দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে পিরোজপুরের দুই উপজেলার দুটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানকে সাময়িক বরখাস্ত ও একটি ইউপির চেয়ারম্যানকে কারণ দর্শাতে বলেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ইউপি চেয়ারম্যানরা হলেন নাজিরপুরের ২ নং মালিখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুমন মণ্ডল মিঠু এবং স্বরূপকাঠির ৫ নং জলাবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আশিষ কুমার বড়াল। অপরদিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পেয়েছেন নাজিরপুরের শ্রীরামকাঠি ইউপির চেয়ারম্যান উত্তম কুমার মৈত্র।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মো. আবু জাফর স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ আদেশ দেয়া হয়।
মালিখালী ইউপির সদস্য আতাহার আলী জানান, সুমন মণ্ডল মিঠু ওই ইউনিয়ন থেকে দুবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। তিনি প্রথম ধাপে ঘোষিত ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দিতা করেন। তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বিভিন্ন অনুদানের বিপরীতে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় লোকজন বিভিন্ন অভিযোগ তুলে কয়েকটি দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের নাম ভাঙিয়ে আর্থিক সুবিধাসহ বিভিন্ন সুযোগ গ্রহণের সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে চেয়ারম্যান মিঠুর বিরুদ্ধে।’
নাজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওবাইদুর রহমান বলেন, ‘চেয়ারম্যান মিঠুর বিরুদ্ধে অসহায় ও দুস্থ মানুষকে দেয়া বিনা মূল্যের ঘরের বিনিময়ে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি নলকূপ বিতরণে ঘুষ নেয়াসহ ভিজিডির উপকারভোগী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ স্থানীয় তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় জনস্বার্থে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।’
স্বরূপকাঠির ইউএনও মোসারেফ হোসেন জানান, ‘জলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশিষ কুমার বড়ালকে মৎস্যজীবীদের চাল আত্মসাতের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।’
চেয়ারম্যান আশীষ নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন।
নাজিরপুরের শ্রীরামকাঠি ইউপির ১২ সদস্যের মধ্যে ১১ জন চেয়ারম্যান উত্তম কুমার মৈত্রের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেন।
এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, চেয়ারম্যান উত্তম কুমার স্থানীয় নৈলতলার একটি লোহার পুল মেরামতের ২ লাখ টাকা, খেজুরতলার একটি লোহার পুলের ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা, গত অর্থ বছরে মধুরাবাদে একটি লোহার পুলের মেরামত কাজ না করিয়ে ৭৮ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
নাজিরপুর উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি ফারুক হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘প্রতিবছর বরাদ্দ হওয়া ১৮-২০ লাখ টাকার কাজ খেয়ালখুশিমতো প্রকল্প দেখিয়ে আত্মসাৎ করেছেন চেয়ারম্যান উত্তম কুমার মৈত্র। শুধু তা-ই নয়, তার পরিষদের সদস্যদের দেয়া বরাদ্দের কাজ বাস্তবায়নের জন্য এবং ইউনিয়নের উন্নয়নমূলক টিআর-কাবিখা কাজের জন্য তাকে ৩০ শতাংশ উৎকোচ দিতে বাধ্য করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, পঙ্গু ভাতা, হরিজন ভাতা, মৎস্য ও ভিজিএফ কার্যক্রম, দুস্থ্ সাহায্যের তালিকা তৈরীসহ গভীর নলকূপ বিতরণে স্বজনপ্রীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে চেয়ারম্যান উত্তমের বিরুদ্ধে।’
ইউএনও ওবাইদুর রহমান বলেন, ‘শ্রীরামকাঠি ইউপি চেয়ারম্যান উত্তম কুমার মৈত্রের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতিসহ অসংখ্য অনিয়মের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
তিনি জানান, উত্তম কুমার মৈত্র আওয়ামী লীগ সমর্থিত নির্বাচিত চেয়ারম্যান। তাকে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
মালিখালী ইউপির চেয়ারম্যান সুমন মণ্ডল মিঠু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা মিথ্যা। আপনি খোঁজ নিয়ে দেখেন আমি ইউনিয়নের কত মানুষকে সাহায্য করে থাকি। আসলে সামনে নির্বাচন, বিরোধী পার্টি এগুলো টাকা দিয়ে সাজাচ্ছে।’
অভিযোগের বিষয়ে জলাবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আশিষ কুমার বড়ালকে ফোন দিলে বলেন, ‘আমি একটু ব্যস্ত আছি। পরে ফোন দেন।’
শ্রীরামকাঠি ইউপি চেয়ারম্যান উত্তম কুমার মৈত্রের ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।