সদ্য ঘোষিত আলফাডাঙ্গা উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক পদে স্থান পান ছাত্রদলের প্রথম সারির এক নেতা। জানাজানি হওয়ার পর শনিবার ওই বিতর্কিত নেতাকে বিতাড়িত করেছে উভয় দলই।
অভিযোগ, রায়হান রনি নামের ওই নেতা উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক পদে থাকা অবস্থাতেই উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পান।
রায়হান রনি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা পৌরসভার আলফাডাঙ্গা মৌজার বাসিন্দা। পড়াশোনা করেন যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে।
ছাত্রদল ও ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ছয় মাস আগে ২৩ জানুয়ারি ২১ সদস্যবিশিষ্ট আলফাডাঙ্গা পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়। ওই কমিটির ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছে রায়হান রনির নাম।
অপরদিকে গত ১২ জুন আলফাডাঙ্গা পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের নাম ঘোষণা করে আংশিক কমিটি অনুমোদন করে জেলা ছাত্রলীগ। ঘোষিত ওই কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে রয়েছে মোহাম্মদ রায়হান রনির নাম।
স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, ছাত্রদলের রায়হান রনি ও ছাত্রলীগের মোহাম্মদ রায়হান রনি একই ব্যক্তি।
এ নিয়ে মোহাম্মদ রায়হান রনি বলেন, ছাত্রদলের রায়হান রনি আর তিনি এক ব্যক্তি নন। তিনি আজীবন ছাত্রলীগ করেছেন, ছাত্রদল তিনি করেননি। ছাত্রদলের রায়হান রনিকে তিনি চেনেনও না।
ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তামজিদুল রশীদ চৌধুরী রিয়ান জানান, তার জানামতে ছাত্রদলের রায়হান রনি আর ছাত্রলীগের রায়হান রনি এক ব্যক্তি নন। তারপরও কেউ যদি প্রমাণ দিতে পারে এই দুই রনি একজনই তাহলে রায়হান রনির বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ছাত্রলীগে কোনো বিতর্কিত লোকের স্থান হবে, না এমনকি অন্য যেকোনো রাজনৈতিক সংগঠন করে ছাত্রলীগে আসা যাবে না।
অবশ্য এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টা পর শনিবার বিকেলে ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তামজিদুল রশীদ চৌধুরী রিয়ান ও সধারণ সম্পাদক ফাহিম আহম্মেদের যৌথ স্বাক্ষরিত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘সংগঠনের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপের অভিযোগের ভিত্তিতে মোহাম্মদ রায়হান রনিকে (সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, আলফাডাঙ্গা পৌর শাখা) নিজ পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হলো।’
শনিবার অপর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সৈয়দ আদনান হোসেন অনু ও সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হাসান কায়েস বলেন, ‘সংগঠনের শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও নীতি-আদর্শচ্যুতির অভিযোগ সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হওয়ায় মোহাম্মদ রায়হান রনি, প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, আলফাডাঙ্গা পৌর শাখাকে প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও বহিষ্কার করা হলো।’
আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আকরাম হোসেন বলেন, ‘জেলা থেকে কখন কী কমিটি ঘোষণা করে, আমাদের কাছ থেকে মতামত বা পরামর্শও নেয় না। ছাত্রলীগের এই কমিটি ঘোষণার ক্ষেত্রেও আমার কাছ থেকে কোনো পরামর্শ নেয়া হয়নি। এখন শুনছি, ছাত্রদলের এক নেতা কমিটির বড় পদ পেয়েছেন।’
এদিকে নিজেকে শুধু ছাত্রলীগ নেতা দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা পৌরসভার বাসিন্দা মোহাম্মদ রায়হান রনি। শনিবার দুপুরে আলফাডাঙ্গা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন বলে জানান।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমি আজীবন ছাত্রলীগ করেছি। রাজপথে থেকে মিটিং মিছিল করেছি। আমাকে নিয়ে একটি কুচক্রী মহল হীনস্বার্থ হাসিলে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র করছে। যুবদলের যে রায়হান রনির কথা বলা হচ্ছে, সে ব্যক্তি আমি নই। আমি যদি বিএনপির কোনো কর্মী হতাম, তাহলে কোথাও না কোথাও তাদের সঙ্গে আমার ছবি থাকত। আমি এই ভিত্তিহীন মিথ্যা সংবাদের প্রতিবাদ জানাই।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আলফাডাঙ্গার পৌর মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুর রহমানসহ নেতারা।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আব্দুল্লা আল মিলন জানান, ছাত্রদলের রায়হান রনি ও ছাত্রলীগের মোহাম্মদ রায়হান রনি একই ব্যক্তি।