সিলেটে আইনজীবী আনোয়ার হোসেন হত্যা মামলায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন তার স্ত্রী শিপা বেগম।
রোববার সন্ধ্যায় তিনি সিলেট মুখ্য মহানগর হাকিম সাইফুর রহমানের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন তিনি।জবানবন্দিতে বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে স্বামী আনোয়ার হোসেনকে ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে হত্যা করেছেন বলে জানান শিপা।গত ১ মে নগরের তালতলা এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেনের মৃত্যুর খবর জানতে পারেন স্বজনরা।
ওইদিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শিপা বেগম স্বজনদের জানান, ৩০ এপ্রিল সেহরি খাওয়ার পর ঘুমিয়ে পড়েন আনোয়ার। পরদিন দুপুরে বিছানায় মৃত অবস্থায় তাকে দেখতে পান তিনি।
কোনো রকম থানা-পুলিশ ছাড়াই ওই রাতে তাকে দাফন করা হয়।
পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, আনোয়ার মারা যাওয়ার ১০ দিন পর শিপা বেগম আনোয়ারের খালাত ভাই শাহজাহান চৌধুরী মাহিকে বিয়ে করেন। এতে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সন্দেহ হয়। এর জেরে পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
প্রায় এক মাস আগের এই মৃত্যুর ঘটনায় মঙ্গলবার থানায় মামলা করেন নিহতের ভাই মনোয়ার হোসেন। বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে এই হত্যা করা হয় বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে। এতে মাহিকে প্রধান আসামি ও শিপা বেগমকে দ্বিতীয় আসামিসহ আট জনের নামসহ অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করা হয়।
মামলা পর ৩ জুন শিপা বেগমকে নগরের তালতলা বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপরদিন আদালতের মাধ্যমে তাকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। রিমান্ডে শিপার বিয়ে বর্হিভূত সম্পর্কের তথ্য জানতে পারে পুলিশ। রিমান্ড শেষে রোববার তাকে আদালতে হাজির করা হলে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।আদালতে শিপা বেগমের জবানবন্দির বরাত দিয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বলেন, বিয়ে বর্হিভূত সম্পর্কের জেরে আইনজীবী আনোয়ার হোসেনকে হত্যা করেন শিপা। খালাতো ভাই শাহজাহান চৌধুরী মাহির সাথে তার সম্পর্ক ছিল।
মাহির যোগসাজশে শিপা বেগম ঘুমের ট্যাবেলেট খাইয়ে তার স্বামীকে হত্যা করার কথা আদালতে স্বীকার করেছেন। তারা ২৮ এপ্রিল ঘুমের ওষুধ কিনে আনেন। এরপর ২৯ এপ্রিল রাতে আনোয়ার হোসেনকে ১০টি ঘুমের ওষুধ খাওয়ান। পরদিন তিনি মারা যান।এ মামলার অপর আসামি শাহজাহান চৌধুরী মাহি এখনও পলাতক রয়েছেন। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী এএসএম আব্দুল গফুর জানান, আনোয়ার হোসেনের অগোচরে স্ত্রী শিপা বেগমের পরকীয়া সম্পর্ক চলছিল শাহজাহান চৌধুরী মাহি নামের একজনের সঙ্গে। এর জেরেই আনোয়ার হোসেনকে হত্যা করা হয়।নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ৩০ এপ্রিল বিকেল ৩টার দিকে স্ত্রী শিপ্রা বেগম সবাইকে জানান, আনোয়ার হোসেন ডায়াবেটিকস নীল হয়ে মারা গেছেন। পরে তাকে নিজের গ্রামের বাড়ি সিলেট সদর উপজেলার শিবেরবাজারের দীঘিরপার গ্রামে দাফন করা হয়।পরবর্তীতে আনোয়ার হোসেনের পরিবার জানতে পারে, পরকীয়ার জেরে আনোয়ার হোসনকে হত্যা করেন স্ত্রীসহ কয়েকজন মিলে। এ ঘটনায় ১ জুন সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হত্যা মামলার আবেদন করেন আনোয়ার হোসেনের ভাই মনোয়ার হোসেন। পরে আদালতে শুনানি শেষে কোতোয়ালি থানার ওসিকে ৩০২ ধারায় মামলা করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন বিচারক।মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইয়াছিন আলী জানান, আনোয়ার হোসেন মারা যাওয়ার মাত্র ১০ দিনের মাথায় শিপা বেগম তার খালাতো ভাই কানাইঘাটের বাসিন্দা (বর্তমানে নগরের উপশহর এলাকায় বসবাসকারী) শাহজাহান চৌধুরী মাহিকে বিয়ে করেন। এরপর থেকে আনোয়ারের পরিবারের সঙ্গেও শিপা যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এ থেকে তাকে সন্দেহ করছে আনোয়ারের পরিবার।গত ২ জুন রাতে অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন হত্যা মামলায় তার স্ত্রী শিপা বেগমকে সিলেট নগরীর তালতলা এলাকার একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ৩ জুন দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এর আগে ১ জুন থানায় মামলা করেন নিহতের ভাই, সিলেট সদর উপজেলার শিবেরবাজারের দীঘিরপার গ্রামের বাসিন্দা মনোয়ার হোসেন।মামলায় বিয়ে বর্হিভূত সম্পর্কের জেরে আনোয়ার হোসেনকে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়। এতে নিহতের খালাতো ভাই শাহজাহান চৌধুরী মাহিকে প্রধান আসামি ও নিহতের স্ত্রী শিপা বেগমকে দ্বিতীয় আসামি করা হয়। এছাড়া মোট ৮ জনের নামসহ ও অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করা হয়।