সুনামগঞ্জের শাল্লায় হিন্দু বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় মামলার প্রধান আসামি ইউপি সদস্য শহীদুল ইসলাম স্বাধীনের (স্বাধীন মেম্বার) জামিন নিয়ে জনমনে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
হামলার আগে হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হকের সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলায় শাল্লার ঝুমন দাস আপন এখনও কারাবন্দি। তাকে জামিন দেয়নি সুনামগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালত।
ঝুমনের ওই ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে হিন্দু গ্রামে হামলা ও ভাঙচুরের দুই মামলায় রোববার দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক ওয়াহিদুজ্জামান শিকদার যুবলীগ নেতা ও ইউপি সদস্য স্বাধীনকে জামিন দেন। তাকে পুলিশের অভিযোগপত্র দাখিলের আগ পর্যন্ত জামিন দেয়া হয়েছে।
স্বাধীন মেম্বারের জামিন পাওয়ার খবর সুনামগঞ্জে ছড়িয়ে পড়লে এ জামিনকে অমানমিক বলে দাবি করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ সুনামগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী বলেন, ‘বারবার জামিন চাওয়া হলেও আদালত ঝুমনকে জামিন দেননি। কিন্তু নোয়াগাঁও গ্রামে হামলার ঘটনায় করা মামলার মূল আসামি স্বাধীন মেম্বারকে জামিন দেয়া হয়েছে, যা অমানবিক। স্বাধীন মেম্বারের বিচার হওয়ার কথা ছিল দ্রুত বিচার আইনে, কিন্তু সেটা হয়নি। আমি মনে করি, জামিন পাওয়া উচিত ছিল ঝুমনের।’জেলা সিপিবির সভাপতি চিত্তরঞ্জন তালুদার বলেন, ‘স্বাধীন মেম্বারের জামিনের ঘটনায় আমি নিন্দা প্রতিবাদ জানাই। কারণ একটি ছেলে ফেসবুকে মামুনুলকে নিয়ে লেখছে, তো আজ কি মামুনুলের সত্যগুলো ধীরে ধীরে প্রকাশ পাচ্ছে না? তাহলে ঝুমন কেন জেলে? পুরো হিন্দু গ্রামটারে তছনছ করলো যে স্বাধীন মেম্বার, তারেই জামিন দেয়া হলো।’
ঝুমনের আইনজীবী দেবাংশু শেখর দাশ বলেন, ‘ঝুমনের জামিন না হওয়ার পেছনে মামলার বাদীর অসহযোগিতা রয়েছে। কারণ ওই মামলার বাদী (বিবেকানন্দ মজুমদার বকুল) মামলা করেই নিজের দায় মিটিয়েছেন। এদিকে, আদালত স্বাধীন মেম্বারকে জামিন দিয়েছেন, কারণ মামলার যে ধারা দেয়া হয়েছে সেগুলো জামিনযোগ্য। তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ঝুমনের বিরুদ্ধে মামলার নথিপত্রগুলো হাইকোর্টে দেয়া হয়েছে।’
ঝুমনের মা নিভা রাণী দাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন তারে হাইকোর্ট জামিনের লাগি আপিল করমু, আমি ঢাকা গেছলাম ইকানো তার লগে দেখাও খরছি। আমার ছেলেরে আমি নির্দোষ মনে করি। যেখানো স্বাধীন মেম্বারের মতো অপরাধী জামিন পাইলাইলো, ইকানো আমার ছেলেরে আর জেলো রাখাটা কষ্টের। আর স্বাধীন মেম্বারের জামিন হওয়ায় আমরা আবার মনও ভয় ডুকি হেছে। আপনারে আরেকটা কথা কই আমার ঝুমনরে জেল থকি বার করি আনার লাগি আমি বকুল চেয়ারম্যানরে তিন লাখ টাকা দিসি, হে টাকাও কিতা করছে কয় না, আবার আমরা কোনো খোঁজ খবরও লয় না।’
তিন লাখ টাকার নেওয়ার কথা মিথ্যা বলে জানিয়েছেন শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার। তিনি বলেন, ‘তারা আমাকে কোন টাকা দেয়নি, এটা মিথ্যা। এছাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান আল আমিন এক লাখ টাকা দিসোইন ইটা ঝুমনের পরিবারের লাগি না।’
গত ১৬ মার্চ মামুনুল হকের সমালোচনা করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন শাল্লার নোয়াগাঁওয়ের যুবক ঝুমন দাস আপন। স্ট্যাটাসে তিনি মামুনুলের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের অভিযোগ আনেন। এরপর ওই স্ট্যাটাস নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা তৈরি করে হেফাজত ও মামুনুলের অনুসারীরা। তারা ঝুমনের স্ট্যাটাসকে ইসলামবিরোধী আখ্যা দিয়ে প্রচারনা চালায়। উত্তেজনা আঁচ করতে পেরে ওই রাতেই ঝুমনকে পুলিশের হাতে তুলে দেন নোয়াগাঁও গ্রামবাসী।
১৭ মার্চ সকালে কয়েক হাজার লোক সশস্ত্র মিছিল নিয়ে ঝুমনের নোয়াগাঁওয়ে তাণ্ডব চালায়। তারা গ্রামের ৯০টি হিন্দু বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করে।
ঝুমনকে আটকের পর প্রথমে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে নিলে বিচারক কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এরপর শাল্লা থানার এক উপপরিদর্শক তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। ওই মামলায় প্রায় তিন মাস ধরে কারাগারে আছেন ঝুমন।