বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘হাসিনা আপাকে হামার পক্ষ থাকা মেল্যা ধন্যবাদ’

  •    
  • ২০ জুন, ২০২১ ১৮:৩৪

‘হাসিনা আপা তার বাপ-মাও পরিবারের অনেক কাছের মানুষোক হারাছে। তাই হাসিনা আপা বাপ-মাও কী অমূল্য সম্পদ সেডা জানে। তাই তো দেশের হামাকে মতো গরিব মানুষোক ঘর দিচ্ছে। যা কোনোদিন ভাববারই পারিনি।’

নওগাঁ সদর উপজেলার হাপানিয়া ইউনিয়নের উল্লাসপুর গ্রামের মৃত তপির উদ্দিনের স্ত্রী খুকি বানু। স্বামী মারা গেছেন প্রায় ১৫ বছর আগে। তার কোনো ছেলেসন্তান নেই। যেটুকু জমি ও ঘর ছিল, তা বিক্রি করে পাঁচ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। এরপর নিজে হয়ে পড়েন গৃহহীন।

ছয় বছর ধরে নিজ গ্রাম উল্লাসপুরে তৃতীয় মেয়ের স্বামীর বাড়ির উঠানে ছাউনির ঘরে থাকছেন। রোদ, বৃষ্টি কিংবা ঝড়ে সব সময় অনেক কষ্ট করে থাকতে হয় তাকে। মেয়ের স্বামী দিনমজুর; তারও নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা।

ভালো খাবার কিংবা নিজের ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে পারেন না খুকি। লজ্জায় জামাই বা মেয়েকেও বলতে পারেন না তার সমস্যার কথা। এমন জীবন-খেয়ার পথে নিজের ঘর হবে তা যেন কল্পনার মতো ছিল বিধবা খুকির কাছে।

স্থানীয় হাপানিয়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তালিকা অনুযায়ী আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় রোববার বেলা ১১টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গৃহহীনদের ঘর প্রদান অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। এরপর নওগাঁর জেলা প্রশাসক হারুন অর রশীদ খুকি বানুকে ঘরের প্রয়োজনীয় চাবি ও দলিল তুলে দেন। ঘর পেয়ে খুকি বানুর চোখেমুখে ছিল আনন্দের অশ্রু।

এ সময় নিউজবাংলার প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় খুকি বানুর। ঘর পেয়ে কেমন লাগছে, জানতে চাইলে তিনি কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন, ‘বাপোরে ১০ বছর আগে হামার স্বামীডা মারা গেছে। হামার মাথার ছাতা চলা যাবার পর দুনিয়াডা হামার কাছে অন্ধকার হয়া যায়। কী করমু কেংকা করা চলমু মেয়েগুলাক বিয়া দেয়া, মানুষ করা। দিন-রাত সেই ভাবনা মাথার ওপর ভর করা থাকিচ্ছিল। হামার যেকনা জমি ও ঘর আসলো সব বেচা দিয়া মেয়েগুলাক বিয়া দিয়া হামিই হয়া গেছি ঘরহীন। কোনো বেডাছোল নাই হামার।’

খুকি বানু বলেন, ‘ঘরবাড়িহীন বিধবা মানুষ হামি। কখনো এই মেয়ের বাড়ি তো কখনো ওই মেয়ের বাড়িত থাকা লাগিছে। লজ্জাও লাগে হামার এভাবে মেয়েজামাইগুলার বাড়িত থাকতে। এরপর গত ছয় বছর ধরা নিজ গ্রামোত বিয়া দেয়া তৃতীয় মেয়ের জামাই রফিকুল ইসলামের বাড়ির উঠানোত খরের চালা দেয়া এক ছোট ঘরোত থাকিচ্ছি। মনডা চাইলেও তেমন কিছু কবার পারি না। মন তো চায় অ্যানা লিজের স্বাদমতো খাবার-পরবার আর চিকিৎসা করবার, সেডাও হয়া ওঠে না। রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ের সময়োত খুব কষ্ট হয়। জামাইও গরিব মানুষ তাকও কিছু কবার পারি না।’

ঘর পেয়ে অনুভূতির কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন খুকি বানু। খুকি বলেন, ‘জীবনডার শেষ সময়োত নিজের ঘর হবে, সেই ঘরোত ঘুমাবার পারমু তা কোনো দিন ভাবিনি। স্বামী বাঁচা থাকতে কোনোদিন কষ্ট কি সেডা বুঝবার দেইনি। গরিব মানুষ হামরা তবুও স্বামী মেল্যা কষ্ট করাও হলেও সব সাধ-আল্লাদ মিটাছে হামার ও হামার ছোলগুলার।

‘হাসিনা আপা তার বাপ-মাও পরিবারের অনেক কাছের মানুষোক হারাছে। তাই হাসিনা আপা বাপ-মাও কী অমূল্য সম্পদ সেডা জানে। তাই তো দেশের হামাকে মতো গরিব মানুষোক ঘর দিচ্ছে। যা কোনোদিন ভাববারই পারিনি।’

খুকি বানু আরও বলেন, ‘আজক্যা ঘর দিবে জানবার পারা নাতনি রিফা মুনিক লিয়্যা আসিছি ডিসি স্যারের কাছে ঘরের দলিল ও চাবি বুঝা লিবার। লাঠি ধরা হাঁটি বাপো খুবই কষ্ট হয়, একা একা হাঁটবার পারি নাকো। চোখেও আগের মতো আর ভালো করা দেকপার পারি না। অন্তত জীবনডার শেষ সময়োত তো নিজের ঘরোত ঘুমাবার পারমু যতদিন বাঁচমু। এডাই মনের শান্তি। হাসিনা আপাক হামার পক্ষ থাকা মেল্যা ধন্যবাদ ও দোয়া করিচ্ছি। আপাডা যেন ভালো থাকে। হামাকে দেশের জন্যি, দেশের গরিব মানুষের জন্যি যান আরও ভালো ভালো কাজ করবার পারে। একন যে বিধবা ভাতা পাই সেডা দিয়াই কোনো রকম করা খাইয়া-পরা বাঁচা থাকা লাগবে। তয় লিজের ঘরোত থাকপার পারমু, এডাই বড় কথা।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর পাওয়া গৃহহীন মানুষের অভিব্যক্তি যেন পরিমাপযোগ্য নয়। একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল তাদের পরম চাওয়া। সেই বাসনা পূরণ হয়েছে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের মাধ্যমে।

এ প্রকল্পের আওতায় সারা দেশে ৫৩ হাজার ৩৪০টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঘর দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে নওগাঁর ১১টি উপজেলায় মোট ৫০২টি পরিবার ঘর পেয়েছে।

নওগাঁ সদর উপজেলা অডিটরিয়ামমে রোববার বেলা ১১টায় সংক্ষিপ্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জেলা প্রশাসক মো. হারুন অর রশিদ, সিভিল সার্জন এ বি এম আবু হানিফ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ কে এম চিশতী, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার হারুন অল রশিদ, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নির্মল কৃষ্ণ সাহাসহ উপস্থিত ছিলেন আরও অনেকে।

জেলা প্রশাসক মো. হারুন অর রশীদ বলেন, ২ শতাংশ খাসজমির ওপর প্রতিটি পরিবারের জন্য আলাদা ঘর তৈরি করা হয়েছে। এসব ঘরে দুটি কক্ষ, একটি টয়লেট, রান্নাঘর, কমন স্পেস ও একটি বারান্দা আছে। প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯১ হাজার টাকা।

এর আগে ২৩ জানুয়ারি জেলায় ১ হাজার ৫৬টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে উপহারের ঘর বিতরণ করা হয়।

এ বিভাগের আরো খবর