পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার পূর্বদিকে আটঘর বাজার। বছরের জ্যৈষ্ঠ থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের নৌকার সবচেয়ে বড় হাট বসে এখানে।
ঝালকাঠির নবগ্রাম থেকেও আসা যায় এখানে। সন্ধ্যা নদীর শাখা আটঘর-কুড়িয়ানা খালে সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার বসে ডিঙিনৌকার হাট। বর্ষা মৌসুম এলেই আটঘর খালের পাড়ে আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাসমান নৌকার হাট জমজমাট হয়ে ওঠে।
সকাল ৮টা থেকে বিকেল অবধি খালের পাড়ে এবং সড়কের দুই পাশে ছোট ছোট ডিঙিনৌকার পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা। স্থানীয় কৃষক, জেলে, গৃহস্থরা ছাড়াও বরিশালের বানারীপাড়া, উজিরপুর, ঝালকাঠি সদর, রাজাপুর, পিরোজপুরের কাউখালী, নাজিরপুর থেকে মানুষ হাটে আসেন নৌকা কিনতে।
তারা ঘুরে ঘুরে দরদাম করে পছন্দের নৌকা কিনে নতুন নৌকা চালিয়ে বাড়ি ফেরেন। কেউ কেউ দু-তিনটি নৌকা কিনে তা ইঞ্জিনচালিত ভ্যানে তুলে নিয়ে যান।
এখানে নতুন নৌকার সঙ্গে বৈঠা দেয়া হয় না। কিনতে হয় আলাদা। সেটি পাওয়া যায় আটঘর নৌকার হাটের পাশেই।
হাটে ২ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকায় মিলবে কাঠের তৈরি ডিঙিনৌকা আর বৈঠার দাম আকারভেদে ৫০ থেকে ২৫০ টাকা।
স্বরূপকাঠির আকলম গ্রামের দ্বীন ইসলাম পেশায় নৌকা ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, তার বাবা এই হাটে নৌকা কেনাবেচা করতেন; এখন তিনি নিজে বর্ষা মৌসুমে এই ব্যবসা করেন।
আরেক ব্যবসায়ী সুলতান পাটওয়ারী বলেন, হাটের দিন ভোরে কারিগরদের কাছ থেকে নৌকা কিনে ট্রলারে করে হাটে নিয়ে বিক্রি করেন তিনি। বেচাকেনা ভালো হলে প্রতি হাটে ৩৫ থেকে ৪০টি নৌকা বিক্রি হয়। নৌকাপ্রতি লাভ হয় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। আবার কখনও লোকসানও গুনতে হয়।
হাটে নৌকা কিনতে আসা বানারীপাড়া উপজেলার বোর্ডস্কুল এলাকার সিরাজুল বলেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে তিনি আটঘর হাটে নৌকা কিনতে আসেন। ডিঙিনৌকা ১ বছর পর নষ্ট হয়ে যায়। কৃষিকাজ ও মাছ ধরার জন্য নৌকা কেনেন তিনি।
নেছারাবাদ উপজেলার সন্ধ্যা নদীর পশ্চিম পারের গ্রাম ডুবি, কাটাখালী, একতা ও চামী। এসব গ্রামের প্রায় অর্ধশত পরিবার নৌকা তৈরির পেশায় জড়িত। ৬০ বছর ধরে নৌকা তৈরি করে বিক্রি করেন বিপুল বিশ্বাস। তিনি বলেন, বাপ-দাদার আমল থেকে এখানে হাট বসে। ধীরে ধীরে হাটের ব্যাপ্তি বেড়েই চলেছে।
একসময় সুন্দরী কাঠ সহজলভ্য ছিল। তখন সুন্দরী কাঠ দিয়ে নৌকা তৈরি হতো। এখন সুন্দরী কাঠ পাওয়া যায় না তেমন। তাই কড়ই, চাম্বল ও মেহগনি কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয় নৌকা।