বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বর্ষণে ধসের শঙ্কা, তবু পাহাড়ে বসবাস

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ১১ জুন, ২০২১ ১৭:৩৯

মাত্র বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে পাহাড়ের কিছু মাটি ধসে গেছে। বৃষ্টি এলে তারা রাতে ঘুমাতে পারেন না। আতঙ্কে ভোগেন। বড় ধসের আশঙ্কার মধ্যেও পাহাড়েই বসবাস খাগড়াছড়ির বহু পরিবারের।

তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে বিভিন্ন স্থানে ধসের আলামত দেখা দিচ্ছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে ঘটতে পারে বড় পাহাড়ধস। তবু ঝুঁকি নিয়ে খাগড়াছড়ির ৯ উপজেলায় পাহাড়ে এবং তার পাদদেশে বসবাস করছেন হাজার হাজার মানুষ।

শুধু খাগড়াছড়ি পৌর শহরেই পাহাড়ের গোড়ায় সাড়ে ৩ হাজারের বেশি পরিবারের বসবাস। ভারী বর্ষণেও তারা আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে ইচ্ছুক নন। প্রশাসনের সতর্কবার্তা তারা কানে তুলছেন না।

একটানা বৃষ্টি হলে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের সবুজবাগ, শালবাগান, কুমিল্লাটিলা, কলাবাগান, কদমতলীসহ শহরতলির বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। তা ছাড়া দীঘিনালা, রামগড়, মানিকছড়ি, লক্ষ্মীছড়ি, মহালছড়ি, পানছড়ি, গুইমারা, মাটিরাঙ্গা উপজেলার কিছু অংশ ঝুঁকিতে পড়ে।

সবুজবাগে গিয়ে দেখা যায়, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে পাঁচটি পাহাড়ের আংশিক ধসে পড়েছে।

এখানকার বাসিন্দা আব্দুল মোতালেব, রহুল আমিন ও সানজিদা খাতুন জানান, মাত্র বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে পাহাড়ের মাটি ধসে গেছে। এ জন্য বৃষ্টি হলেই আতঙ্কে ভুগতে থাকেন তারা। রাতে ঘুম আসে না। গত বছর এখানে পাহাড়ধস হলেও তা রোধে প্রশাসন কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

পাহাড়ধস রোধে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে স্থানীয় প্রশাসন যেসব উদ্যোগ নেয়, সেগুলো সবই সাময়িক। প্রশাসন স্থায়ী ও টেকসই কোনো পরিকল্পনা নেয় না।

কয়েকজন বাসিন্দা জানান, এখানে তারা বসবাস করছেন বছরের পর বছর। অন্য কোথাও তাদের থাকার জায়গা নেই। ভূসম্পত্তি ছেড়ে তারা অন্য কোথাও যেতেও চান না। তাদের অভিযোগ, অবৈধ বসতি স্থাপন এবং অপরিকল্পিতভাবে ঘরবাড়ি বানানোয় ধসের ঘটনা ঘটছে। অবৈধ পাহাড় কাটা রোধে স্থানীয় প্রশাসন নির্বিকার থাকে। ভূমিদস্যুরা পাহাড় কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে।

তা ছাড়া বিভিন্ন উন্নয়ন কাজেও নিয়ম না মেনে সরকারিভাবে পাহাড় কাটা হয়।

খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী জানান, পাহাড় কাটা রোধে আইনের প্রয়োগ নেই। কারণ সরকারিভাবেও পাহাড় কাটা হচ্ছে। ধস রোধে সরকারের কোনো টেকসই ব্যবস্থা নেই।

খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী জানান, পৌর এলাকায় চারটি জায়গায় পাহাড়ধসের ঝুঁকি আছে। প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বসবাসকারীদের সতর্ক করা হয়েছে। ঝুঁকিতে থাকা বাসিন্দাদের পৌরসভা সার্বিক সহায়তা করবে। ভবিষ্যতে পৌর আবাসন এলাকায় তাদের পুনর্বাসন করা হবে।

খাগড়াছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজা মতিন জানান, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসের শঙ্কা রয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় তাদের সার্বিক সব প্রস্তুতি রয়েছে।

খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, টানা বর্ষণ শুরু হলে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে পৌর এলাকায় কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সড়কে পাহাড়ধস হলে দ্রুত সময়ে তা সরানোর ব্যবস্থা নিতে ও জানমালের নিরাপত্তায় প্রস্তুতি সভায় অবহিত করা হয়। দুর্যোগ-সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। তা ছাড়া ভূমিকম্প হলে ক্ষয়ক্ষতি কমানোর প্রস্তুতি হিসেবে জেলার ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা তৈরির জন্য কমিটি গঠন করা হবে।

পরিবেশ নিয়ে কাজ করে এমন কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার জরিপ থেকে জানা গেছে, সদর উপজেলার সবুজবাগ, শালবাগান, কুমিল্লাটিলা, কলাবাগান, কদমতলীসহ ৯টিটি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ের পাদদেশে অপরিকল্পিতভাবে বসতি গড়ে তুলেছে প্রায় ৩০ হাজারেরও বেশি পরিবার। এ বছরও নতুন নতুন বসতি গড়ে ওঠায় গত বছরের তুলনায় ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারের সংখ্যা আরও অনেক বেড়ে গেছে।

বাংলাদেশ মৃত্তিকা গবেষণা ইনস্টিটিউটের মৃত্তিকা কর্মকর্তা মাহাবুব আলম জানান, পাহাড়ের মাটির ধরন ভিন্ন। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে মাটির ওপরের অংশ ক্ষয়ে যায়। পানি মাটির গভীরে প্রবেশ করে। এতে মাটির ভিত সরে যায়। ফলে পাহাড় ধসে পড়ে। এ ছাড়া পাহাড় কাটা, জুমচাষ, পাথর উত্তোলন, নির্বিচারে বৃক্ষ কর্তন ইত্যাদি কারণে পাহাড়ের মাটি দুর্বল হয়ে যায়। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে একসময় মাটি ধসে পড়ে।

খাগড়াছড়ির ৯ উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, গত দুই বছরে অন্তত ২০০ পাহাড়ে কোথাও আংশিক অথবা সম্পূর্ণ বৃক্ষশূন্য হয়ে গেছে। কেবল মাটিরাঙ্গা উপজেলাতেই কাটা হয়েছে শতাধিক পাহাড়। রাতের আঁধারে এগুলো কাটা হয়েছে।

মাটিরাঙ্গা উপজেলার গোমতি, তাইন্দং, তবলছড়ি, বেলছড়ি, খেদাছড়া, আদর্শ গ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় শতাধিক পাহাড় কাটা হয়েছে। বাড়ি নির্মাণ, রাস্তা সংস্কার, ইটভাটাসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের জন্য পাহাড় কাটছে একটি চক্র। দিনের আলোয় পাহাড় কাটা হলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবেশকর্মীরা। গত কয়েক বছর ধরে খাগড়াছড়িসহ তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড়ধসে প্রাণহানি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও পাহাড় কাটা বন্ধ হয়নি।

এ ছাড়া বেশির ভাগ পাহাড় কাটা হয়েছে খাড়াভাবে। এতে পাহাড়ধসের শঙ্কা আরও বেড়েছে। একই অবস্থা খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলায়। উপজেলা চোংড়াছড়িসহ খাগড়াছড়ি-মহালছড়ি সড়ক লাগোয়া বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় কাটা হয়েছে। মহালছড়ি উপজেলায় মহালছড়ি-চোংড়াছড়ি সড়কের শান্তিনগর এলাকায় খাড়াভাবে পাহাড় কাটা হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় শত ফুট উচ্চতার খাড়া পাহাড়ের একটি বড় অংশ কেটে নেয়া হয়েছে। একইভাবে পাহাড় কেটে সাবাড় করা হচ্ছে জেলার দীঘিনালা, রামগড়, পানছড়িতে।

এ বিভাগের আরো খবর