নরসিংদীতে ট্রাক-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে একই পরিবারের শিশুসহ পাঁচজন নিহতের ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে সাভারে তাদের গ্রামের বাড়িতে।
পাঁচদোনা-ঘোড়াশাল-টঙ্গী আঞ্চলিক মহাসড়কে শনিবার রাতের দুর্ঘটনায় নিহতদের দেহ রোববার আশুলিয়ার জিরাবো এলাকার বাড়িতে পৌঁছায়।
এরপর স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে চারপাশ। তাদের বিলাপে চোখ ভিজে ওঠে এলাকাবাসীরও। পরে সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে জানাজা শেষে মরদেহগুলো দাফন করা হয়।
নিহত পাঁচজন হলো একই পরিবারের তিন ভাই সাইফুল ইসলামের স্ত্রী মুক্তি আক্তার ও আট বছরের ছেলে মো. সাদেকুল, আব্দুর রশিদের স্ত্রী রুবি আক্তার ও পাঁচ বছরের মেয়ে মোছা. রহিমা এবং আরেক ভাই হারুন মিয়ার শাশুড়ি রোকেয়া বেগম।
আহতরা হলেন আব্দুর রশিদ, সাইফুলের ১২ বছরের মেয়ে সাইফা, হারুনের স্ত্রী শারমিন বেগম ও আট বছরের মেয়ে ইসরাত জাহান। এ ছাড়া ওই পরিবারের রাজিয়া বেগম, কাজিম উদ্দিন ও মোছা. সামসুন্নাহার নামে তিন স্বজনও আহত হয়েছেন।
সাভারের বাড়িতে মরদেহ পৌঁছানোর পর স্বজন ও এলাকাবাসীর ভিড়
রশিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গাড়িতে আমার স্ত্রী রুবি ও মেয়ে ইসরাত পেছনে ছিল। সাথে আরেক ভাইয়ের বউ-বাচ্চাও ছিল। হঠাৎ করেই কী হলো বুঝতে পারলাম না। আচমকা সব শেষ হয়ে গেল।
‘আমি দেখি গাড়িতেই বসে আছি। আর মানুষ খালি আমাদের সামনে এসে হাউকাউ করতেছে। আর আমাদের গাড়ির ভেতর থেকে বের করার চেষ্টা করছে।’
স্ত্রী ও ছেলে হারানো সাইফুল বিলাপ করছিলেন, ‘আমি কোনোদিনই ভাবতে পারিনি আমার স্ত্রী ও ছেলে সাদেকুল এভাবে মারা যাবে। মেয়ে সাইফা অল্পের জন্য বেঁচে গেছে। আমার সন্তান ও স্ত্রীকে আমি এখন কোথায় পাব?’
সুরাইয়া বেগম জানান, তার তিন চাচাতো ভাই সাইফুল, হারুন ও রশিদ সিলেটে শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। শুক্রবার রাত ৩টার দিকে বাচ্চাসহ ১৫ জন একটি গাড়িতে রওনা দেয়। তবে গাড়িতে ছিল শুধু রশিদ। সাইফুল ও হারুন বাড়িতেই ছিলেন।
সিলেটের বিভিন্ন মাজার ঘুরে সন্ধ্যায় আশুলিয়ায় বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয় তারা। পরে নরসিংদীতে সড়ক দুর্ঘটনায় তাদের মধ্যে পাঁচজন নিহত হয়।
প্রতিবেশী জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের এলাকায় এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা আগে ঘটেনি। এলাকার সবাই আমরা মর্মাহত।’
নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) এনামুল হক সাগর বলেন, দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাক ও মাইক্রোবাসটি জব্দ করা হয়েছে। তবে দুই যানের চালকই পলাতক। তাদের আটকের চেষ্টা চলছে।