অল্প বৃষ্টিপাত হলেই শুরু হয় আতঙ্ক। বাড়ে পাহাড় ধসের ঝুঁকি। ঝুঁকি জেনেও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গড়ে উঠছে বসতঘর। এতে আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে রাঙ্গামাটি পৌর এলাকা।
পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে রাঙামাটির প্রায় ২০ হাজার মানুষ। এর মধ্যে পৌর এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশেই ঝুঁকিতে রয়েছে ১৫ হাজার।
অনিরাপদ জেনেও জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা না মেনে প্রতিবছর রাঙ্গামাটি শহরে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে গড়ে উঠেছে প্রায় দ্বিগুণ অবৈধ বসতঘর।
জেলা প্রশাসন বর্ষার আগেই পাহাড়ের পাদদেশ ও ঝুঁকিপুর্ণ এলাকায় বসবাসকারীদের আশ্রয়কেন্দ্রে সরে যেতে লিফলেট বিতরণ, মাইকিং করে জনসাধারণকে নির্দেশনা দিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন জেলা থেকে এসে রাঙ্গামাটি শহরের পাশের পাহাড়গুলোতে বসতঘর তুলেছেন লোকজন।
যাদের সঙ্গে কথা হয়েছে তাদের অনেকেই ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফেনী, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসেছেন।
শহরের শিমুলতলী, রূপনগর, ভেদভেদি মুসলিমপাড়া, টেলিভিশন সেন্টার এলাকা, রেডিও স্টেশন, যুব উন্নয়ন এলাকা, রাঙাপানি, তবলছড়ি ও মহিলা কলেজ সংলগ্ন এলাকাসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ।
প্রতি বছর বর্ষণে যেসব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে সেসব এলাকায় প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে তোলা হয়েছে বসতঘর।
আবার অনেক জায়গায় ধসে যাওয়া পাহাড়ি ভূমি বিক্রিও হচ্ছে। এসব জায়গা কিনে মেরামত করে তৈরি করা হচ্ছে স্থাপনা। ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে উঠছে জনবসতি।
বসবাসকারীরা বলছেন, সরকার যদি স্থায়ী বসবাসের জন্য স্থানান্তর করে তাহলে তারা নিরাপদ স্থানে গিয়ে বাস করবেন।
রূপনগরে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী তাইজুল ইসলাম, মিনু আরা, আব্দুল করিম, শেফালী বেগম, রোমিদুল ইসলাম, নার্গিস আক্তারের সঙ্গে কথা হয়।
তাইজুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি জায়গাতে আছি। বৃষ্টিপাত হলেই নিরাপদ স্থানে সরে যাই। দুর্যোগের সময় মনে করি আজ রাত হয়েছে কাল সকালটা দেখতে পাব কি না তা জানি না। সরকার আমাদের স্থানান্তরের কথা বলেছিল। কিন্তু এখনও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।’
এ দিকে ভূমিধসসহ সম্ভাব্য যে কোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতিমূলক জরুরি পদক্ষেপ নেয়া আছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে হালকা ও মাঝারি বৃষ্টিপাত হওয়ায় পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দুর্যোগশঙ্কায় সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলার পূর্ব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
এ জন্য সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের ছুটি বাতিল করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘যে কোনো দুর্যোগকালীন সরকারি ছুটির দিনেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে নিজ কর্মস্থলে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। কোনো দুর্যোগ চলাকালে যদি কেউ কর্মস্থলে হাজির না থাকেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।’
পাহাড় ধসের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে সেসব জায়গায় বসবাস নিষিদ্ধ করে সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে। এরপরও কেউ ঝুঁকিপূর্ণ বসতঘর ছেড়ে নিরাপদে সরে না যায়, তাদেরকে জোর করে নিরাপদে সরে যেতে বাধ্য করা হবে বলেও জানান জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘সামনে দুর্যোগের আশঙ্কা অনেক। বৃষ্টিপাত শুরু হয়ে গেছে। শহরের মধ্যে পাহাড় ধসের দুর্যোগে ৩৪ ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় ২৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
‘দুর্যোগকালীন স্কুল-কলেজগুলো খোলা রাখতে প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের বলে দেয়া হয়েছে। আমরা যার যার অবস্থান থেকে দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত আছি। উপজেলা পর্যায়ে নির্বাহী অফিসাররা যার যার প্রস্তুতি নিয়েছেন।’
বর্ষার শুরুর বৃষ্টিপাতে পাহাড় ধসের শঙ্কায় বসবাসকারীদের সতর্ক করতে মাইকিং করেছে জেলা প্রশাসন। ছবি: নিউজবাংলাএদিকে শহরসহ জেলায় পাহাড়ধস প্রতিরোধে আজও কোনো স্থায়ী পদক্ষেপ নেইনি সরকার।
তবে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম প্রধান সড়কসহ জেলার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর স্থায়ী মেরামত চলছে বলে জানান জেলার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহে আরেফিন।
তিনি জানান, ‘গুরুত্ব ও প্রয়োজন অনুসারে জেলার অভ্যন্তরীণ সড়কের অনেগুলো অংশ ও স্থানে স্থায়ী মেরামত শেষ করা হয়েছে। অনেকগুলোর কাজ চলছে। বাকিগুলোর কাজ শেষ করা যাবে চলতি বর্ষা মৌসুমের পরে। কারণ বর্ষায় কাজ করলে সড়কের ক্ষতি আরও বেড়ে যাবে। সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের সর্বাত্মক প্রস্তুতি রয়েছে।’
২০১৭ সালের ১১ জুন থেকে টানা ভারী বর্ষণের ফলে ১৩ জুন রাঙামাটি জেলায় ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনায় ৫ জন সেনা সদস্যসহ ১২০ জন নিহত হয়।
পরের বছরের ১১ জুন নানিয়ারচর উপজেলায় পাহাড় ধসে মুত্যু হয় ১১ জনের। এ ছাড়া ২০১৯ সালের জুনে কাপ্তাই উপজেলায় পাহাড় ধসে মৃত্যু হয় ৩ জনের।