্বজনরা এসে মরদেহ শনাক্ত করেন। মরদেহ বাড়িতে নেয়ার পর স্থানীয় মাতবররা দ্রুত দাফনের জন্য চাপ দিতে থাকেন।
মেয়েটির মার অভিযোগ, ‘মোর মায়ের গলা চিপি ধরছিল, কপালোত দাগ আছিল এবং দুই গালে এবং গাত (শরীর) খুব ডাংগাইছে( মারছে) মনে হয়।
‘ওমরা (খালা আর চাচি) যকন গোসল করাইচে তখন মোর মায়ের গাত মেলা কিছু দেখচ্ছে। মানুষজন ভয় দেখাইছে জন্যে কাইও কিছু কয় নাই। মোর মাকে ওমরা নষ্ট করি মারি ফেলাইছে। মুই বিচার চাং-ওমার ফাঁসি চাং। ওমাক ফাঁসি দেও।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পরশুরাম থানার উপপরিদর্শক আলতাফ হোসেন জানান, মেয়েটির তাড়াহুড়া করে দাফন করার বিষয়টি সন্দেহ হয়েছে অনেকের। এমনকি এলাকায় জানাজা না পড়িয়ে দূরের মসজিদে জানাজা এবং মুন্সিপাড়া কবরস্থানে দাফন করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, মেয়েটির পরিবার থানায় আসলে তাদের আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেয়া হয়। পরে মেয়েটির মা মেট্রোপলিটন আমলি আদালতে (পরশুরাম) মামলা করেন।
আদালতের বিচারক শেখ জাবিদ শুনানি শেষে হত্যা মামলা হিসেবে এজাহার নিতে পরশুরাম থানাকে নির্দেশ দেন। পুলিশ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ওই দিনই মামলা নথিভুক্ত করে। পরদিন (১৭ জুন) তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। মরদেহ উত্তোলনের জন্য আবেদন করা হলে ১৮ জুন বিচারক অনুমতি দেন।
উপপরিদর্শক আলতাফ হোসেন বলেন, ‘গ্রেপ্তারের পর আমরা ১৮ জুন আদালতে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করি। আদালত আসামিদের তিন দিনের রিমান্ডে পাঠায়। লাশ উত্তোলন করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে আবার দাফন করা হবে।
পরশুরাম থানার পরিদর্শক (ওসি) হিল্লোল রায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ ঘটনায় তিনজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন মেয়েটির মা। আমরা সব আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। তদন্ত চলছে। আরও কেউ জড়িত থাকলে তাদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।’