রংপুরের মিঠাপুকুরে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে সোনালী ব্যাংকের টাকা লুটের চেষ্টা সফল না হলেও সাত বছর আগে একই রকম একটি ঘটনায় সফল হয় দুর্বৃত্তরা।
কিশোরগঞ্জ জেলা শহরে সোনালী ব্যাংকের ভল্ট থেকে টাকা লুট করা হয় পাশের একটি বাসা থেকে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে।
২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি সে সময় হাতিয়ে নেয়া হয় প্রায় ১৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এর জন্য ব্যাংকের পাশে বাড়ি ভাড়া নিয়ে প্রায় দুই বছর ধরে সুড়ঙ্গ কাটা হয় বলে জানিয়েছিল র্যাব।
টাকা চুরির তিন দিনের মাথায় এক সহযোগীসহ ঢাকার কদমতলী থানার বালুর মাঠ এলাকা থেকে মো. হাবিব ওরফে সোহেল ওরফে ইউসুফকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরে তার কাছ থেকেই উদঘাটন হয় রহস্যের।
র্যাবকে হাবিব জানান, তিনি দুবাইয়ে নির্মাণশ্রমিকের কাজ করতেন। দেশে ফিরে তার এক স্বজনকে পাঁচ লাখ টাকা ধার দেন। তিনি ওই টাকা শোধ করতে না পেরে হাবিবকে কিশোরগঞ্জের সোনালী ব্যাংকের ভল্ট থেকে টাকা চুরির পরামর্শ দেন।
হাবিব জানান, সুড়ঙ্গ কাটা শুরুর দেড় বছর পর তিনি ব্যাংকের ভেতরে পর্যন্ত পৌঁছানোর রাস্তা তৈরি করেন। ব্যাংক থেকে তিনি পাঁচটি বস্তায় টাকা চুরি করেন। সকালে বাড়ির পাশের চালের দোকান থেকে ২৩০ বস্তা চাল কেনেন। এরপর ১২ হাজার টাকায় ঢাকা আসার জন্য ট্রাক ভাড়া করেন। বাড়তি চালের বস্তাগুলো পরে ফরিদপুরে আটরশি পীরের ওরসে দান করেন হাবিব।
ব্যাংকের তৎকালীন ডিজিএম শেখ আমান উল্লাহ কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় মামলা করেন। পরে র্যাবের একটি দল ঢাকা থেকে চুরির ঘটনায় জড়িত সন্দেহে হাবিব ওরফে সোহেলকে গ্রেপ্তার করে।
তার স্বীকারোক্তিতে পরে আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরা হলেন হাবিবের ভাই ইদ্রিস মুন্সী, হাবিবের সহযোগী মাহিলা আক্তার হিমা, সিরাজ উদ্দিন ভুঁইয়া এবং আবু বকর সিদ্দিক।
ঘটনার প্রায় ছয় মাস পর ২০১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাবের তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজীব কুমার দেব আদালতে চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। অভিযোগপত্র থেকে আবু বকর সিদ্দিককে অব্যাহতি দেয়া হয়।
টাকা চুরির জন্য দুই বছর ধরে খোঁড়া সুড়ঙ্গ
মামলায় একপর্যায়ে দোষ স্বীকার করে নেয়ার পর আদালত হাবিবকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দেয়।
তবে অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা এখনও শেষ হয়নি। তারা বর্তমানে জামিনে রয়েছেন।
কিশোরগঞ্জ জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে বিচারাধীন মামলাটির ৭২ সাক্ষীর মধ্যে এখন পর্যন্ত ২৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ সোনালী ব্যাংকের বর্তমান সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, চুরি যাওয়া টাকার মধ্যে ১৬ কোটি ২২ লাখ ২ হাজার ৮৮৭ টাকা উদ্ধার হয়েছে। বাকি ১৭ লাখ ৯৭ হাজার ১১৩ টাকা পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, ‘মামলার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আমাদের নিয়োজিত আইনজীবীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। কিন্তু মামলার সাক্ষীরা আদালতে এসে সাক্ষ্য না দেয়ার কারণে কার্যক্রম এগোনো যাচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘ব্যাংকের আগের ভবনটি সুরক্ষিত ছিল না। চুরির পর ব্যাংকটি অন্য জায়গায় সরিয়ে নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হয়েছে।’
সোনালী ব্যাংকের আইনজীবী লুৎফর রাশিদ রানা বলেন, ‘সোহেলের সাজা হওয়ার পর অন্য আসামিরা কেউ আড়াই বছর, কেউ সাড়ে তিন বছর হাজতবাসের পর জামিনে রয়েছেন। মামলা শেষ হতে আরও চার-পাঁচ বছর লাগতে পারে।’
তিনি জানান, ১২ এপ্রিল আদালতে মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণের সর্বশেষ তারিখ ছিল। করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে নতুন করে তারিখ ঠিক করা হয়নি।
কিশোরগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের পেশকার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মামলার সাক্ষীরা তারিখ মোতাবেক না আসায় কার্যক্রমে দেরি হচ্ছে। তাদের প্রতি বারবার সমন জারির পরেও অনেকেই আদালতে এসে সাক্ষ্য দিতে অনীহা প্রকাশ করছে।’