বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুটি ইউনিয়ন নলুয়া ও বাহেরচর, মাঝখানে বয়ে গেছে পান্ডব পায়রা নদী। কোনো জরুরি কাজে বাহেরচরবাসীদের উপজেলা সদরে আসতে ট্রলারে পার হতে হয় পায়রাসহ দুটি নদী।
তবে মঙ্গলবার পান্ডব পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ প্রকল্পে অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) । আর তাতে খুশির বন্যা বাহেরচর ইউনিয়নে। নদীর ওপারের নলুয়াতেও আনন্দ পাশের ইউনিয়নের সঙ্গ যোগাযোগের সহজ পথ খুলে যাওয়ার সম্ভাবনায়।
পান্ডব পায়রা নদীর ওপর নলুয়া-বাহেরচর সেতু নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ১ হাজার ২৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ অনুমোদন করেছে একনেক। আগামী জুলাই থেকে ২০২৬ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়ন হবে এ প্রকল্প।
সেতু নির্মাণের অনুমোদনের পর বাহেরচর ও নলুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেছে নিউজবাংলা। উচ্ছ্বসিত এসব মানুষ কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন সরকারকে।
এলাকাবাসী জানায়, পান্ডব পায়রা নদীতে সেতু নির্মাণে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানাচ্ছিলেন তারা। নলুয়া-বাহেরচরের যোগাযোগের উপায় ট্রলারে প্রতিদিন পারাপার করে হাজারো মানুষ। এক্ষেত্রে জনপ্রতি ভাড়া ১০ টাকা, পাশাপাশি আছে বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকি।
নলুয়া খেয়াঘাট এলাকার চা দোকানি মোহাম্মদ সবুজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনেকদিন ধইরাই আমরা নলুয়া-বাহেরচরের সরাসরি যোগাযোগ চাইছিলাম। শেষ মেষ এই কাম পাশ হওয়ায় আমরা অনেক খুশি। সেতু হইয়া গেলে আমাগো আর কষ্ট হইবে না। এইহান দিয়াই আওয়া-যাওয়া অনেক সহজ হইয়া যাইবে।’
বাহেরচরের স্কুল শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বাকেরগঞ্জ থেকে পটুয়াখালীর দুমকিতে যাওয়ার সহজ পথ এটা। লক্ষ্মীপাশা থেকে পোড়ারধন নদী পার হয়ে নলুয়া ইউনিয়নে পৌছাতে হয়, সেখান থেকে পান্ডব পায়রা নদী পার হয়ে বাহেরচর থেকে যাওয়া যায় দুমকিতে। সেতু নির্মাণ হলে নলুয়া থেকে বাহেরচরে যাতায়াত যেমন সহজ হয়ে যাবে, তেমনি দুমকি যাওয়াটাও সহজ হবে। কেননা এখানকার অনেক মানুষই কাজের জন্য পার্শ্ববর্তী এলাকা দুমকিতেও যায়। বাকেরগঞ্জ সদর হোক বা দুমকি, সেতু হলে ওই দুই এলাকায় যাতায়াতে সময় অনেক কমে আসবে।’
স্থানীয় বাসিন্দা গফুর মিয়া বলেন, ‘লক্ষ্মীপাশা থেকে নলুয়ায় যেতে ফেরি রয়েছে, তবে তা ভিআইপি ছাড়া চলে না। আবার নলুয়া থেকে বাহেরচরে যদি কোনো ভিআইপি যায় তাহলে লক্ষ্মীপাশার ফেরি নলুয়াতে নিয়ে সেখান থেকে বাহেরচরে যাওয়া হয়। এমনিতে সাধারণ মানুষের জন্য বড় গাড়ি না হলে এবং জরুরি প্রয়োজন ছাড়া এখানকার ফেরি চলাচল করে না।’
নলুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফিরোজ আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই সেতু আমাদের কাছে স্বপ্নের মতো। একনেক এ অনুমোদন হওয়ায় আমরা একধাপ এগিয়ে গিয়েছি। একেবারে রুট লেভেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে উন্নয়ন করছেন এই সেতু অনুমোদন তারই একটি দৃষ্টান্ত। এই সেতু নির্মান হলে আমাদের সঙ্গে পটুয়াখালী, বরগুনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের সব কয়টি জেলার যোগাযোগ আরও শক্ত হবে।’
বরিশাল ৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য নাসরিন জাহান রত্না আমিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টার পর পায়রা পান্ডব নদীতে সেতু অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এতে হাজার হাজার মানুষ উপকৃত হবে। এখন লক্ষ্মীপাশা থেকে নলুয়া যেতে পোড়ারধন নদীতে একটি সেতু এবং ডিসি রোড থেকে পটুয়াখালীর বাউফল যাওয়ার নদীতে একটি সেতু অনুমোদন করার চেষ্টা চলছে। সেতুগুলো নির্মাণ হলে বাকেরগঞ্জের সঙ্গে অন্য জেলা বা অভ্যন্তরীণ যাতায়াতে আর কোনো সমস্যা থাকবে না।’