বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মেহেরপুরের তিন গ্রামে এ কেমন লকডাউন

  •    
  • ১৫ জুন, ২০২১ ২৩:১৬

করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় মেহেরপুরের দুটি উপজেলার তিনটি গ্রামে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে এটি কার্যকর করার কথা থাকলেও কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। সুস্থ মানুষের সঙ্গে করোনা রোগীরাও ঘুরে বেড়াচ্ছেন যত্রতত্র।

করোনা আক্রান্ত, অথচ বাজারে যাচ্ছেন ওষুধ আনতে। আরেকজন চায়ের দোকানে দিচ্ছেন আড্ডা। ঘরে আবদ্ধ থাকার কথা থাকলেও বাড়ির পাশের মাচা বা গাছের নিচে বসে থাকছেন কেউ কেউ।

অনেকে আবার করোনা রোগীকে দেখতে আসছেন ফলমূল নিয়ে। এই হলো মেহেরপুরের তিন গ্রামে ‘কঠোর লকডাউন’-এর চিত্র।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ায় মুজিবনগর উপজেলার আনন্দবাস এবং গাংনী উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া ও হিন্দা গ্রামে মঙ্গলবার থেকে লকডাউন ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন। তবে তিন গ্রাম ঘুরে কোথাও ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে জানানো হয়, উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামে ১৮ জন ও হিন্দা গ্রামে ২৩ জন করোনায় আক্রান্ত। গত ১২ জুন ওই এলাকায় মেডিকেল ক্যাম্প করে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষায় ২৯ জনের মধ্যে ১৬ জনের দেহেই করোনা শনাক্ত হয়। তবে পরদিন থেকে কেউ আর নমুনা দেয়নি।

করোনা সংক্রমণের এমন অবস্থায় সোমবার দুপুরে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি ওই দুই গ্রামসহ মুজিবনগরের আনন্দবাসে লকডাউন ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপনের জারি করে।

বিকেলেই দুই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার পুলিশ নিয়ে লকডাউনের আওতায় থাকা এলাকাগুলোতে লাল পতাকা টাঙিয়ে দেয়। বাঁশের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয় সড়ক যোগাযোগ।

তবে মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত লকডাউন এলাকা ঘুরে দেখা যায়নি স্বাস্থ্যবিধি মানার লক্ষণ। অধিকাংশ মানুষের মুখেই ছিল না মাস্ক। শারীরিক দূরত্ব রক্ষাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাইও ছিল না। এমনকি করোনা পরীক্ষার নমুনা দেয়া লোকজনও ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন যত্রতত্র।

যাতায়াতে মানা হচ্ছে না শারীরিক দূরত্ব

তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামে ইউপি সদস‍্য কটা আহমেদ নিউজবাংলাকে জানান, তার ওয়ার্ডে করোনা রোগীরাও ঘরে থাকছেন না। বাড়ির পাশে মাচায় বা চায়ের দোকানে বসে থাকছেন। কেউ কেউ গোখাদ্য সংগ্রহের জন্য ক্ষেত-খামারেও যাচ্ছেন। আবার তাদের আত্মীয়রাও অন্য রোগী দেখতে আসার মতো ফলমূল নিয়ে বাড়িতে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, এ মুহূর্তে পরীক্ষা করলে গ্রামে শতকরা ৮০ জনের করোনা পজিটিভ হবে।’

তিনি জানান, তার গ্রামে ভারত ও বাংলাদেশের মানুষ একই সঙ্গে এক মাঠে মরিচ তোলার কাজ করছে। তার পাশের গ্রামেও অনেক মানুষ জ্বর, ঠাণ্ডা ও কাশিতে ভুগছে। তবে বাড়ি লকডাউনের ভয়ে কেউ করোনা পরীক্ষা করছে না।

হিন্দা গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, করোনা আক্রান্ত রিপন আলী বাড়িতে নেই। তিনি ওষুধ কিনতে গাংনী বাজারে গেছেন।

রিপনের বাবা ইউনুস আলীর অভিযোগ, স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন তাদের খোঁজখবর নেন না। বাধ্য হয়ে অন্য চিকিৎসক ও ফার্মেসিতে যেতে হচ্ছে।

ঠিকমতো স্বাস্থ্যসেবা না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন স্থানীয় লোকজনও। ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারে মাস্ক ছাড়া অন্য সেবা পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ তাদের। করোনা রোগীর চিকিৎসায় গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আইসোলেশন সেন্টার নেই বলেও দাবি করেছেন তারা।

তারা জানান, গত বছর দেশে করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরোনো ভবনে ১০ শয্যার একটি কক্ষ আইসোলেশন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে ভবনটি সংস্কার করার কারণে তিন মাস আগে কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেয়া হয়।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এম কে রেজার দাবি, এলাকার লোকজন যে অভিযোগ করেছে, তা সঠিক নয়। হিন্দা ও তেঁতুলবাড়িয়া এলাকায় করোনা আক্রান্তদের স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছেন। জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য মোবাইল ফোন নম্বরও দেয়া হয়েছে।

এ ছাড়া হাসপাতালের অন্য ভবনে আইসোলেশন ওয়ার্ড চালুর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী খানম জানান, দুটি গ্রামে করোনা আক্রান্তদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। নিয়মিত পরিদর্শন করে খাদ্যসামগ্রী দেয়া হচ্ছে। আক্রান্তদের বাড়ি লকডাউন করে লাল পতাকাও টাঙানো হয়েছে। যারা বুঝতে না পেরে ঘরের বাইরে গেছেন, তাদের বিষয়টি বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।

মেহেরপুরের সিভিল সার্জন নাসির উদ্দিন নিউজবাংলাকে জানান, জেলায় এখন করোনা রোগীর সংখ্যা ১৯৭ জন। তাদের মধ‍্যে সদর উপজেলায় ৫০, গাংনী উপজেলায় ৮৯ ও মুজিবনগর উপজেলায় ৫৮ জন রয়েছেন।

এ বিভাগের আরো খবর