অভিযোগ উঠেছে, বাড়ির পাশের দোকানে মশুর ডাল কিনতে গিয়েছিল নবম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়েটি। ফেরার সময় পথে ঝুম বৃষ্টি নামে। একই গ্রামের এক যুবক তার মুখ চেপে ধরে নির্জন একটি বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণ করে। মেয়েটির চিৎকারে জড়ো হন এলাকাবাসী। কৌশলে পালিয়ে যায় অভিযুক্ত।
মেয়েটির অভিযোগ, ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে অভিযুক্তের সঙ্গে বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা।
সরেজমিনে নাটোরের ওই গ্রামটিতে গিয়ে দেখে যায়, পুরো গ্রামে থমথমে পরিবেশ। কথা বলতে চান না ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরাও।
সংবাদকর্মী আসার খবরে ছুটে আসেন খোরশেদ আলম নামে স্থানীয় এক প্রভাবশালী।
তিনি বলেন, ‘এখানে ধর্ষণের মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। মিয়া ছাওয়ালের সাথে মিলনের প্রেম ছিল। তাই আমরা গ্রামবাসী মিল্যা তাদের বিয়্যা দেবার ব্যবস্থা করিচ্ছি।’এ বিষয়ে অভিযুক্তের বাবা বলেন, ‘গ্রামের মাতবররা মিলে ষড়যন্ত্র করিচ্ছে। আমার ছেলের প্রতি ধর্ষণের অভিযোগ এনে এখন জোর করে বিয়া করায় দিতে চাচ্ছে। আমার ছেলে অকাম করলে ঘটনার দিন ছাইড়্যা দিল ক্যা? ধরে বাইধ্যো রাখতে পারলো না? আমি এটা মানব্যো না। আইনে যা হয়, তাই হবি।’
স্থানীয় আরেক প্রভাবশালী বাবলু হোসেন বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনার পরই গ্রাম্য সালিশ বসানো হয়েছেল। সেখানে সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। এই ঘটনা নিয়ে থানা-পুলিশ করা যাবি ন্যা। দেড় লাখ টাকা কাবিন ধরে ছেলে-মেয়েকে বিয়ে দেয়া হবি।
‘এরপর কয়েক দফায় বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করা হয়েছে। ছেলে-মেয়ের পরিবার আমাদের সিদ্ধান্ত মেনেও নিয়েছে। এখন ছেলের বাপ টালবাহানা করিচ্ছে।’
ধর্ষণের মতো অপরাধ মীমাংসাযোগ্য কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা গ্রামের ব্যাপার। যেহেতু আমরা গ্রামে নেতৃত্ব দিই, সেহেতু গ্রামের ভালো-মন্দ আমাদেরই দেখতে হবি।’
গ্রামের আরেক প্রভাবশালী আলমগীর হোসেন দলবল নিয়ে হাজির হন এই প্রতিবেদকের সামনে।
তিনি বলেন, ‘আমরা মিচুয়্যাল করিচ্ছি। মিয়াডা খুবই গরিব। আমরা বিয়ে দিয়ে এই সমস্যার সমাধান করব।’
স্থানীয়রা জানান, ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে গ্রামের মাতবররা বিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নেন। হতদরিদ্র হওয়ায় মেয়েটিও তার বাবা-মায়ের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়। কিন্তু বিয়ের আশ্বাসে এক সপ্তাহ পার হলেও সবাই টালবাহানা করতে থাকে। অভিযুক্তের পরিবার প্রভাবশালী।
তার এক চাচা প্রবাসী। টাকা দিয়ে প্রভাবশালীদের অনেককে ম্যানেজ করেছেন তিনি।
গ্রাম্য প্রভাবশালীদের কাছে বিচার না পেয়ে অবশেষে মামলা করেছে মেয়েটির পরিবার। এতে তাদের ইমেজ ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলে ভুক্তভোগী পরিবারের ওপর আবার চড়াও হয়েছে প্রভাবশালীদের একাংশ।
তাদের একজন একলু বাবলু বলেন, ‘থানা-পুলিশ করিছে। এখন থানা-পুলিশ দেকপি। আমরা আর এর সাথে নাই।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নাটোর সদর থানার উপপরিদর্শক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এক যুবককে অভিযুক্ত করে মামলা হয়েছে। ইতিমধ্যে ভিকটিমের ডাক্তারি পরীক্ষা ও আদালতে জবানবন্দি সম্পন্ন হয়েছে।’
নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, ‘ধর্ষণের মতো অপরাধ বিচার সালিশ করার মতো অপরাধ নয়। ঘটনার সাথে জড়িত কেউ ছাড় পাবে না।’