বরিশালের উজিরপুরে সাড়ে চার কিলোমিটার সড়কে নিম্নমানের সংস্কারকাজ করায় স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে সেই সড়কের কিছু অংশের পিচ ঢালাই তুলে ফেলেছেন। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর এটি আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
উজিরপুরের সানুহার-ধামুরা সড়কের সাড়ে চার কিলোমিটার সংস্কারে অনিয়মের অভিযোগ এনে ১০ জুন সেখানকার লোকজন রাস্তার পিচ তুলে ফেলেন। ফেরদাউস খান আশিক নামের এক ব্যক্তির ফেসবুক আইডি থেকে এটি লাইভ করা হয়, যা মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে সড়ক সংস্কার করায় কাজ শেষ হতে না-হতেই সড়কের কয়েকটি অংশের পিচ ঢালাই (কার্পেটিং) উঠে গেছে। পাথর, বিটুমিনসহ চলমান সংস্কারকাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে যান চলাচল শুরু হওয়ায় এই কার্পেটিং অনেক জায়গায় উঠে গেছে।
শুক্রবার বিকেলে ধামুরা এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, উপজেলার সানুহার বাসস্ট্যান্ড থেকে ধামুরা বন্দর পর্যন্ত সাত কিলোমিটার সড়কের মধ্যে সাড়ে চার কিলোমিটার সড়কের সংস্কারের কাজ চলছে। সড়কের সেনেরহাট বাজারসংলগ্ন এলাকায় ঠিকাদারের লোকজন গাছের পাতা ও ময়লা-আর্বজনা পরিষ্কার না করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
নিয়ম অনুসারে কমপ্রেশার মেশিন দিয়ে সড়ক পরিষ্কার করে প্রাইম কোট দিয়ে পিচ ঢালাইয়ের কাজ হওয়ার কথা। তা না করে গাছের পাতা ও ময়লার ওপরই চলছে কার্পেটিংয়ের কাজ।
সড়কের প্রায় আড়াই কিলোমিটার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নিম্নমানের বিটুমিন, বালি, পাথরের মিশ্রণে কাজ করায় যানবাহন চলাচলের সময় চাকার সঙ্গে অনেক জায়গার কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে।
চলতি বছরের শুরুর দিকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে পল্লী সড়ক ও ব্রিজ-কালভার্ট মেরামতকরণ জিওবি মেইনটেন্যান্স প্রকল্পের আওতায় খানাখন্দে ভরা সাড়ে চার কিলোমিটার সড়কের সংস্কার অনুমোদন হয়।
সানুহার-ধামুরা সড়কের কচুয়া থেকে ধামুরা বন্দর পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার অংশ সংস্কারের জন্য চলতি বছরের শুরুর দিকে দরপত্র আহ্বান করা হয়। যার প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
১৮ শতাংশ কমে ১ কোটি ৯৩ লাখ টাকায় কাজটির কার্যাদেশ পায় মেসার্স মিজান মীম ও আলিফ ট্রেডার্স (জেবি) নামের যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চলতি বছরের শুরু থেকে আগামী ৩০ জুনের মধ্যে কাজটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
তবে অভিযোগ উঠেছে, নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু করতে না পারায় শেষ সময়ে এসে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের মাধ্যমে তড়িঘড়ি করে কাজটি শেষ করার চেষ্টা করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
কচুয়া গ্রামের বাসিন্দা নিবির বাড়ৈ ও ইমন হাওলাদারসহ একাধিক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, সড়কটি সংস্কারে এতটা নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে যে, কাজ শেষ হতে না-হতেই সড়কের অনেক অংশের পিচ ঢালাই উঠে গেছে। হাত দিয়ে টান দিলেই পিচ উঠে যাচ্ছে।
নিম্নমানের কাজ করার অভিযোগ অস্বীকার করে ঠিকাদার মাহবুবুর রহমান মিরন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটি বরিশাল জেলার সবচেয়ে বড় মেরামতকাজ। এটি স্বয়ং এলজিইডি বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী দেখভাল করেন। প্রতিনিয়ত কাজের মান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। তারপরেও নির্মাণকাজে কোনো ত্রুটি থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যে ব্যবস্থা নেবে আমরা সেটা মানতে রাজি।’
মিরন পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ‘গত ৯ জুন বিকেলে কচুয়া পল্লী বিদ্যুতের সাব সেন্টার-সংলগ্ন এলাকা থেকে কাশিং ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়কের পিচ ঢালাইয়ের কাজ করা হয়। কিন্তু ওই দিন রাতের আঁধারে সড়কের কয়েকটি স্থান থেকে কতিপয় দুর্বৃত্ত সেই পিচ ঢালাই লোহার রড কিংবা শাবল দিয়ে উঠিয়ে ফেলেছে। পরবর্তী সময়ে আমরা সেটা ঠিক করে দিয়েছি।’
সংস্কারকাজে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না জানিয়ে উজিরপুর উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মীর মাহিদুল ইসলাম বলেন, সড়কটির পুরুত্ব হবে ২৫ মিমি। সে অনুযায়ী সংস্কারকাজ চলছে এবং গুণগত মান এখন পর্যন্ত ঠিক রয়েছে।