সাভারের আশুলিয়ার একটি কারখানার বয়লারের পানিতে দগ্ধ হওয়া দুই শ্রমিক ও আলাদা ঘটনায় একটি বাসাবাড়িতে বিস্ফোরণে দগ্ধ আরেক নারীশ্রমিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও নিহত ব্যক্তির স্বজনরা।
বৃহস্পতিবার সকালে ডিইপিজেড ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার জাহাঙ্গীর আলম বাসাবাড়িতে বিস্ফোরণে দগ্ধ হওয়া নারীর মৃত্যুর খবর নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, আফরোজা বেগম নামের ওই নারী বুধবার রাত ১১টার দিকে চিকিৎসা চলাকালে মারা গেছেন। তিনি আশুলিয়ার পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন।
২ জুন আশুলিয়ার পল্লী বিদ্যুৎ কবরস্থান রোড এলাকায় হুমায়ন কবিরের বাড়িতে টয়লেটে জমে থাকা গ্যাসে আগুনের সংস্পর্শে এসেই বিস্ফোরণ ও ছয়জন দগ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটে।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বুধবার রাত ১১টার দিকে আফরোজা বেগম নামের এক নারীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। তার শরীরের ৫৫ শতাংশ পুড়ে গেছিল। তার স্বজনরা আমাকে এটুকুই জানাতে পেরেছেন। তবে তার বিস্তারিত পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি।’
২ জুন ভোর ৫টার দিকে আশুলিয়ার ওই বাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে একই পরিবারের শিশুসহ তিনজন, পাশের কক্ষের আরেক দম্পতি, এক নারীসহ ছয়জন দগ্ধ হন। পরে তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়।
এদিকে, ৩ জুন সন্ধ্যায় আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকার কুটিরিয়ায় এসডিএস ইয়ার্ন ডায়িং নামের একটি পোশাক কারখানার বয়লারের পানিতে দগ্ধ হওয়ার ঘটনায় নিহত ব্যক্তিরা হলেন রংপুর জেলার কাউনিয়া থানার সতদা গ্রামের রাশেদুল ইসলাম ও কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর থানার হাসান আলী। তারা দুজনই আশুলিয়ার কুটুরিয়া এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে স্থানীয় এসডিএস ইয়ার্ন ডায়িং নামের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন।
বয়লারের গরম পানিতে দগ্ধ হন হাসান, রাশেদুল, আনোয়ার ও ওয়াসিম নামে চার শ্রমিক। রাতেই তাদের সাভার এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাদের শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। এদের মধ্যে মঙ্গলবার রাতে হাসান ও বুধবার রাত ১২টার রাশেদুল মারা যান। তাদের স্বজনরা মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন। বাকি দুই শ্রমিক চিকিৎসা নিয়ে আগেই ফিরে যান।
রাশেদুলের ভাই শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কারখানায় কাজ করার সময় বয়লারের গরম পানিতে আমার ভাই দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিল। ওর শরীরের ৪৫ শতাংশ পুড়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন চিকিৎসক। প্রথম দিকে অবস্থা ভালো ছিল। কিন্তু বুধবার রাত ১২টার দিকে হঠাৎ তার অবস্থার অবনতি হলে সে মারা যায়। আমার ভাইয়ের মরদেহ এখন মর্গে রাখা আছে। ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী আমরা তার বিচার চাই।’
নিহত হাসান আলীর মামা সাইফুল ইসলাম জানান, হাসানের শরীরের ৯০-৯৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। শ্বাসনালি পুড়ে যাওয়ায় খাবার খেতে পারতেন না তিনি। এমনকি ঘটনার পর থেকে চোখ খুলেও দেখেননি। মঙ্গলবার রাতে হাসান মারা যান। বুধবার গভীর রাতে তার মরদেহ কুড়িগ্রামে নেয়া হয়। বৃহস্পতিবার ভোরে তাকে দাফন করা হয়েছে।