পাহাড় ধসের শঙ্কায় বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে চট্টগ্রামের বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোড।
সড়কটিতে মঙ্গলবার সকাল থেকে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হবে বলে জানান লিংক রোড নির্মাণকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সড়কটির পাশের খাড়া পাহাড়গুলো ধসের আশঙ্কা রয়েছে। সেজন্য মঙ্গলবার সকাল থেকে সড়কটি বন্ধ করে দেব।
‘প্রকল্পের কাজ এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি। সড়কের পাশে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ বাকি। এ ছাড়া খাড়া পাহাড়গুলো কেটে ঝুঁকিমুক্ত করতে হবে।’
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট টোল রোডের মুখ থেকে বায়েজিদ বোস্তামি পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে সিডিএ। প্রকল্পের আওতায় একটি রেলওয়ে ওভারব্রিজসহ ছয়টি ব্রিজ ও কয়েকটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়।
প্রকল্পের ৬ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণে সিডিএ ছোট-বড় ১৬টি পাহাড় কেটেছে। ২৬ ডিগ্রি করে এসব পাহাড় কাটার অনুমতি থাকলেও কাটা হয়েছে ৯০ ডিগ্রি কোণে। এতে পুরোপুরি কাটিং ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান লঙ্ঘন করা হয়। এজন্য সিডিএকে ১০ কোটি ৩৮ লাখ ২৯ হাজার ৫৫৩ টাকা জরিমানা করে পরিবেশ অধিদপ্তর।
পরবর্তী সময়ে ঝুঁকিপূর্ণ খাড়া পাহাড়গুলো নতুন করে কাটার জন্য গত বছরের ২৩ মার্চ পরিবেশ অধিদপ্তরে নতুন করে আবেদন করে সিডিএ। ওই আবেদনে নতুন করে ৩ লাখ ৩২ হাজার ঘনমিটার পাহাড় কাটার অনুমতি চায় সিডিএ। এরপর ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলো কাটা ও সংরক্ষণ কীভাবে করা হবে, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামতসহ প্রতিবেদন চায় পরিবেশ অধিদপ্তর।
এরপর সিডিএর প্রধান প্রকৌশলীর নেতৃত্বে প্রকল্পটির পরিচালক ও চুয়েটের দুই শিক্ষকের সমন্বয়ে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্য বুয়েটের দুই শিক্ষক ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলো পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করেছেন। এরপর কয়েক মাস অতিবাহিত হলেও করোনা প্রাদুর্ভাবসহ নানা জটিলতায় প্রতিবেদন তৈরি করতে পারেনি বিশেষজ্ঞ কমিটি।
এদিকে সিডিএ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের চিঠি চালাচালির মধ্যে বর্ষা মৌসুম শুরু হয়। রোববার ভারী বর্ষণ শুরু হয়। এতে ভিজে বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোডের ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলোতে নতুন করে ধসের আশঙ্কা দেখা দেয়।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক নূরুল্লাহ নূরী বলেন, ‘রোববার ভারী বৃষ্টি হয়েছে। পাহাড়গুলোতে যেকোনো সময় ধস শুরু হতে পারে। আমরা রোববার সকাল থেকেই রাস্তাটি বন্ধ করে দিতে বলেছি।
‘রাতের বেলা কোনো কারণে ধস শুরু হলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। এজন্য সংশ্লিষ্ট থানাগুলোকেও অবহিত করার জন্য আমরা সিডিএকে বলেছি। যাতে সড়কটির দুই প্রান্তে ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়।’
২০১৬ সালের জুনে ১৭২ কোটি ৪৯ লাখ টাকার এই লিংক রোড প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুরুতে দুই লেনের সড়ক করার কথা থাকলেও ২০১৬ সালের অক্টোবরে সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত হয়।
এতে খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৩২০ কোটি টাকা। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পের কাজ শেষ না হলেও ২০২০ সালের জুন থেকে এই রোডটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় সিডিএ।