ধান কাটা ও মাড়াইয়ের সুবিধার জন্য নওগাঁয় কৃষকদের মধ্যে সরকারি প্রণোদনায় অর্ধেক দামে বিতরণ করা হয়েছিল এসিআই কোম্পানির কম্বাইন হারভেস্টার। ২৮ লাখ টাকার সেই মেশিন কিনে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন কৃষকরা।
এ নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সামনে এসিআই কোম্পানির বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও হয়রানির অভিযোগ এনে মানববন্ধন করেন কৃষকরা।
নওগাঁয় বাংলাদেশ হারভেস্টার মালিক সমিতির মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন জেলা শাখার সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা ইব্রাহিম হোসেন। এতে অংশ নেন জেলার হারভেস্টার মালিকরা।
মানববন্ধনে তারা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই কম্বাইন হারভেস্টার বিকল হয়ে যাওয়া, সময়মতো বাজারে যন্ত্রাংশ না পাওয়া, পাওয়া গেলেও বাজারের তুলনায় দাম বেশি রাখা ও মেরামতে দেরি করার অভিযোগ তোলেন।
কৃষকরা জানান, গত বছরের মাঝামাঝি এবং চলতি বছরের শুরুতে জেলার ৫৭ কৃষককে এসিআই কোম্পানির ২৮ লাখ টাকার কম্বাইন হারভেস্টার অর্ধেক দামে দেয়া হয়। ওই সময় কোম্পানিটির পক্ষ থেকে কিছু প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। তবে তার কিছুই পূরণ করা হয়নি।
তারা অভিযোগ করেন, দুই বছর বিনা মূলে সেবা দেয়ার কথা থাকলেও ৬০০ ঘণ্টার সীমার বেঁধে দেয়া হয়। ছয় মাসের মধ্যেই এই ৬০০ ঘণ্টা হয়ে যায়। এ ছাড়া টেকসই খুচরা যন্ত্রাংশ (বেল্ট, কাটিং বেল্ট ইউনিট, নাট বোল্ট) প্রায়ই ভেঙে গেলেও কোম্পানি সঠিক সময়ে তা সরবরাহে ব্যর্থ হয়।
মাঠে হারভেস্টার মেশিন চালানোর সময় সমস্যা হলে স্বল্প সময়ে দক্ষ কারিগর দিয়ে মেরামতের সেবা দিতেও এসিআই ব্যর্থ হয়েছে।
তারা আরও অভিযোগ করেন, এসব কারণে হারভেস্টার মালিকরা আশানুরূপ আয় করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
জেলার পোরশা উপজেলার আব্দুস সালাম সরদার বলেন, ‘ভর্তুকির আওতায় একটি কম্বাইন হারভেস্টার কিনেছিলাম। মেশিনটি নেয়ার সময় কোম্পানির মাঠকর্মীরা বলেছিল কাদামাটির মধ্যে পড়ে থাকা ধানও কাটা যাবে। লাভবান হতে পারবেন।
‘দুই বছরের ওয়ারেন্টিসহ যেকোনো সময় নষ্ট হলে ফ্রি সার্ভিসসহ ওই যন্ত্রাংশ দেয়ার কথা। কিন্তু কোনো কিছুই দেয়া হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ধান কাটার সময় তিন মাসের মধ্যে একটি ব্লেড ভেঙে যায়। বগুড়াসহ আশপাশের জেলায় না পেয়ে ঢাকা থেকে নিয়ে আসতে হয়েছে। ১২ হাজার টাকার ব্লেড ২৪ হাজার টাকায় কিনতে হয়েছে।
‘এ ছাড়া পাঁচ দিন বসে থাকতে হয়েছে। একদিকে যেমন খরচ বেশি পড়ল, অপরদিকে ধান কাটার সময়ও শেষ হয়ে গেল। মোট কথায় অনেক ক্ষতির মধ্যে পড়তে হয়েছে।’
নজিপুর এলাকার মাসুদ রানা অভিযোগ করেন, মেশিনের কোনো যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে গেলে টেকনিশিয়ানরা সময়মতো যান না। তারা দক্ষও না।
তিনি বলেন, ‘ধান কাটতে গিয়ে যদি প্রায় মেশিন নষ্ট হয়, তাহলে কীভাবে আমরা কাজ করব? চাকার বিয়ারিং, হাইড্রোলিকের বিয়ারিং নষ্ট হলেও পাওয়া যায় না। যদিও পার্টস পাওয়া যায় দাম বেশি নেয়।’
তার অভিযোগ, মেশিন নেয়ার সময় কৃষকদের ভুল বুঝিয়ে ডাউন পেমেন্টের মাধ্যমে কোম্পানির লোকজন ফাঁকা চেক নিয়ে হারভেস্টার সরবরাহ করেন। এখন তারা মামলার ভয় দেখিয়ে মেশিনটি তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করছেন।
নওগাঁয় এসিআইয়ের টেকনিশিয়ান আবু তালেব বলেন, ‘প্রতিটি কোম্পানির একই অবস্থা; পার্টস সহজে পাওয়া যায় না। আমাদের কোম্পানির ক্ষেত্রেও তাই। শুধু কম্বাইন হারভেস্টারের ক্ষেত্রে না, পাওয়ার টিলারের পার্টসও সহজে পাওয়া যায় না।’
তার দাবি, বাজারে কম্বাইন হারভেস্টার সম্পূর্ণ নতুন। চালকরা ঠিকমতো চালাতে না পারায় অনেক সময় মেশিনটি দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁর উপপরিচালক কৃষিবিদ শামসুল ওয়াদুদ বলেন, ‘হারভেস্টারে কিছু সমস্যা ছিল। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি।’