এবার চট্টগ্রামেও করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট তথা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পেয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডাইরিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) একদল গবেষক।
চট্টগ্রামের সাতটি করোনা পরীক্ষার ল্যাব থেকে ৪২ জন করোনা রোগীর নমুনা পরীক্ষা করে দুইজনের নমুনায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পান তারা। তবে এই দুইজনের কেউই সম্প্রতি ভারতে যাননি বা ভারতফেরত কারও সরাসরি সংস্পর্শে আসেননি।
সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ এবং ঢাকার আইসিডিডিআরবির একটি যৌথ গবেষণায় চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত রোগীদের নমুনায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট তথা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। একই সাথে নাইজেরীয় ইটা ভ্যারিয়েন্ট, যুক্তরাজ্যের আলফা ভ্যারিয়েন্ট এবং দক্ষিণ আফ্রিকান বিটা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। গবেষণায় অর্থায়ন করেছেন বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের (বিএমআরসি)।
চলতি বছরের মের শেষ সপ্তাহে চট্টগ্রামের সাতটি করোনা পরীক্ষাগার থেকে ৮২টি নমুনা সংগ্রহ করে জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য ঢাকার আইসিডিডিআরবিতে পাঠায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল। এর মধ্যে ৪২টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের ফলাফল পর্যালোচনা করে দুটি নমুনায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট তথা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যায়। পাশাপাশি ৩৩টি নমুনায় আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট, তিনটি নমুনায় নাইজেরীয় ভ্যারিয়েন্ট এবং চারটি নমুনায় যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যায়। অর্থাৎ প্রাপ্ত ফলাফলে ৪২টি নমুনায় ৪.৮ শতাংশ ভারতীয়, ৭.২ শতাংশ নাইজেরীয়, ৯.৫ শতাংশ যুক্তরাজ্যের এবং ৭৮.৫ শতাংশ দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে।
ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়া দুজন রোগী সম্প্রতি ভারত যাননি, ভারতফেরত কারও সংস্পর্শেও আসেননি। তবু তাদের নমুনায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়ায় চট্টগ্রামে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের কমিউনিটি সংক্রমণ শুরু হয়েছে বলে ধারণা করছেন গবেষকরা।
এ বিষয়ে গবেষণা দলের প্রধান এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. আল ফোরকান নিউজবাংলাকে বলেন, ’এটি একটি চলমান গবেষণা। এই পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিভাগের সাতটি কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ ল্যাব থেকে সংগ্রহ করা ৪২টি নমুনার ধরন বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ২টি (৪.৮%) ভারতীয় (ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট), ৩টি (৭.২%) নাইজেরীয় (ইটা ভ্যারিয়েন্ট), ৪টি (৯.৫%) যুক্তরাজ্যের (আলফা ভ্যারিয়েন্ট) এবং বাকি ৩৩টি (৭৮.৫%) দক্ষিণ আফ্রিকার (বিটা ভ্যারিয়েন্ট) শনাক্ত হয়। ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত দুইজন রোগীর কেউই সম্প্রতি ভারতে যাননি এবং তাদের জানামতে ভারতফেরত কারও সংস্পর্শেও আসেননি।‘
তিনি বলেন, ’বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী চীনের উহান থেকে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়া কোভিড-১৯ সংক্রমণের শুরু থেকে এই পর্যন্ত সার্স-কভ-২ (করোনাভাইরাস) মোট ১০ বার রূপ পরিবর্তন করেছে। এর মাধ্যমে মূলত ছয়টি দেশে (যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ আফ্রিকা, নাইজেরিয়া, ব্রাজিল এবং ভারত) অতিসংক্রমণ এবং মহামারি আকার ধারণ করে ভাইরাসটি।
‘আমাদের বর্তমান গবেষণায় চট্টগ্রামে ভারতীয়সহ চারটি ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বিভিন্ন দেশ থেকে এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণক্ষমতা অনেক বেশি এবং অতিসত্বর বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনাপূর্বক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এই ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে, যার পরিণতি ভারতের মতো ভয়াবহ হতে পারে।’
গবেষণা দলের সদস্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. লায়লা খালেদা বলেন, ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ সময় নতুন করে চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ার বিষয়টি খুব উদ্বেগজনক। এখনই সতর্ক না হলে সংক্রমণ কমানোর বিষয়টি অনিশ্চয়তার দিকে চলে যেতে পারে।’