চট্টগ্রাম নগরের ঝুঁকিপূর্ণ ২৫ পাহাড়ে অবৈধভাবে তৈরি হয়েছে হাজার হাজার বসতবাড়ি। এসব ঘরে থাকছে অন্তত লক্ষাধিক মানুষ।
রোববার থেকে চট্টগ্রামে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শুধু সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টায় ৩০ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ভারী বর্ষণের কারণে যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের পাহাড়ধস হতে পারে। কিন্তু এখনও প্রশাসন পাহাড় থেকে এসব বাসিন্দাকে সরাতে কাজ শুরু করেনি।
পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির তথ্যমতে, চট্টগ্রামে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় রয়েছে ২৫টি। এসব পাহাড়ে কম ও বেশি ঝুঁকিতে বসবাসকারী লোকজনের সংখ্যা লাখের ওপরে। বেশির ভাগ নিম্ন আয়ের। এর মধ্যে ১৭টি পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের তালিকা করেছে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি। বাকি পাহাড়গুলোর তালিকা এখনও শেষ হয়নি।
২০১৫ সালের ১৮ জুলাই বৃষ্টির সময় নগরের বায়েজিদ এলাকার আমিন কলোনিতে পাহাড়ধসে তিনজন নিহত হয়। একই বছরের ২১ সেপ্টেম্বর বায়েজিদ থানার মাঝিরঘোনা এলাকায় পাহাড়ধসে মা-মেয়ে মারা যায়।
চট্টগ্রামে পাহাড়ধসের সবচেয়ে বড় ঘটনা ঘটে ২০০৭ সালের ১১ জুন। মারা যায় ১২৭ জন। এরপর পাহাড় ব্যবস্থাপনায় একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হয়।
মতিঝর্ণা এলাকায় পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করেন রিকশাচালক রুবেল মিয়া। তিনি বলেন, ‘পাহাড়ে ভাড়া কম। এ জন্য তাহি। কিন্তু বর্ষা আইয়্যা পড়ছে। এহন আর তাওন যাইব না। প্রশাসন সরাই দিব।’
চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক নুরুল্লাহ নূরী ফিরোজ শাহ বলেন, ‘মতিঝর্ণা পাহাড়ে ১০ হাজার লোকের বসবাস। এ ছাড়া ২৫টি পাহাড়ে লাখের ওপর মানুষ ঝুঁকিতে। কিন্তু তাদের সরানো যাচ্ছে না। সরাতে গেলে আন্দোলন শুরু করে। জোর করে সরানো হলে কিছুদিন পর আবার বসতি গড়ে।’
পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যসচিব অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাজমুল আহসান বলেন, ‘৯ মে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২১তম সাধারণ সভা হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির অবৈধ সংযোগের তালিকাসহ প্রতিবেদন পাওয়ার পর ঝঁকিপূর্ণ পাহাড়ে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। কিন্তু এখনও আমরা ওয়াসা, গ্যাস, বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে তালিকাসহ প্রতিবেদন পাইনি। তাই অভিযান চালানো যাচ্ছে না।’
পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের স্থায়ীভাবে সরাতে কাজ করছে প্রশাসন। ছবি: নিউজবাংলা
শিগগিরই কোনো অভিযান পরিচালনা করা হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শুধু বর্ষাকে কেন্দ্র করে নয়, আমরা স্থায়ীভাবে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের সরাতে কাজ করছি।’
সচেতন নাগরিক কমিটি চট্টগ্রামের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আকতার কবির চৌধুরী বলেন, ‘পাহাড়ে যারা বসবাস করেন, তারা ভাড়া দিয়ে বসবাস করেন। সুতারাং কারা পাহাড় ভাড়া দেয়, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। শুধু শুধু নিম্ন আয়ের মানুষদের তালিকা করে লাভ নেই। তারা আজ আছে কাল নেই। কিন্তু যারা পাহাড় দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে, তাদের ধরতে হবে। তাদের চিহ্নিত করতে পারলে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস বন্ধ করা যাবে।’
শুধু বর্ষাকে কেন্দ্র করে পাহাড় থেকে অবৈধ বসবাসকারীদের সরানো হলেও সুফল পাওয়া যাবে না– এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা জানিয়েছেন, স্থায়ীভাবে বসবাসকারীদের সরাতে হবে। নয়তো চট্টগ্রাম থেকে পাহাড় হারিয়ে যাবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কামাল হোসেন বলেন, ‘বর্ষা এলেই পাহাড়ের বাসিন্দাদের সরানোর তোড়জোড় শুরু হয়। কিন্তু এই পদ্ধতি কার্যকর নয়। বর্ষায় কেন সরাতে হবে? দরকার স্থায়ীভাবে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। নয়তো পাহাড় রক্ষা সম্ভব নয়।’