বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘টিউ’র মায়ার জালে বন্দি তারা

  •    
  • ১৭ জুন, ২০২১ ২৩:২৬

দেলোয়ারা বুলবুলি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের একাকী সময়; আমরা হরিণশাবকটির মায়ায় জড়িয়ে পড়েছি। একসময় টিউকে বনে ফিরিয়ে দিতে হবে, এমন ভাবতেই মন ভার হয়ে যায়। অজানা শঙ্কা কাজ করে, টিউ কি ফিরতে পারবে স্বাভাবিক জীবনে? ফিরে পাবে কি ওর মাকে? নাকি কোনো শিকারির খাদ্যে পরিণত হবে টিউ?’

যেন দিনভর দুষ্টুমি করতেই ভালো লাগে তার। এ জন্য দোতলা বাড়ির বারান্দা, পড়ার টেবিল, রান্নাঘর থেকে শুরু করে সব জায়গায়ই অবাধে ঘুরতে থাকে। ছোটাছুটি করতে করতে একটু ক্লান্তি এলে শুয়ে চোখ বুজে ঘুমের ভান ধরে থাকে।

একটু শব্দ হলেই কান খাড়া করে ফেলে। এদিক-সেদিক তাকিয়ে শব্দের উৎস খুঁজতে চেষ্টা করে। কেবল ক্ষুধা পেলেই গৃহকর্ত্রীর কদর বাড়ে তার কাছে। আঁচল কামড়ে পেছনে পেছনে ঘুরঘুর শুরু করে।

একটা পর্যায়ে খাবার প্রস্তুত করে ‘টিউ’ বলে ডাকতেই লাফাতে লাফাতে চলে যায় গৃহকর্ত্রীর কাছে। এরপর সন্তানের মতো খুনসুটি করতে করতে সাবাড় করে বোতলের দুধ।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের সময় জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয় উপকূলীয় নিম্নাঞ্চল। ২৭ মে পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের হরিণঘাটা বনাঞ্চল এলাকায় প্রবল জোয়ারে বলেশ্বর নদে ভেসে যাচ্ছিল চিত্রল প্রজাতির এই হরিণশাবকটি।

স্থানীয় লোকজন দেখতে পেয়ে বিষয়টি বন বিভাগকে জানান। হরিণঘাটা এলাকার বিট কর্মকর্তা কাওসারসহ বন কর্মীরা হরিণশাবকটি উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। শীত আর ভয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছিল হরিণশাবকটি।

প্রাণিসম্পদ বিভাগের চিকিৎসক খবর দিয়ে তার পরামর্শে চিকিৎসা দেয়া হয়। এরপর বিট কর্মকর্তা কাওসারের হরিণঘাটা বনসংলগ্ন দোতলা সরকারি বাসভবনে নিয়ে আসা হয়। এখন সেখানেই আছে হরিণশাবকটি।

বন কর্মকর্তা গোলাম কাওসারের স্ত্রী দেলোয়ারা বুলবুলি সন্তানের মতোই পরম মমতায় লালন-পালন করছেন টিউকে। নিয়মিত ফিডারের দুধ খাওয়াচ্ছেন। টিউও বাধ্য সন্তানের মতো তার কোলে শুয়ে ফিডারের দুধ পান করে। তবে অপরিচিত মানুষ দেখলেই দিগ্বিদিগ ছোটাছুটি শুরু করে, লুকিয়ে পড়ে খাটের নিচে।

দেলোয়ারা বুলবুলি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের দুই মেয়ে। বিয়ের পর ওরা মেহেরপুরে শ্বশুরবাড়িতে থাকে। স্বামীর চাকরি সূত্রে আমি থাকি এখানে। আমাদের একাকী সময়; আমরা হরিণশাবকটির মায়ায় জড়িয়ে পড়েছি।

‘একসময় টিউকে বনে ফিরিয়ে দিতে হবে, এমন ভাবতেই মন ভার হয়ে যায়। অজানা শঙ্কা কাজ করে, টিউ কি ফিরতে পারবে স্বাভাবিক জীবনে? ফিরে পাবে কি ওর মাকে? নাকি কোনো শিকারির খাদ্যে পরিণত হবে টিউ?’

পাথরঘাটার হরিণঘাটা রেঞ্জের বিট কর্মকর্তা গোলাম কাওসার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ইয়াসে প্লাবিত হয়ে সুন্দরবন থেকে হরিণশাবকটি ২৭ মে পাথরঘাটার হরিণঘাটা এলাকার বলেশ্বর নদে চলে আসে।

‘স্থানীয়রা সেটি উদ্ধার করে আমাদের খবর দেন। আমি চিকিৎসা দিয়ে হরণটি নিজের বাসায় রেখেছি। ও একটু বড় হলে বনে ফিরিয়ে দেয়া হবে।’

প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হরিণ

গত ২৬ মে বুধবার সন্ধ্যার দিকে পাথরঘাটার হরিণঘাটা বনাঞ্চল থেকে সাঁতার কেটে একটি হরিণ পশ্চিম চরলাঠিমারা গ্রামে প্রবেশ করে। তবে কুকুরের কামড়ে মারা যায় সেটি।

বন বিভাগ সূত্র জানায়, গত ২৬ ও ২৭ মে ইয়াসের প্রভাবে সুন্দরবনের কচিখালী অভয়ারণ্য ও দুবলার চর থেকে দুটি এবং শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের তাফালবাড়ি গ্রাম থেকে একটি ও রায়েন্দা ইউনিয়নের রাজেশ্বর গ্রাম থেকে একটি মৃত হরিণ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থেকে দুটি জীবিত হরিণ উদ্ধার করা হয়।

বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে ৫-৬ ফুট পানি উঠে যায় সুন্দরবনে। পানিতে ডুবে বন্য প্রাণী মারা যায়। ইয়াসের সময় চারটি মৃত ও তিনটি জীবিত হরিণ আমরা উদ্ধার করি।’

উপকূলীয় ইকোফরেস্ট ও ট্যুরিজম নিয়ে কাজ করেন আরিফ রহমান।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়ে প্রতিবছর বেশ কিছু হরিণ মারা যায়। এর মধ্যে অধিকাংশই হরিণশাবক। জলোচ্ছ্বাসের সময় আশ্রয় নেয়ার জন্য কোনো উঁচু স্থান পায় না বন্য প্রাণীরা। ফলে বানে ভেসে মারা যায়, আবার ভেসে লোকালয়ে চলে এসে শিকারে পরিণত হয়।

আরিফ রহমান বলেন, বন্য প্রাণীকে অবশ্যই দুর্যোগের সময় সুরক্ষা দিতে হবে। এ জন্য ইকোফরেস্টের ভেতরে একাধিক উঁচু ঢিবি করা উচিত। নয়তো বিরল প্রজাতির হরিণ বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বন বিভাগ পাথরঘাটার রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মনিরুল হক বলেন, ‘দুর্যোগের সময়ে যাতে বন্য প্রাণী নিরাপদে আশ্রয় নিতে পারে, তা ভাবার সময় এসেছে। ষাটের দশকে সৃষ্ট হরিণঘাটা বনের প্রাণীর নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে। আমরা বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলছি। আশা করি, শিগগিরই উদ্যোগ নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর