নোয়াখালীতে গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১১ জন। জেলা সিভিল সার্জন অফিস ৬ শতাধিক আক্রান্ত ও ৭ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে।
এছাড়াও বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে একই সময়ে আরও ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
নোয়াখালী জেলা সিভিল সার্জন অফিস, নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল, সুবর্ণচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ স্বাস্থ্য বিভাগ ও জেলা জনপ্রতিনিধিদের সূত্রে জানা গেছে, মাত্রাতিরিক্ত গরমে জেলার বেশিরভাগ পুকুর, দিঘি-নালা, নর্দমা শুকিয়ে গেছে। ফলে গভীর ও অগভীর নলকূপের পানির স্তর নেমে যাওয়ায় টিউবওয়েলের পানি লবনাক্ত ও দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে পড়েছে। এতে সুবর্ণচর, হাতিয়া, কোম্পানীগঞ্জ, সদর ও বেগমগঞ্জে ব্যাপকহারে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে।
নোয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা. মাছুম ইফতেখার জানান, গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৬০৬ জন। এর মধ্যে ৬ জন মারা গেছেন।
‘এর আগে এপ্রিল ও মে মাসে জেলায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ৪ হাজার ৭৭১ জন এবং মারা গিয়েছেন ১৪ জন।’
সুবর্ণচর, হাতিয়া, কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাটে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বেশি বলে জানিয়েছেন জেলা জনস্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সাইফ উদ্দিন মাহমুদ চৌধুরী।
হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় স্থান সংকুলান করাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছবি: নিউজবাংলা
সুবর্ণচর উপজেলার চরবাগ্গা এলাকার অধিকাংশ বাড়িতে ২/৩ জন করে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী রয়েছে। তবে এদের মধ্যে শিশু ও বয়োবৃদ্ধ রোগীর সংখ্যা বেশি বলে জানা গেছে।
স্থানীয় আবুল কাশেম, আবদুর রহমান, নুরুল হুদাসহ এলাকাবাসী জানান, দীর্ঘ সময় গরমে তাদের বাড়ির পুকুরগুলো শুকিয়ে গেলে তারা টিউবওয়েলের পানি ব্যবহার করছেন। টিউবওয়েলের পানির স্তর নেমে যাওয়ায় পানি আয়রন ও দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে পড়েছে। তাছাড়া বৃষ্টির পর পুকুরের জমানো পানি ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব কারণেই ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।
সুবর্ণচর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, তারা ডায়রিয়া আক্রান্ত এলাকা জরিপ করে দেখেছে, উপজেলার চরজব্বর, চরবাগ্গা, চর জুবলী এলাকায় আক্রান্তের হার বেশি। এই পরিস্থিতি আয়ত্বে আনতে সচেতন হওয়ার জন্য তারা প্রচার চালাচ্ছেন।
সুবর্ণচর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শায়লা জানান, কিছুতেই এ উপজেলার ডায়রিয়া পরিস্থিতি আয়ত্বে আনা যাচ্ছে না। এখানে ডায়রিয়ার এন্টিবায়োটিক ওষুধসহ পর্যাপ্ত কলেরা স্যালাইনেরও অভাব দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবারও উপজেলায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ইনচার্জ আনোয়ারা বেগম বলেন, গত ১০ দিনে আমাদের এই ওয়ার্ডে শিশুসহ ৫১৫ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে ৬ জন রোগী মারা গেছেন। ডায়রিয়ার এন্টিবায়োটিক ওষুধসহ পর্যাপ্ত স্যালাইনের সংকটের কথাও জানান তিনি।
এদিকে নোয়াখালী সদর, বেগমগঞ্জ ও চাটখিলেও ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। সরকারি হাসপাতাল ছাড়াও প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতেও ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হচ্ছেন। জেলায় কলেরা স্যালাইনসহ পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ রয়েছে বলে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার।