বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

১৮ দিন পর তোলা হলো সেই রিকশাচালকের মরদেহ

  •    
  • ২১ জুন, ২০২১ ১৮:১১

আদালতের নির্দেশে সাদুল্লাপুর উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের পূর্ব দামোদরপুর গ্রাম থেকে সোমবার দুপুরে মরদেহটি তোলা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট লোকমান হোসেন।

দাফনের ১৮ দিন পর গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরের সেই রিকশাচালক ছকু মিয়ার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে তুলেছে সাদুল্লাপুর থানা পুলিশ।

আদালতের নির্দেশে সাদুল্লাপুর উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের পূর্ব দামোদরপুর গ্রাম থেকে সোমবার দুপুরে মরদেহটি তোলা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট লোকমান হোসেন।

মরদেহ উত্তোলনের খবর পেয়ে দামোদরপুর ইউনিয়ন ছাড়াও কয়েক গ্রামের শত শত নারী-পুরুষ ঘটনাস্থলে ভিড় জমান।

সাদুল্লাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ রানা বলেন, আদালতের নির্দেশে মরদেহ কবর থেকে তোলা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি রংপুর মেডিক্যাল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে গত ১৬ জুন ছকু মিয়ার ছেলে মোজাম্মেল হক সাদুল্লাপুর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে মামলা করেন। আদালতের বিচারক শবনম মুস্তারী সাদুল্লাপুর থানাকে মামলা রেকর্ডভুক্ত করে ২৩ জুনের মধ্যে মরদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তসহ প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, সাদুল্লাপুর উপজেলার পূর্ব দামোদরপুর গ্রামের ছয় ভাই আলমগীর, আংগুর, রনজু, মনজু, সনজু ও মন্টু মিয়া দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় দাদনের কারবারে জড়িত। তাদের সঙ্গে রিকশাচালক ছকু মিয়ার পারিবারিক ও দাদনের টাকা নিয়ে বিরোধ চলছিল। ছকুর ছেলের সঙ্গে মন্টু মিয়ার মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে সেই বিরোধ আরও বাড়ে।

এ নিয়ে গত ১৫ মে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ছকু মিয়ার বাড়িতে যায় ছয় ভাইসহ তাদের লোকজন। এরপর কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা মারধর শুরু করেন ছকুকে। তাদের মধ্যে রনজু মিয়া হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে ছকুর গোপনাঙ্গে লাথি দেন। আর মন্টু বুকের ওপর দুই পা দিয়ে পরপর কয়েকবার আঘাত করেন। এভাবেই রাতভর ছকুর ওপর ছয় ভাই ও তাদের লোকজন চালান নির্যাতন।

পরদিন গুরুতর ছকুকে পরিবারের লোকজন হাসপাতালে নিতে গেলে ছয় ভাই বাধা দেন। সেই সঙ্গে হত্যার হুমকি আর ভিটে ছাড়ার ভয় দেখানো হয়।

এই ঘটনা ১৬ মে বিকেলে স্থানীয় এক সংবাদকর্মীর নজরে আসে। পরে তিনি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ছকুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানেও তারা ছকু মিয়াকে হত্যার হুমকি দেন।

এলাকাবাসী জানান, ঘটনার পাঁচ দিন পর দামোদরপুর ইউপি চেয়ারম্যান সাজেদুল ইসলাম স্বাধীনের উপস্থিতিতে সালিশ বৈঠকে ‘ছেলের প্রেমের সম্পর্কের জন্য’ ছকু মিয়াকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সেই টাকার জন্য ছকুর একমাত্র ঘরটিও ১৫ হাজারে বিক্রি করে দেন দাদন কারবারিরা। এরপর তাকে ভিটেছাড়া করা হয়। পরে ছকু মিয়া আশ্রয় নেন গাজীপুরে ছেলের বাসায়। সেখানে হাসপাতালের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী চিকিৎসা নেয়ার সময় ৩ জুন মৃত্যু হয় তার।

মামলার বাদী ছকু মিয়ার ছেলে তৈরি পোশাককর্মী মোজাম্মেল হক জানান, জরিমানার বাকি ৩৫ হাজার টাকার জন্য তার বাবাকে ভিটেছাড়া করা হয়। টাকা না দেয়া পর্যন্ত তাদের বাড়িতে না আসতে হুমকিও দেয়া হয়।

তিনি বলেন, ‘আমার বাপকে ওরা সারা রাত মারপিট করে। আব্বা পানি চাইছিল; ওরা পানিও খেতে দেয় নাই। এ জন্য আব্বা আজ চলে গেছে। আমি এ হত্যার বিচার চাই!’

মোজাম্মেল বলেন, ‘আমার মা তিন বছর আগে মরছে। আব্বাও চলে গেছে। ঘরটাও ভাঙি নিচে। আমরা এখন ইতিম (এতিম) দুই ভাই-বোন কোনটে যামো।’

বাদী পক্ষের আইনজীবী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘নির্যাতনে মৃত্যু হয়েছে রিকশাচালক ছকু মিয়ার। নির্যাতনের ঘটনায় নিহতের ভিডিও বক্তব্যসহ পত্র-পত্রিকার কাটিং আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে। আশা করছি, আমার মক্কেল ন্যায়বিচার পাবেন।’

এ বিভাগের আরো খবর