হেফাজতের তাণ্ডবে যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামো নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে বি ক্লাসের মর্যাদা হারাচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন। আপাতত ডি ক্লাসের স্টেশন হিসেবে এটি চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন।
তিনি বলেন, ডি ক্লাস স্টেশন হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশন চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যন্ত্রপাতি ও বিভিন্ন অবকাঠামো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় স্টেশনটি বি ক্লাসে রাখা সম্ভব না। তাই ডি ক্লাসে চলবে।
তিনি বলেন, ডি ক্লাসে শুধু যাত্রী ওঠানামা করা হবে। আর বুকিং সহকারীর মাধ্যমে টিকিট বিক্রি কার্যক্রম চালু করা হবে। এর বাইরে আর কোনো সুযোগ সুবিধা থাকবে না।
রেলওয়ে তথ্যমতে, রেলওয়েতে এ, বি, সি, ডি ও হল্ট স্টেশনের মাধ্যমে যাত্রী ওঠানামা ও অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। দেশে এখন এ-ক্লাস স্টেশন একটিও নেই। অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন বি-ক্লাসের।
মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাসিন্দারা স্টেশন চালু করতে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন। এর প্রেক্ষিতে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পরিবহন বিভাগ থেকে ৯ জুন একটি প্রস্তাব রেল মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি শিগগির স্টেশনটি আমরা চালু করব।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার সোয়েব আহমেদ বলেন, দুই মাসের বেশি সময় ধরে স্টেশন বন্ধ রয়েছে। যারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ট্রেনে যাত্রা করতেন, তারা এখন আখাউড়া, কসবা, আযমপুর, আশুগঞ্জ, তালশহর ও পাঘাচং থেকে যাত্রা করছেন।
ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পৌনে তিন কোটি টাকা
এদিকে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হেফাজতের তাণ্ডবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনের ১০টি খাতের সর্বমোট ২ কোটি ৬২ লাখ ৭১ হাজার ৪০৩ টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাণ্ডবে রেলওয়ে ট্র্যাকের ৭৪ লাখ ৮৪ হাজার টাকা, বাণিজ্যিক বিভাগের ৫৫ লাখ ৬৮ হাজার টাকা, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেমের ২৫ লাখ টাকা, সংকেত বিভাগের ৪৩ লাখ ৯৫ হাজার, সেতুর ২৫ লাখ, টেলিকমের ৩ লাখ ৯৫ হাজার, রেডিওর ২ লাখ ৮০ হাজার, ক্যারেজ (কোচ ও ওয়াগন) ২০ লাখ, লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) ২ লাখ এবং অন্যান্য বিভাগের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
প্রতিবেদনে সর্বমোট ২ কোটি ৬২ লাখ ৭১ হাজার ৪০৩ টাকা ক্ষয়ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
গত ২৬ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীরা। এ সময় অগ্নিসংযোগ করা হয় রেলস্টেশনের কন্ট্রোল প্যানেলে। জ্বালিয়ে দেয়া টিকেট কাউন্টার, বুকিং অফিস, প্ল্যাটফর্মে থাকা সকল মালামালসহ স্টেশনের প্রতিটি কক্ষ। স্টেশনের যাত্রীদের বসার চেয়ারও পুড়িয়ে দেয়া হয়। এই তাণ্ডবে পুরোপুরি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন। ঘটনার পর থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে সব ধরনের ট্রেনের যাত্রাবিরতি বন্ধ করে দেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।