প্রথম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে বরগুনার ২৯টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল সোমবার। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে ভোটের প্রচার। প্রচারে গিয়ে প্রার্থীরা একে-অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন।
জেলার আমতলী উপজেলার আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রার্থী হয়ে লড়ছেন সোহেলী পারভীন মালা। একই ইউনিয়নে তাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হচ্ছে পাঁচ প্রার্থীর সঙ্গে।
সোহেলী পারভীন মালা উপজেলার আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি ওই ইউনিয়নের প্রয়াত ইউপি চেয়ারম্যান এ কে এম নুরুল হক তালুকারের স্ত্রী।
নুরুল হক তালুকদার ২০২০ সালের ৪ জুলাই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তিনি আড়পাঙ্গাশিয়া ইউপির তিনবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন।
প্রথম ধাপের ইউপি নির্বাচনে বরগুনা জেলার ২৯টি ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে প্রায়াত নুরুল হক তালুকদারের স্ত্রী সোহেলী পারভীন মালাকে মনোনয়ন দেয়া হয়।
সোহেলী পারভীন মালা জেলার একমাত্র নৌকা মনোনীত নারী প্রার্থী। তিনি পটুয়াখালীর রাঙাবালী উপজেলার বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের টানা তিনবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান আবু হাসনাত আবদুল্লাহর মেয়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মালার বিপরীতে ওই ইউনিয়নে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ। এ ছাড়া রাকিবুল ইসলাম দেলোয়ার, সদরুল ইসলাম মনির, মাহবুবুর রহমান জাফর বিশ্বাস ও হুমায়ুন কবীর বাচ্চু মিয়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন।
ভোটাররা বলছেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকার সোহেলী পারভীন মালার সঙ্গে আবুল কালামের।
ভোটের মাঠে প্রথম হলেও স্বামী প্রয়াত নুরুল হক তালুকদার একাধিকবার নির্বাচনে অংশ নেয়ায় স্ত্রী হিসেবে প্রচারে মালার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। সে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবার নিজ নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা চালান মালা।
এ ছাড়া ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে রাজনীতিতে তার পদচারণ আগে থেকেই। ইউপি চেয়ারম্যান বাবার রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে ওঠা, বিয়ের পর স্বামীর রাজনীতির খাতিরে ইউনিয়নের রাজনীতিতে আগে থেকেই তিনি দক্ষ। ফলে নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রচার-প্রচারণায় খুব একটা বেগ পেতে হয়নি।
প্রয়াত চেয়ারম্যান নুরুল হক তালুকদারে মৃত্যুতে স্ত্রী প্রার্থী হওয়ায় মালার প্রতি এলাকাবাসীর একধরনের ‘সিমপ্যাথি’ কাজ করছে। সবকিছু মিলিয়ে তিনি ভালো অবস্থানে রয়েছেন বলে জানান অনেক ভোটার।
মালা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার স্বামী আমৃত্যু এই ইউনিয়নের মানুষের পাশে থেকে সেবা করেছেন। তার অকালমৃত্যুতে আমি ভেঙে পড়েছিলাম। আমার ছেলে সন্তান নেই, দুটো মেয়ে নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় পড়েছিলাম। এ অবস্থায় এলাকার লোকজন আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সাহস জুগিয়ে ভরসা দিয়ে পাশে থেকেছেন।’
মালা আরও বলেন, ‘স্বামীর মৃত্যুর পর আমার মনে হয়েছে এলাকার লোকজন তাদের অভিভাবক হারিয়েছেন। তাদের আবদারে আমি একপর্যায়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমায় মনোনয়ন দিয়ে সম্মানিত করেছেন। প্রধানন্ত্রীর মনোনয়নের সম্মান রাখতে আমি মানুষের কাছে ভোট প্রার্থনা করি।’
তবে রাজনীতি নামের পিচ্ছিল পথটা মালার জন্য সুখকর ছিল না। প্রচারে নেমে প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের রোষের শিকার হয়েছেন একাধিকবার।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে থেকে প্রচার চালিয়ে আসছিলাম। কিন্তু বিএনপি-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ একাধিকবার আমার কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা করেছেন। এ পর্যন্ত আমার ২০ জনেরও বেশি কর্মী-সমর্থককে আহত করা হয়েছে। এ ছাড়া তিনটি প্রচার কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়েছে।’
১৯ জুন নির্বাচনি প্রচার শেষ হয়েছে। ২১ জুন ২৯টি ইউনিয়নের মতো আড়পাঙ্গাশিয়াতেও ভোট গ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন।