বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

টিলাভাঙনে বিলীন হচ্ছে ত্রিপুরা পল্লি

  •    
  • ১২ জুন, ২০২১ ১০:০৭

ত্রিপুরা পল্লির বাসিনা সনতি দেববর্মা বলেন, ‘রাতে যখন আমরা ঘুমে থাকি, তখন হঠাৎ টিলায় ভাঙন দেখা দেয়। যে অবস্থায় টিলা ভাঙছে, আমাদেরকে এ বছর চলে যেতে হবে। নাহলে মাটিচাপা পড়ে এখানে মরতে হবে।’

হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের একটি টিলার ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে একটি ত্রিপুরা পল্লি। স্থানীয়রা বলছেন, উদ্যানের বিভিন্ন জায়গা থেকে বালু তোলায় পাহাড়ি ঢল শুরু হলেই ভাঙছে টিলাটি।

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে যাওয়া ঢাকা-সিলেট পুরাতন মহাসড়কের দক্ষিণ দিকের টিলায় ২৪টি ত্রিপুরা পরিবারের বাস। পাঁচ বছরে ভাঙনের শিকার হয়ে বাসস্থান হারিয়েছে চারটি পরিবার। বাকি পরিবারগুলোরও দিন কাটছে ভাঙন আতঙ্কে।

ত্রিপুরা পল্লির বাসিন্দারা জানান, কয়েক বছর ধরে পাহাড়ি ঢলের কারণে ভাঙন দেখা দেয় ত্রিপুরা পল্লির টিলায়। এ কারণে সেখান থেকে ২০১৮ সালে দুটি ও ২০১৯ সালে একটি পরিবার ও চলতি বছরের এপ্রিলে আরও একটি পরিবার টিলা ছেড়ে চলে যায়।

এদের মধ্যে দুটি পরিবারকে অন্য একটি টিলায় স্থানান্তর করে বন বিভাগ। এক বছর ধরে এদের একটি পরিবারকে উদ্যানের রেস্ট হাউসে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিনে দেখা যায়, এ বছরের পাহাড়ি ঢল এখনও শুরু না হলেও প্রতিদিন ভাঙছে টিলা। এতে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে পল্লির বাসিন্দাদের। যাতায়াতের একমাত্র রাস্তাটিও ভেঙে গেছে। এ কারণে অনেক কষ্টে পল্লিতে যাতায়াত করতে হচ্ছে তাদের। ভাঙনের কারণে আরও দুটি পরিবার সেখান থেকে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, নির্বাচনের সময় জনপ্রতিনিধিরা গাইডওয়াল নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান। কিন্তু পরে আর কেউ তাদের খবর নেন না।

২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন নিজস্ব অর্থায়নে টিলার ভাঙন ঠেকাতে গাইডওয়াল নির্মাণ করে দেন। কিন্তু ঢলের প্রকোপে সেটি বেশি দিন টেকেনি। পড়ে আবার নতুন করে ভাঙন দেখা দেয়।

স্থানীয়দের আশঙ্কা, যে হারে টিলা ভাঙছে, দুই-তিন বছরের মধ্যে এটি পুরোপুরি বিলীন হয়ে যাবে।

ত্রিপুরা পল্লির বাসিনা সনতি দেববর্মা বলেন, ‘রাতে যখন আমরা ঘুমে থাকি, তখন হঠাৎ টিলায় ভাঙন দেখা দেয়। আমাদের বাবুল তন্তবায়, সুনিল তন্তবায়ের পরিবারসহ চারটি পরিবার টিলা ভাঙনের কারণে অন্য জায়গায় চলে গেছে। যে অবস্থায় টিলা ভাঙছে, আমাদেরকে এ বছর চলে যেতে হবে। নাহলে মাটিচাপা পড়ে এখানে মরতে হবে।’

ত্রিপুরা পল্লির হেডম্যান চিত্ত দেববর্মা বলেন, ‘টিপরা পল্লিতে আগে অনেক মানুষের বাস ছিল। এখানে আমাদের খবর কেউ নেয় না। বিভিন্ন সমস্যার সময়ও আমাদের দুঃখ-কষ্ট কেউ শোনে না। শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান ও কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন সমস্যায় এখানের বাসিন্দারা অন্যত্র চলে গেছেন।

তিনি বলেন, ‘সবশেষ এখানে আমরা ২৪টি পরিবার ছিলাম। কিন্তু টিলা ভেঙে পড়ায় ইতিমধ্যে এখান থেকে আরও চারটি পরিবার চলে গেছে। নতুন করে আবারও ভাঙন দেখা দিয়েছে। আরও দুটি পরিবার এখান থেকে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘টিলায় ভাঙন দেখা দেয়ার এই জায়গাটিও আমরা হারাতে বসেছি। জানি না, আমাদের শেষ ঠিকানা কোথায় হবে?’

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যোনের রেঞ্জ কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে ত্রিপুরা পল্লির টিলাটি ভেঙে ভেঙে ছোট হয়ে আসছে। টিলার ভাঙনে বাসস্থান হারিয়ে কয়েকটি পরিবার এখান থেকে চলে গেছে। শুধু ত্রিপুরা পল্লি নয়, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের বিভিন্ন অংশ পাহাড়ি ঢলে ভেঙে পড়ছে। এমনকি উদ্যানের ভেতরে যাওয়ার জন্য যে একটি ব্রিজ রয়েছে সেটিও ভেঙে পড়ার উপক্রম। এ ছাড়া ওয়াচ টাওয়ারও অনেকটা ঝুঁকিতে রয়েছে।’

ভেঙে পড়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘একসময় সাতছড়ি উদ্যানের পাশের চা-বাগানগুলোর ছড়া থেকে প্রচুর পরিমাণে বালু তোলা হতো। যে কারণে ঢল হলেই পানির একটি টান পড়ে। এতে টিলায় ভাঙন দেখা দেয়। এ ছাড়া পাহাড়ি ঢল হলে টিলা ভাঙা তো স্বাভাবিক বিষয়।’

চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সত্যজিৎ রায় দাশ বলেন, ‘গত দুই বছরে সাতছড়ির টিপরা পল্লির ভাঙন প্রকট আকার ধারণ করেছে। আমি একাধিকবার পল্লি পরিদর্শন করেছি।’

তিনি বলেন, ‘২০২০ সালের প্রথম দিকে ভাঙন সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে আলাপ-আলোচনা চলছিল। তখন পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মহোদয় জায়গাটি পরিদর্শন করে গেছেন এবং এখানে গাইডওয়াল নির্মাণের জন্য উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়েছেন।’

হবিগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহানেওয়াজ তালুকদার বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমরা পল্লিটি পরিদর্শন করেছি এবং নকশা তৈরি করে ৮ কোটি টাকার একটি প্রাক্কলন ব্যয় মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজ কিন্তু নদীভাঙন বা নদীর সাথে সম্পৃক্ত আছে এমন কিছু। কিন্তু এটি বনের ভেতরে টিলাভাঙন। এর সম্পূর্ণ দায়িত্ব বন বিভাগের। যে কারণে অন্য দপ্তরের উন্নয়নের জন্য এই বিশাল অঙ্কের বাজেট বরাদ্দ দেয়া হবে কিনা তাও নিশ্চিত নয়।’

এ বিভাগের আরো খবর