বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দুই হাজার গ্রাহকের টাকা নিয়ে লাপাত্তা ব্যাংকের এজেন্ট

  •    
  • ১০ জুন, ২০২১ ১৯:০১

বণিক সমিতির সভাপতি আলহাজ গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘ব্যাংকে মানুষ আস্থা নিয়ে টাকা জমা রাখে আর তা লুট হয়ে যায়। আমি প্রশাসনের কাছে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করছি। গ্রাহকের কোটি টাকা নিয়ে এজেন্ট পালায়ে গেল অথচ সেটি ধরতেই পারল না ব্যাংকের কর্মকর্তারা।’

মৎস্যজীবী পিটু বিশ্বাস মাছ বিক্রি করে তিন লাখ টাকা জমিয়েছিলেন বাড়ি বানানোর জন্য। লাখে মাসিক ৮০০ টাকা পাবেন এই আশায় স্ত্রীর নামে তিন লাখ টাকা জামানত রেখেছিলেন।

মঙ্গলবার ব্যাংকে এসে জানতে পারেন তার নামে ব্যাংকের হিসাবে কোনো টাকাই জমা হয়নি।

একইভাবে মফিজুর রহমানের ১৫ লাখ টাকা, জাহাঙ্গীর শেখের ১২ লাখ টাকা, হাসান শেখের দেড় লাখ টাকাসহ কয়েক শ গ্রাহকের দুই কোটি জামানতের টাকার কোনো হদিস নাই।

অভিযোগ উঠেছে, নড়াইলে কালিয়া উপজেলার চাঁচুড়ী বাজারে প্রায় দুই হাজার গ্রাহকের তিন মাসের বিদ্যুৎ বিল ও জামানতের টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন ব্যাংক এশিয়ার এক এজেন্ট। টাকা জমা না হওয়ার খবরে ব্যাংকের সামনে ভিড় করছেন গ্রাহকরা।

এদিকে ব্যাংক থেকে গোপনে কম্পিউটার সরানোয় এবং ৫০ হাজার টাকা ভাড়া বকেয়া পড়ায় ব্যাংকে তালা ঝুলিয়েছেন ভবনমালিক।ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, খায়রুল ইসলাম নামের ওই এজেন্ট বিদ্যুৎ বিলের প্রায় পাঁচ লাখ টাকা ও জামানতের দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

ব্যাংক এশিয়া জানিয়েছে, ২০১৯ সালের জুনে চাঁচুড়ি বাজার শাখাটি স্থাপন করা হয়। এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ পান চন্দ্রপুর গ্রামের খায়রুল বাশার। শাখাটিতে এখন ডিপিএস, মেয়াদি আমানত ও সঞ্চয়ী হিসাব মিলে এক হাজার ৩০০ গ্রাহক নিয়মিত লেনদেন করেন।

এর মধ্যে বেশির ভাগই মেয়াদি আমানতের গ্রাহক। প্রতি মাসে দুই হাজারেরও বেশি বিদ্যুৎ গ্রাহক বিল পরিশোধ করেন।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ব্যাংকটিতে পল্লী বিদ্যুতের বিল নেয়া শুরু হয়। আশপাশের চার ইউনিয়নের প্রায় দুই হাজার গ্রাহক এখানে বিদ্যুৎ বিল জমা দেন। মার্চ মাস থেকে বিদ্যুৎ বিলে বকেয়া আসতে থাকায় গ্রাহকরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, জমা করা বিলের টাকা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে জমা হয়নি।

এ অবস্থা পরবর্তী এপ্রিল ও মে মাসে চলতে থাকে। বিদ্যুৎ বিলের হিসাবের গরমিলের কারণে ধীরে ধীরে বের হতে থাকে অন্য জামানতের টাকার হিসাব।

গ্রাহকরা জানান, ব্যাংকিং পদ্ধতির বাইরে নিজ উদ্যোগে তাদের এককালীন জামানতে মাসিক বেশি টাকা দেয়ার লোভ দেখিয়ে কয়েক শ গ্রাহকের কাছ থেকে জামানত নিয়ে ব্যাংকে জমা না দিয়ে নিজে হাতিয়ে নেন খায়রুল। এ ছাড়া এজেন্ট অফিসে ১০ থেকে ১২ জন কর্মী নিয়োগ দিয়ে তাদের কাছ থেকে জনপ্রতি দুই-চার লাখ টাকা নিয়েছেন তিনি।

চাঁচুড়ি বাজার বণিক সমিতির সভাপতি আলহাজ গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘ব্যাংকে মানুষ আস্থা নিয়ে টাকা জমা রাখে আর তা লুট হয়ে যায়। আমি প্রশাসনের কাছে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করছি। গ্রাহকের কোটি টাকা নিয়ে এজেন্ট পালায়ে গেল অথচ সেটি ধরতেই পারল না ব্যাংকের কর্মকর্তারা!’

ব্যাংক এশিয়ার নড়াইল জেলা ম্যানেজার ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘ব্যাংকের প্রকৃত ভাউচারে টাকা গ্রহণ করলে গ্রাহক তা ফেরত পাবে। মূলত এজেন্ট ব্যাংকে টাকা জমা হবার পরে রসিদ প্রিন্ট হয়ে বের হয়, এখানে অধিকাংশ ভাউচারই নকল।’

ঢাকা থেকে আসা ব্যাংক এশিয়ার অডিটর আব্দুল্লাহ বাকী বলেন, ‘আমরা গ্রাহকের অভিযোগ সংগ্রহ করছি। এখানে এজেন্ট যে ধরনের জালিয়াতি করেছে তার বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা নেবে।’

ব্যাংক এশিয়ার জনসংযোগ কর্মকর্তা লিকু আহমেদ বলেন, ‘এজেন্ট বিদ্যুৎ বিলের টাকা জমা নিয়ে রসিদ দিলেও সেই টাকা ব্যাংকে জমা করেননি। বুধবার পর্যন্ত এজেন্টের দ্বারা ৩২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার তথ্য পেয়েছি। শাখাটিতে নিরীক্ষার কাজ চলছে।’

অভিযোগের বিষয়ে খায়রুল বাশারকে দুই দিন ধরে ফোন করেও নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে।

কালিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম মো. মমিনুর রহমান বিশ্বাস বলেন, ‘এলাকার প্রায় দুই হাজার গ্রাহক সেখানে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেন। মার্চ থেকে মে পর্যন্ত ওই গ্রাহকদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ বিলের প্রায় পাঁচ লাখ টাকা গ্রহণ করলেও এজেন্ট সেই টাকা জমা না দেয়ায় গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। ঘটনাটি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’

নড়াইলের সহকারী পুলিশ সুপার (কালিয়া সার্কেল) প্রণব কুমার সরকার বলেন, ‘পুলিশ চাঁচুড়ি বাজারের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে। এলাকার মানুষের অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর