কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ১৫ ঘণ্টায় নয়জনের মৃত্যুর পর দেখা দিয়েছে উদ্বেগ। হাসপাতালে দেখা দিয়েছে শয্যা-সংকট। চাহিদামতো অক্সিজেনও পাওয়া যাচ্ছে না।
শুক্রবার রাত থেকে শনিবার বিকেল পর্যন্ত এই মৃত্যু হয়। এর মধ্যে সাতজন রাতে, একজন সকালে ও আরেকজন বিকেলে মারা গেছেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় নতুন করে ১১২ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হারও প্রায় ৩২ শতাংশ।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার তাপস কুমার সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘এটি কুষ্টিয়া এক দিনে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু।’
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল মোমেন বলেন, ‘রোগী বাড়ছে।’
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘সঠিক নিয়মে মাস্ক পরতে হবে। করোনা নিয়ন্ত্রণের জন্য সবার চেষ্টা থাকতে হবে।’
হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডে ১০০ শয্যার বিপরীতে এখন রোগীর সংখ্যা ১১৩ জন।
ওয়ার্ডে নতুন করে আর কোনো রোগী ভর্তির সুযোগ নেই। এই পরিস্থিতিতে হাসপাতাল থেকে ৩০ জন সাধারণ রোগীকে পাশের মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ডায়াবেটিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
হাসপাতালে অক্সিজেন-সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো থেকে যেসব রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে, সেসব রোগীর প্রায় সবার অক্সিজেন প্রয়োজন হচ্ছে।
কঠোর বিধিনিষেধ
এই পরিস্থিতিতে গত রাতে জেলার করোনা কমিটির মিটিং হয়েছে। সেখানে প্রশাসনকে কঠোর হতে বলেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। সেই মোতাবেক পুলিশ ও প্রশাসন কাজ করছে।
জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি গত ১১ জুন মধ্যরাত থেকে পৌর এলাকায় সাত দিনের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে। তবে এই বিধিনিষেধ অনেকটা কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ ছিল। মাঠপর্যায়ে তা খুব একটা কার্যকর হতে দেখা যায়নি।
শুক্রবার ওই বিধিনিষেধের মেয়াদ শেষ হলে নতুন করে আরও সাত দিন কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হয়। শনিবার সকাল থেকে এই বিধিনিষেধ কার্যকর করতে প্রশাসনের ব্যাপক তৎপরতা লক্ষ করা গেছে।
শুক্রবার কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পিসিআর ল্যাবে মোট ৩৬১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ১১২টি নমুনা পজিটিভ হয়।
নতুন শনাক্ত রোগীর মধ্যে সদর উপজেলায় সর্বোচ্চ ৭৫ জন। এ ছাড়া কুমারখালী উপজেলায় ১৬ জন, মিরপুর ও খোকসায় ৪, দৌলতপুরে ৫ ও ভেড়ামারায় ৮ জন।
এ নিয়ে জেলায় মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৬ হাজার ১৭৫ জন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৪ হাজার ৯৬৯ জন। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১৪৮ জন।