বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দাদন: এবার গেল ভ্যানচালকের প্রাণ

  •    
  • ১১ জুন, ২০২১ ০১:১৬

গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) তাজুল ইসলাম বলেন, 'জাহাঙ্গীর শেখ মাত্রাতিরিক্ত গ্যাসের ট্যাবলেট সেবনে অসুস্থ হয়ে পড়েন। শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। প্রাথমিক তদন্তে মাত্রাতিরিক্ত ট্যাবলেট সেবনে তার মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।'

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে দাদনের চাপে জাহাঙ্গীর শেখ নামের এক রিকশাভ্যান চালক মাত্রাতিরিক্ত গ্যাসের ট্যাবলেট খেয়ে মারা গেছেন। দাদনের চাপে দুই মাসের ব্যবধানে গাইবান্ধায় প্রাণ হারিয়েছেন তিন জন।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জাহাঙ্গীরের মৃত্যু হয়।

তার বাড়ি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার গুমানিগঞ্জ ইউনিয়নের নাগেরভিটা গ্রামে।

পরিবারের সদস্যরা জানান, এক বছর আগে স্থানীয় 'নাগের ভিটা' সমিতি থেকে সুদে ১০ হাজার টাকা নেন জাহাঙ্গীর শেখ। গত ১১ মাসের আসলের সুদের অর্থ পরিশোধ করেন তিনি। শুধু গত মাসের সুদের এক হাজার টাকা দিতে ব্যর্থ হন।

সকালে সবজি বোঝাই ভ্যান নিয়ে বগুড়ার মহাস্থান হাটে যাচ্ছিলেন জাহাঙ্গীর। কিছুদূর যাওয়ার পর দাদন কারবারি জহুরুল ইসলামসহ পাঁচ-ছয় জন তার পথরোধ করেন। এ সময় সুদের এক হাজার টাকা এক সপ্তাহ পরে দিতে চাইলে জাহাঙ্গীরকে চড়-খাপ্পড় মারেন তারা। পরে সব সবজি মাটিতে ফেলে ভ্যানটি নিয়ে যান সুদ কারবারিরা।

জাহাঙ্গীরের ভাই কুদ্দুস শেখ জানান, ঘটনার পর অপমান সইতে না পেরে তার ভাই মাত্রাতিরিক্ত গ্যাসের ট্যাবলেট সেবন করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রথমে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসক শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিতে বলেন। সেখানে সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়।

তিনি বলেন, 'মামলা করমো। ভাইয়ের মৃত্যু সুদেরুদের জন্যেই হচে। তামার পাওয়ার বাড়চে। ভ্যান খেনও নিচে।'

গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) তাজুল ইসলাম বলেন, 'জাহাঙ্গীর শেখ মাত্রাতিরিক্ত গ্যাসের ট্যাবলেট সেবনে অসুস্থ হয়ে পড়েন। শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।'

তিনি বলেন, 'প্রাথমিক তদন্তে মাত্রাতিরিক্ত ট্যাবলেট সেবনে তার মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।'

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম মেহেদি হাসান জানান, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভ্যানটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।'

এদিকে, সুদের টাকার জন্য গাইবান্ধা শহরের থানাপাড়া এলাকার জুতা ব্যবসায়ী হাসান আলীকে অপহরণের পর বাড়িতে আটকে রাখেন দাদনদার মাসুদ রানা। গত ১০ এপ্রিল সদর উপজেলার বল্লমঝার ইউনিয়নের নারায়ণপুর গ্রামের মাসুদ রানার বাড়ি থেকে হাসানের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এই ঘটনার দুই সপ্তাহ পর গত ২৬ এপ্রিল দাদনের চাপে গলায় ফাঁস দেন সদর উপজেলার খোলাহাটি ইউনিয়নের রথেরবাজার গ্রামের বাসচালক কোব্বাস আলী।

এসব ঘটনার মধ্যে সাদুল্লাপুরের পূর্ব দামোদরপুরে সুদের কারবারি ছয় ভাইর নির্যাতনে রিকশাভ্যান চালকের ছকু মিয়ার মৃত্যু হয়।

গাজীপুরের শ্রীপুরে ৩ জুন দুপুরে ছেলের বাসায় মৃত্যু হয় তার।

এর আগে গত ১৫ মে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের পূর্ব দামোদরপুর গ্রামে রিকশাভ্যানচালক ছকুর ওপর নির্যাতন চালানো হয়।

ছকুর পরিবারের অভিযোগ, গ্রামের ছয় ভাই আলমগীর, আংগুর, রনজু, মনজু, সনজু ও মন্টু মিয়া দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় দাদনের কারবার চালিয়ে আসছেন। গত ১৫ মে সন্ধ্যায় মন্টু মিয়ার মেয়ে প্রতিবেশী ছকুর ছেলের সঙ্গে পালিয়ে যান। খবর পেয়ে মন্টুসহ তার পাঁচ ভাই দল বেঁধে ছকুর বাড়িতে যান। তারা ছকুকে রাতভর পিটিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করেন।

পরিবারের সদস্যরা আরও জানান, পিটিয়ে তারা ছকুর এক হাত ও এক পা ভেঙে দেন। তার একটি দাঁতও ভাঙা হয়। রাতভর নির্যাতনের পরদিনও ছকুকে নিজের বাড়িতে বন্দি করে রাখা হয়।

১৬ মে বিকেল ৫টার দিকে পুলিশ ছকুকে উদ্ধার করে সাদুল্লাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

এ বিভাগের আরো খবর