পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার এক শিশুকে সন্তান হিসেবে নিয়ে গৃহকর্মী করে রাখা ও নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে সাবেক সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। অসুস্থ অবস্থায় শিশুটিকে মঙ্গলবার বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়। শরীরে আঘাতের নানান চিহ্ন নিয়ে শিশুটি এখন তেঁতুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি।
শিশুর বাবা নিউজবাংলাকে জানান, তার ১১ বছরের মেয়েটি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত। করোনায় স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক দিন বাড়িতে বসে ছিল। দুই মাস আগে একই গ্রামের আবু সাঈদ নামের এক ব্যক্তি তাকে বলেন, মেয়েকে সন্তানের মতো লালনপালন করতে চান উপজেলার সাবেক পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শাহিনুজ্জামান শিশির। তিনি তাকে ঢাকায় নিয়ে যেতে চান। পরে উভয় পক্ষের সম্মতিতে শিশুটিকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।
দুই মাস পর বাবাকে ডেকে নিয়ে শিশুটি অসুস্থ বলে তার কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়। মঙ্গলবার বাড়ি নিয়ে এসেই মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করান বাবা। সেখানে চিকিৎসক জানান, মেয়েটির গায়ে আঘাতের চিহ্ন আছে।
হাসপাতালে ভর্তি শিশুটি নিউজবাংলাকে বলে, “আমাকে সাহেবের বউ প্রতিদিন অনেকগুলা কাপড় ধুয়ার জন্য দিত, আর থালাবাসন ধুয়ার কাজ করাত। আমি কাজ করতে না পারলি আমাক ভাত রান্না করা লাকড়ি দিয়ে খুব মারত। কোনো কোনো দিন আমাক পায়ে দড়ি দিয়ে খাটের খুঁটিতে বাইন্ধেও মারত। আর বলত ‘তোরে মেরে কেটে নদীতে ভাসিয়ে দিলেও আমার কিছু হবে না।’ আমাক ঠিকমতো খাবারও দিত না।”
শিশুর হাত-পায়ের বিভিন্ন স্থানে রক্ত জমাট বাঁধার ছোপ ছোপ কালো দাগ দৃশ্যমান।
শিশুটির বাবা বলেন, ‘আমাকে ওই সাহেব ফোনে বলেছে তাদের সন্তান নাই। আমার মেয়েকে নিয়ে তারা স্কুলে পড়াবে এবং নিজ সন্তানের মতো দেখবে। কিন্তু আমার মেয়েকে নিয়ে তারা নির্যাতন করেছে। আমি মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা বলত সে বাথরুমে আছে, এই বলে ফোন কেটে দিত। আমি গরিব মানুষ, আমার মেয়ের নির্যাতনের সঠিক বিচার চাই।’
শাহিনুজ্জামান শিশির বর্তমানে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলায় কর্মরত। শিশুটিকে নির্যাতনের বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলে অভিযোগটি মিথ্যা বলে তিনি জানান।
শিশির বলেন, শিশুটি অনেক মিথ্যা কথা বলে। শিশুটির কিছু অসুখ আছে, তাকে চিকিৎসা করানো হয়েছে।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) এএসএম মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে শিশুটির ওপর প্রচুর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। তবে আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাবে।’
তেঁতুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ছায়েম বলেন, বিষয়টি তিনি জানেন। তবে কোনো অভিযোগ আসেনি। ঘটনাটি ঢাকায় হওয়ায় আইনি পদক্ষেপ ঢাকাতেই নিতে হবে।