সারা দেশে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভ্যান চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বরিশালের রিকশা চালকরা। ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ করা হলে তারা আন্দোলন এবং অনশনের হুমকি দিয়েছেন। করোনা মহামারির সময় বিকল্প কর্মসংস্থান নিশ্চিত না করে এই রিকশা বন্ধ করে সরকার গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন রিকশা শ্রমিক নেতারা।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সরকার সারা দেশে ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রোববার সড়ক পরিবহনবিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের সভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘সারা দেশে রিকশা-ভ্যানের ভেতরে ব্যাটারিচালিত মোটর লাগিয়ে রাস্তায় চলছে। সামনের চাকায় শুধু ব্রেক। পেছনের চাকায় কোনো ব্রেক নাই কিংবা ব্রেকের ব্যবস্থা থাকলেও অপ্রতুল। সেগুলো যখন ব্রেক করে প্যাসেঞ্জারসহ গাড়ি উল্টে যায়। এ দৃশ্য আমরা দেখেছি। আমরা দেখেছি হাইওয়েতেও এ রিকশা চলে এসেছে।’
জানা গেছে, বরিশাল নগরীতে ৮ হাজারের মতো ব্যাটারিচালিত রিকশা প্রতিনিয়ত যাত্রী পরিবহন করে থাকে।
এ রিকশা চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে কী করবেন – এমন প্রশ্নে বরিশাল নগরীর চকের পুল এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে যাত্রীর অপেক্ষায় বসে থাকা জাফর সিকদার বলেন, ‘মোরা গ্রামের মানু। কামের খোঁজে বরিশালে আইয়া কোনো কাম কাইজ না পাইয়া এহন রিকশা চালাইতেছি ম্যাট্রিক পাস কইরাও। যদি এই রিকশা না চালাই হেলে খামুডা কী? খালি তো এইডা বন্ধ করে, ওইডা বন্ধ করে। কিছু তো খুইলা দেতে পারে না। মোগো তো বাঁচতে হইবে, নাকি এহন চুরি ডাহাতি করতে নামমু?’
নতুন বাজার এলাকায় বসে কথা হয় রিকশা চালক মাইদুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, ‘প্রথমে যে সময় প্যাডেল রিকশা চালাইতাম তহন যারা ব্যাটারির রিকশা চালাইতো তারা আন্দোলন কইরা শহরের মধ্যে ওই রিকশা চালাইতে পারার একটা পারমিশন পাইছিল। একসময় দেখলাম প্যাডেল রিকশা কইমা যাইয়া ব্যাটারির রিকশা বাড়তেছে, তহন মুইও ব্যাটারির রিকশা চালাইন্না শুরু করলাম। আর এহন আবার এই রিকশা বন্ধ করার ডিসিশন নেছে। বোঝলাম না কিছু, একবার চালানের পারমিশন, আরেকবার বন্ধ করার ডিসিশন দেয় কেমনে? এই করোনার মধ্যে যদি রিকশা বন্ধ কইরা দেয়, তয়তো না খাইয়া মরা ছাড়া উপায় নাই?’
ব্যাটারিচালিত ভ্যান চালক সুজন মিস্ত্রি বলেন, ‘ভ্যানে ব্যাটারির মেশিন লাগাইছি দুই মাস হইছে। এনজিও দিয়া লোন লইয়া অনেক কষ্ট কইরা এইটা করছি। এহন এই ভ্যান চলতে না দেলে কি করমু মাথায় কিছু ঢোকে না।’
বরগুনা জেলায় ৬ উপজেলা ও সদর মিলিয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা ৫ হাজার। ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্তের খবরে মাথায় হাত এসব রিকশা চালকদের।
মাইঠা চৌমুহনী এলাকার মোহাম্মদ কুদ্দুস বলেন, ‘ডেইলি দুইশ টাহা মালিকরে ভাড়া দিয়া রিকশাডা চালাই। বেইন্নাকালে নামি আর রাইতে বাড়ি যাই। ভাড়া দিয়া যা থাহে হেইয়াইদ্দা গুরাগারা লইয়া খাই। এইডা বন্দ অইলে খামু কী?’
ঢলুয়া ইউনিয়নের চালক জসিম মিয়া বলেন, ‘রিকশাডা চালাইয়া মোর সংসার চলে, এহন যদি সরকার এডা বন্দ হরে তয় কি খামু? ভাইব্বা চিন্তা সরকার কথা কয় না কেয়া?’
বরিশাল ব্যাটারিচালিত রিকশা শ্রমিক চালক সংগ্রাম কমিটির সভাপতি শাহজাহান মিস্ত্রি বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ দিন ধরে বরিশালে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের অনুমতির জন্য আন্দোলন করেছি। রাস্তায় পুলিশের হামলার শিকার হয়েছি। সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেই সিদ্ধান্তের কোনো ভিত্তি নেই। আমরা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পেট বাঁচাতে আন্দোলনে নামব।’
দীর্ঘবছর যাবৎ ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকদের পক্ষে আন্দোলনকারী বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বরিশাল জেলা শাখার সদস্য সচিব ডা. মণীষা চক্রবর্তী বলেন, ‘ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত পুরোপুরি গণবিরোধী। কোভিডকালীন বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে সরকার কীভাবে এমন সিদ্ধান্ত নেয়? এই রিকশাগুলো বন্ধ হয়ে গেলে হাজার হাজার চালক কীভাবে তাদের সংসারের ভরন-পোষণ চালাবে? শুধু বন্ধ করলেই হবে না, মানুষের কথা চিন্তা করতে হবে। আমরা এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে লাগাতার আন্দোলন করব। পাশাপাশি ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ করা তো চলবেই না, বরং এই রিকশাগুলোকে লাইসেন্স দেয়ার জোর দাবি থাকবে আমাদের।’