ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার চরকান্দা গ্রামে এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগে তার স্ত্রী ও ছেলেসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পরকীয়ার জেরে ওই গৃহকর্তার স্ত্রীকে ফুসলিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা বৃহস্পতিবার স্বীকার করেছেন বলে জানায় পুলিশ। এদিন দুপুরে তাদের ফরিদপুরের জ্যেষ্ঠ হাকিমের ৩ নম্বর আমলি আদালতে তোলা হলে বিচারক আসিফ আকরামের সামনে সেকেন্দার আলীকে হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন বলে তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই আবুল কালাম আজাদ জানান।
গত বছরের ২৬ অক্টোবর ভাঙ্গার চরকান্দা গ্রামের একটি বিল থেকে সেকেন্দার আলী মোল্ল্যা নামে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার হয়। এই ঘটনায় নিহতের স্ত্রী হাফিজা বেগম বাদি হয়ে নিহতের বড় ভাই খোকন মোল্যা, কবিরউদ্দিন ও খলিল মোল্যাসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেন।
দীর্ঘদিন জমি ও রেললাইনের অধিগ্রহণকৃত এজমালি সম্পত্তির টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে তার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে বলে হাফেজা বেগম এজাহারে উল্লেখ করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আবুল কালাম আজাদ জানান, মামলা রুজুর পর থেকেই ওই গ্রামের আতিয়ার রহমান ভুলু মোল্যা নামে এক ব্যক্তি তাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। তিনি ভুলু মোল্ল্যার আচরণকে মামলার মূল সূত্র ধরে তদন্ত শুরু করলে রহস্য উদঘাটন হয়।
তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, নিহত সেকেন্দারের সঙ্গে ভুলু মোল্যার ভাল সম্পর্ক ছিল। এই সুবাদে তার বাড়িতে যাতায়াত ছিল ভুলুর। এক পর্যায়ে ভুলুর সঙ্গে সেকেন্দারের স্ত্রী হাফেজার পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
অন্যদিকে, বড় ভাই খোকন মোল্লা ও চাচাতো ভাই জমির মোল্লার সঙ্গে রেলওয়ের অধিগ্রহণের আওতায় পড়া ২৭ শতাংশ জমির প্রাপ্ত টাকা বন্টন নিয়ে বিরোধ ছিল সেকেন্দারের। আর গ্রাম্য দলাদলি ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ভুলুর সঙ্গে খোকন মোল্ল্যার বিরোধ ছিল। এই সুযোগকেই কাজে লাগান ভুলু। তখন তিনি সংসারের ঝামেলা ও টাকা পয়সার অভাবের কথা বলে সেকেন্দারকে হত্যায় স্ত্রী হাফেজাকে প্ররোচিত করেন ভুলু।
এসআই আবুল কালাম আজাদ আরও জানান, ঘটনার আগের সন্ধ্যায় পরিকল্পনা অনুযায়ী ভুলু হাফেজার হাতে চারটি ঘুমের ওষুধ দিয়ে সেগুলো সেকেন্দারকে খাওয়াতে বলে। পরদিন সন্ধ্যায় হাফেজা তার স্বামীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে পুকুরপাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে ভুলু ও তার ছেলে সম্রাট মিলে সেকেন্দার আলীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
এস আই আবুল কালাম আজাদ বলেন, সেকেন্দারকে হত্যার পর তার মরদেহ নৌকায় তোলার সময় সেকেন্দারের ছেলে হোসাইন তাদের দেখে ফেলে। এ সময় হোসাইনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাকে সঙ্গে নিয়ে নৌকায় সেকেন্দারের মরদেহ বিলের মাঝে ফেলে রেখে আসে।
মামলাটি তদন্তের একপর্যায়ে গত মঙ্গলবার ভুলু মোল্যা ও তার ছেলে সম্রাটকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে উদঘাটন হয় রহস্যের।
পরদিন বুধবার সেকেন্দার মোল্যার স্ত্রী হাফেজা বেগম ও ছেলে হোসাইনকে শাহ মুল্লুকদি গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।